যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষক

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০১৬, ০০:০০

জাগরণীয়া ডেস্ক

পিরোজপুরের নাজিরপুরে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছে এক ছাত্রী। এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন হয়রানির শিকার হওয়া ওই স্কুল ছাত্রীর মা। তবে অভিযোগ দেয়ার পর প্রভাবশালী ওই শিক্ষকের হুমকিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে পিতৃহারা একমাত্র মেয়েকে নিয়ে এলাকা ছেড়েছেন বলে দাবি করেছেন সেই মা। মাদকাসক্ত ও দুশ্চরিত্রের ওই শিক্ষকের বিচারের দাবীতে সোচ্চার হয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। ঘটনাটি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় উপজেলা জুড়ে তোলপাড় চলছে।

হয়রানির শিকার হওয়া ছাত্রী ও ছাত্রীর মায়ের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৫ মাস পূর্বে উপজেলার গাওখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ওই ছাত্রী তার বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক শংকর কুমার গোলদারের কাছে প্রাইভেট পড়তে শুরু করে। ৩ মাস প্রাইভেট পড়ার পর ওই শিক্ষকের আচরণে ছাত্রীসহ তার মা বুঝতে পারেন শিক্ষক একজন মাদকাসক্ত ও দুশ্চরিত্রের লোক। তাছাড়া তিনি স্কুলে বসে প্রাইভেট না পড়িয়ে নিজ বাসায় একা প্রাইভেট পড়ান। চাকুরীর সুবাদে তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে অন্য উপজেলায় বসবাস করেন। হয়রানির শিকার হওয়া ওই ছাত্রীর মা রমজান মাসের আগে থেকে ওই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া বন্ধ করে দেয়।

ঐ ছাত্রীর মা জানান, গত ১১ জুলাই সকালে শিক্ষক শংকর কুমার গোলদার লোক পাঠিয়ে ওই ছাত্রীকে তার বাড়ী থেকে তার বাসায় ডেকে নেন। ওই ছাত্রী শিক্ষকের বাসায় যাওয়ার পর ওই বাসায় থাকা অন্য দু’জন ছাত্রীকে বাসা থেকে বের করে দিয়ে শিক্ষক ওই ছাত্রীর সাথে আপত্তিকর আচরণ শুরু করেন। ওই ছাত্রীর মা মেয়েকে বাসায় না পেয়ে এবং শিক্ষক শংকর তাকে ডেকে নিয়েছেন জানতে পেরে শিক্ষকের বাসায় মেয়েকে আনতে গেলে শিক্ষক শংকর ওই ছাত্রীর মায়ের সাথে তাকে বাড়ি যেতে বাধা প্রদান করে। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে ওই শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে তার লোকজন নিয়ে ওই ছাত্রীর মাকে ভয়ভীতি দেখালে তিনি তার মেয়েকে নিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, শংকর বাবু একজন মাদকাসক্ত ও দুশ্চরিত্রের লোক। তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর নিজ ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন। তিনি খারাপ চরিত্রের হওয়ায় ছাত্রীরা তার কাছে প্রাইভেট পড়তে চায় না। তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে তার বিষয়ে ফেল করিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছে পড়তে বাধ্য করে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ছাত্রী হয়রানির কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তার ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে না এবং কর্তৃপক্ষও ব্যবস্থা নিতে পারে না।

তবে অভিযুক্ত শিক্ষক শংকর কুমার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি বারবার একটি মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আসছি। 

তার কাছে প্রাইভেট পড়া বন্ধ করার পরেও কেন ওই দিন সকালে ওই ছাত্রীকে বাসায় ডাকা হল এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এটা স্পেশাল ম্যাটার'।

ঘটনার বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অনিল চন্দ্র মিস্ত্রীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শিক্ষক শংকর কুমার এর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর কমিটির জরুরী সভা ডেকে তাকে ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং তিনি আর কোন ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত