‘কমে যাচ্ছে পুরুষের শুক্রাণু, বিলুপ্ত হতে পারে মানুষ’
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০১৭, ১৬:২৫
সারাবিশ্বে পুরুষদের শরীরে যে হারে শুক্রাণুর সংখ্যা বা স্পার্ম রেট কমে যাচ্ছে, শুক্রাণু কমে যাবার সেই হার বজায় থাকলে মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন এক চিকিৎসক।
প্রায় দুইশোটি গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেছেন, ৪০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট।
উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের পুরুষদের ওপর করা হয়েছিল এসব গবেষণা। মানব প্রজন্মের সাম্প্রতিক তথ্য নিয়ে অবশ্য কিছু গবেষক সন্দেহও প্রকাশ করেছেন। এই তুলনামূলক গবেষণাটি করা হয় ১৯৭৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত। এই সময়কালে করা ১৮৫টি গবেষণার তথ্যের ভিত্তিতে এই গবেষণা কাজটি করে ড: লেভিনের দল।
তবে তথ্য সংগ্রহের এই গবেষণা দলের প্রধান ড: হ্যাগাই লেভিন জানাচ্ছেন, ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা নিয়ে তিনি ‘খুবই উদ্বিগ্ন’।
ডঃ লেভিন একজন ‘এপিডেমিওলজিস্ট’। রোগবিস্তার সংক্রান্ত বিদ্যা ও এর সাথে সম্পর্কিত ওষুধের শাখা, রোগের সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রণ এসব বিষয়ে তিনি বিশেষজ্ঞ।
ডঃ লেভিন জানান, ‘এভাবে স্পার্ম কাউন্ট কমতে থাকলে একসময় মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। আমরা যদি নিজেদের জীবনযাপনের ধরন, পরিবেশ এবং রাসায়নিক ব্যবহারে পরিবর্তন না আনি, তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে তা ভেবে আমি উদ্বিগ্ন।’
তিনি বলেন, ‘একটা সময়ে এটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে, আর তাতে মানব প্রজাতির বিলুপ্তিও দেখা যেতে পারে।’
যেসব বিজ্ঞানীরা এই গবেষণার সঙ্গে ছিলেন না তারাও এই গবেষণার মানের প্রশংসা করে বলেন, তাদের কাজ খুবই ভালো, তাদের তথ্যও ঠিক আছে। কিন্তু এখনই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় না যে ‘মানব প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে’।
জেরুজালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটির গবেষক ড: লেভিন তাঁর অনুসন্ধানে দেখেছেন, শুক্রাণুর ঘনত্ব কমে এসেছে ৫২.৪ শতাংশ এবং স্পার্ম কাউন্ট কমে এসেছে ৫৯.৩ শতাংশ।
গবেষণায় আরো বলা হচ্ছে, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে বসবাসরত পুরুষদের মধ্যে স্পার্ম কাউন্ট বা শুক্রাণুর হার কমে যাবার এই ধারা অব্যাহত রয়েছে এবং এটি দিনে দিনে আরো বাড়ছে। তবে দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া এবং আফ্রিকার পুরুষদের মধ্যে স্পার্ম কাউন্ট বা শুক্রাণুর হার কমতে দেখা যায়নি।
তবে গবেষকেরা বলছেন, এসব দেশে যথেষ্ট গবেষণা হয়নি এবং একটা সময়ে এখানেও স্পার্ম কাউন্ট কমে আসতে পারে বলে ধারণা করেছেন ড: লেভিন।
এসব গবেষণার তথ্য নিয়ে বিতর্ক আছে অনেক কারণে। এর আগে কয়েকটি গবেষণা কাজে বলা হয়েছিল উন্নত অর্থনীতির দেশে স্পার্ম কাউন্ট কমে আসছে। তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা এর মধ্যেও ‘বিভ্রান্তিমূলক তথ্য’ রয়েছে।
এছাড়া আরো কিছু গবেষণা করা হয় কমসংখ্যক পুরুষ নিয়ে। আবার ফার্টিলিটি ক্লিনিক থেকে তথ্য নিয়ে যেসব গবেষণা করা হয় সেখানে স্পার্ম কাউন্ট কম আসা স্বাভাবিক, কারণ মানুষ সমস্যা নিয়েই সেখানে যায়।
আরেকটি বড় চিন্তার বিষয় হলো, স্পার্ম কাউন্ট কমে আসছে এমন ফলাফল দেখতে পেলে তা জার্নালে প্রকাশিত হবার সম্ভাবনা থাকে বেশি। এই কারণে হয়তো স্পার্ম কাউন্ট বা শুক্রাণু হার কমে আসছে এমন একটা ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে।
কিন্তু এই গবেষকেরা দাবি করছেন এরকম সব ধরনের সমস্যার বিষয়েই তারা চিন্তা করেছেন এবং গবেষণা করে যে তারা যে ফলাফল পেয়েছেন তা সত্য বলে মানছেন অনেকে।
যেমন শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যালান পেসি বলছেন, ‘এর আগে স্পার্ম কাউন্টের বিষয়ে যেসব গবেষণা হয়েছে তাতে আমি খুব একটা আশ্বস্ত হয়নি। কিন্তু ড: লেভিন ও তার দল যে গবেষণা করেছেন এবং তারা যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা পূর্ববর্তী অনেক গবেষণা নিয়ে ভ্রান্তি দূর করে দেয়’।
তবে অধ্যাপক পেসি বলছেন, নতুন এই গবেষণাটি অনেক ভ্রান্তি দূর করলেও ফলাফলের বিষয়টি নিয়ে সতর্কতার সাথে এগুতে হবে। এ বিষয়টা নিয়ে তর্কের অবসান কিন্তু এখনই হচ্ছে না। এ বিষয়ে আরো অনেক কাজ করতে হবে।
কেন স্পার্ম কাউন্ট বা শুক্রাণু হার কমে যাচ্ছে তার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।
তবে কীটনাশক এবং প্লাস্টিকে থাকা রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা, ওবেসিটি বা স্থূলতা, ধুমপান, মানসিক চাপ, খাদ্যভ্যাস, এমনকি অতিরিক্ত টিভি দেখা এক্ষেত্রে ক্ষতিকর বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ড: লেভিন বলছেন, কেন শুক্রাণুর হার কমে যাচ্ছে সে বিষয়টি জানা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। একইসাথে এমনটা যেন না ঘটে সেই উপায়ও খুঁজে বের করতে হবে বলে উল্লেখ করেন এই চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ।
সূত্র: বিবিসি বাংলা