‘স্বেচ্ছায় উদ্ধার’ হাসনাত করিম গোয়েন্দা হেফাজতে
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০১৬, ১২:২৩
গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্টেুরেন্টে হামলায় কমান্ডো অভিযানের ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ এর আগেই বিনা বাঁধায় হামলাকারিদের থেকে ‘স্বেচ্ছায়’ উদ্ধার হওয়া হাসনাত করিমকে গোয়েন্দা হেফাজতে রাখা হয়েছে। গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন এ ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত থাকতে পারেন।
সোমবার (৪ জুলাই) সকালে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘হাসনাত করিম এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে আছেন। একই সঙ্গে তার স্ত্রীও আছেন। পুলিশ কাউকেই সন্দেহের উর্ধ্বে বিবেচনা করছে না। তবে হাসনাত করিমকে অন্য একটি গ্রুপ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাই এ বিষয়ে আমি ততটা অবগত নই।’
উদ্ধারের পর হাসনাতকে সপরিবারে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হলেও এখন তিনি কোন গোয়েন্দা সংস্থা হেফাজতে আছেন সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
গুলশানে হামলার ঘটনায় সন্দেহের তীর সেই ন্যাড়া ব্যক্তিটির দিকে। জঙ্গি হামলার ঘটনার পরপরেই প্রকাশিত কিছু ছবি ও ভিডিওতে আলোড়ন সৃষ্টি হয় ফেসবুকে। সেসব ছবি ও ভিডিওতে সেই ন্যাড়া ব্যক্তিটির আচরণ ও গতিবিধি অত্যন্ত সন্দেহজনক ভাবেই ধরা পড়ে। জানা গেছে, চেক পোলো শার্ট ও জিন্স পরা সেই ন্যাড়া মাথার ব্যক্তির নাম হাসনাত করিম। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির শিক্ষক এবং একজন প্রকৌশলী। আশ্চর্যজনকভাবে সেই হামলায় নিহত হওয়া সন্ত্রাসী নিব্রাস ইসলামও ছিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির ছাত্র।
প্রথমে একটি ছবিতে হাসনাত করিমকে দেখা যায় আর্টিসানের ছাদে ধূমপানরত অবস্থায় দরজায় খুলছিলেন আর সাথে দু’জন অস্ত্রধারী। এরপর রেস্টুরেন্টে পাশে এক বাসার বারান্দা থেকে ধারণকৃত ভিডিও এর একটিতে দেখা যায় দাম্ভিকতাপূর্ণ গতিবিধি। ওই হামলায় ভেতরের রক্তাক্ত পরিস্থিতিতে হাসনাত করিম রেস্টুরেন্টের কাঁচের তৈরি মূল ফটকটিতে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসীদের সাথে হাত নেড়ে কথা বলছিলেন। এরপর অন্য এক ভিডিওতে কয়েকজন নারী ও শিশুসহ তাঁকে রেস্টুরেন্ট থেকে নিরাপদে এবং অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপরেই এক সংবাদ প্রকাশিত হয় যে, তাঁরা সুরা পড়তে পারায় এবং তাঁর সাথে থাকা নারীরা হিজাব পরিহিত থাকায় সন্ত্রাসীরা তাঁদের ক্ষতি করেনি, বরং রাতে খেতে দেয় এবং অনেক খাতির যত্ন করে। পরিবার থেকে জানানো হয়, হাসনাত করিম সেদিন তাঁর ছেলে রাইয়ানের জন্মদিন উদযাপনে সপরিবারের হলি আর্টিসান বেকারিতে গিয়েছিলেন।
ঘটনার দিন হাসনাত করিমের বাবা রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ছেলের সাথে কথা হয়েছে। সে বলেছে সন্ত্রাসীরা তাদের সাথে কোনো প্রকার খারাপ আচরণ করেনি। ছেলের বউ শারমিন পারভিনের মাথায় হিজাব থাকায় তাকেও তারা খুব সমাদর করেছে। রাতে খেতেও দিয়েছে।’ তবে অন্য জিম্মিরা বলছেন, কাউকেই খাবার দেওয়া হয়নি। সবাইকে টয়লেটে আটকে রাখা হয়েছিল।
ছেলে উদ্ধার হয়ে আসার পর তার বরাত দিয়ে মা মিসেস করিম বলেন, ‘ওরা (সন্ত্রাসীরা) শুধু বিদেশিদেরই মেরেছে। বাংলাদেশিদের মারেনি। ২০ জনকেই রাত ১০টার পরে জবাই করেছে। সন্ত্রাসীরা ছিল ৫ জন।’ ছেলের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের পরই এসব তথ্য জানান তিনি।
সন্দেহের দানা প্রকট হতে থাকে এমন সংবাদে। খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে ২০১৩ সালে নিহত ব্লগার থাবা বাবা ওরফে রাজীব হায়দারকে হত্যা করার পর তদন্তে যাদের নাম উঠে আসে এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো তারা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলো৷ ওই ঘটনায় হত্যাকারীদের সাথে এই হাসনাত করিমের সম্পৃক্ততা পাওয়া গিয়েছিলো।
শুক্রবার (১ জুলাই) রাতে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে ১৭ বিদেশি নাগরিক, ৩ বাংলাদেশি ও ২ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে শনিবার (২ জুলাই) সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ৬ জঙ্গি নিহত হয় বলে ওদিন দুপুরে সেনাসদরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।