কুমিল্লার মৃৎশিল্প দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশের মাটিতে
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৪:০৮
কুমিল্লার সদর দক্ষিণের বিজয়পুর ইউনিয়নের জেলখানা বাড়ির তৈরি মাটির জিনিস পত্র দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশের মাটিতে স্থান করে নিয়েছে। মৃৎ শিল্পীদের নিপুন হাতের তৈরি এখানকার মাটির জিনিসপত্র বিদেশে রপ্তানি করে উপার্জন হচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।
সূত্র জানায়, এ অঞ্চলের তথা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প প্রায় ধ্বংসের হাত থেকে উদ্ধারের নিমিত্তে ষাটের দশকে এদেশের সমবায় আন্দোলনের পথিকৃত ও স্বপ্নদ্রষ্টা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ড. আখতার হামিদ খানের অবদান সবচেয়ে বেশি। যে সময় মৃৎ শিল্প মৃত প্রায় ঠিক সে সময় তারই অনুপ্রেরণায় ১৯৬১ সালের ২৭ এপ্রিল বিজয়পুর গ্রামের প্রগতি সংঘ নামীয় যুব সংগঠনটিকে রূপান্তরিত করা হয় বিজয়পুর রুদ্রপাল সমবায় সমিতি নামে। সে থেকে যাত্রা শুরু করে অত্র এলাকার মৃৎ শিল্পের ঐতিহ্য বজায় রেখে এ সমবায় প্রতিষ্ঠানটি আজ ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে। এখানে উৎপাদিত পণ্যগুলো দেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, চাঁদপুর, খুলনাসহ প্রায় ৩৪টি জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিজয়পুর মৃৎ শিল্পের চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারেও বেশ সমাদৃত।
স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, এখানকার উৎপাদিত পণ্যগুলো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রায় ১৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এসব পণ্য আমেরিকা, লন্ডন, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, জাপান, হল্যান্ড, ইতালিসহ বিশ্বের প্রায় ১৫টি দেশে রপ্তানি করে আসছে। ইতোমধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, অক্সফোর্ড ভার্সিটির একটি প্রতিনিধি দল, পাকিস্তানের মিলিটারী চীফ, ইংল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী, ভারতের পশ্চিম বঙ্গের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মর্জিনাসহ বিদেশি ব্যক্তিবর্গ এখানে এসে পরিদর্শন করে তাদের উৎপাদিত পণ্য দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন । এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা ও বিস্তার ঘটানোর জন্য এখানে মৃৎশিল্পের ওপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ মৃৎশিল্পী তৈরি করা হচ্ছে।
এখানে উৎপাদিত পণ্যসমূহের মধ্যে হলো বিভিন্ন প্রকার ফুলদানী, বিভিন্ন প্রকারের মডেল, মণিষীদের প্রতিকৃতি, ওয়াল প্লেইট, সাহিত্য ও সংস্তৃতি মূলক মডেল, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মডেল, জীবজন্তু ও মডেল, ছাইদানী, সুরাহ, বাটি, বৈয়ম, ফুলের টব, ল্যাম্প পোষ্ট, আগরদানী, মোমদানী, প্রদীপ দানী, দধিপাত্র, পিঠার সাজ , বিভিন্ন প্রকারের ক্রেষ্ট, গারলিক পট, জামদানী, আলপনার টপের সেট, অয়েল বার্নার, ফুড ক্রাফটস, বিড়ালের সেট, ফুট ট্রে, পাখির বাসা, গীজাসিংহলী, পিরামিড কপি সিলিন্ডারসহ প্রায় ৩ হাজার রকমের পণ্যাদি এখানে তৈরি করা হয় বলে জানা যায়।
বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎ শিল্পের অবস্থান কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক সড়কের কোলঘেঁষে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরে। জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলাধীন দক্ষিণ বিজয়পুর, গাংকুল, টেগুরিয়াপাড়া, নোয়াপাড়া, বারপাড়া, উত্তর বিজয়পুর ও দুর্গাপুরসহ মোট ৭টি গ্রামের (কুমার) মৃৎশিল্পীগণ এ প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করিয়েছেন। শুরুর দিকে মাত্র ১৫ জন সদস্য সমন্বয়ে সমিতি গঠন করা হলেও পর্যায়ক্রমে সমিতির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২০৯ জনে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ১৪৮ জন এবং মহিলা ৬১ জন।
এছাড়া মৃৎশিল্পজাত পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ কার্যক্রমে ৩ হাজার ২৪২ জন পুরুষ এবং ২৮২৬ জন মহিলাসহ মোট ৬০৬৮ জন লোক জড়িত রয়েছে। এ এলাকায় বসবাসকারী ৭০০ পরিবারের প্রায় অধিকাংশ সদস্যই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে।
এছাড়া এলাকায় মৃৎশিল্প উৎপাদনকারীদের বেকারত্ব দূরীকরণের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে আসছে।