সালিশে অপহরণকারীর সাথে অপহৃতকেও জুতাপেটা!
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০০:৩৪
মাদারীপুর শহরের মধ্য খাগদি এলাকায় সালিশ মীমাংসার নামে এক কিশোরীকে জুতাপেটা করা হয়েছে। ২৭ ডিসেম্বর (বুধবার) স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতারা এ সালিশ করেছেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে শহরের মধ্য খাগদি এলাকার কুদ্দুস শরীফের ছেলে হাসান শরীফ ওই কিশোরীকে কৌশলে নিয়ে গিয়ে তামান্না নামে এক নারীর কাছে বিক্রি করে দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে ২২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) কিশোরীর পরিবার মাদারীপুর সদর উপজেলার খাকছড়ার করম বাজার থেকে তাকে উদ্ধার করে।
পরে কিশোরীর পরিবার স্থানীয়দের জানালে ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে বিষয়টি নিয়ে সালিশ ডাকা হয়। সালিশে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আইয়ুব খান, ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজাম খান, সাবেক কাউন্সিলর সামসুল হক খান, স্থানীয় প্রভাবশালী সেলিম মীরা, খবির খান, আকলিমা বেগমসহ শতাধিক লোকজন। কিন্তু সালিশে শরীফকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ১০ বার জুতাপেটার নির্দেশ এর পাশাপাশি আইয়ুব খান, মুজাম খান, সামসুল হক খানের সিদ্ধান্তে ওই কিশোরীকেও ১০ বার জুতাপেটার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে সালিশে উপস্থিত আকলিমা বেগম নামের এক নারী ঐ কিশোরীকে জুতাপেটা করে।
এ ব্যাপারে সালিশদার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মুজাম খান বলেন, ‘সালিশে দোষ প্রমাণ হওয়ায় আমরা জুতাপেটা করেছি’।
সালিশদার আকলিমা বেগম বলেন, ‘সালিশে সিদ্ধান্ত হয় জুতাপেটা করার। সালিশদাররা জুতাপেটার নির্দেশ দিলে আমি নির্দেশ পালন করেছি’।
তবে ওই কিশোরীর ভাই জসিম ফকির বলেন, ‘আমার বোনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিক্রি করে দেয় হাসান। এরপর আমরা বোনকে উদ্ধার করি। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার নামে উল্টো আমার বোনকে জুতাপেটা করেছে’।
সালিশের বিচারে ক্ষুব্ধ ওই কিশোরী বলেন, ‘আমরা কোন দেশে বাস করি। আমার অনেক বড় ক্ষতি করেছে ওরা। এর বিচার তো পাইনি উল্টো সালিশের নামে আমাকে জুতাপেটা করেছে। আমি এর বিচার চাই’।
মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক গোলাম মাওলা আকন্দ বলেন, অভিযোগ উঠেছে এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগ সঠিক হলে দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। যদি ওই কিশোরীর পরিবার থেকে অভিযোগ দেওয়া হয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা সালিশ মীমাংসার যোগ্য নয়। আমি বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে অবহিত করেছি। দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে’।