শিমুল ইউসুফ এর বক্তব্যে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২৩:৪৮

জাগরণীয়া ডেস্ক

২০১৭ সালে সঙ্গীতে অবদানের জন্য একুশে পদক পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, 'ইতিহাস কথা কও' এর রচয়িতা ও বিশিষ্ট গণসঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার মাহমুদ সেলিম। তার দীর্ঘদিনের এই লড়াই সংগ্রাম বিশেষতঃ ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সেইসময়ে শত নির্যাতনের মধ্যেও 'ইতিহাস কথা কও' গীতিআলেখ্যর মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ গড়ে তোলার এক যোগ্য প্রাপ্তি হিসেবেই একে সাধুবাদ জানিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।

কিন্তু গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মাহমুদ সেলিমের এই একুশে পদক প্রাপ্তিকে 'ভিক্ষার দান' ও 'ছেলের হাতের মোয়া' বলে অভিহিত করেন বিশিষ্ট সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব শিমুল ইউসুফ। এছাড়া একই পোস্টের কমেন্টে এই ঘটনাকে 'বানরের গলায় মুক্তার হার' বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে থাকা মাহমুদ সেলিমের এই পদক প্রাপ্তিতে যখন সারাদেশের সংস্কৃতিকর্মীরা সাধুবাদ জানাচ্ছেন তখন শিমুল ইউসুফ এর মতো একজন মঞ্চব্যক্তিত্বের এহেন 'অসৌজন্যতামূলক' কথায় স্তম্ভিত সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকেই। ফেসবুকে এ নিয়ে নিজেদের বিষ্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। অনেকেই বলছেন একজন শিল্পীর কাছ থেকে এহেন অনুদার আচরণ কিছুতেই প্রত্যাশিত নয়।

নাম উল্লেখ না করেই বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার তার ফেসবুকে এই বক্তব্যকে রুচির দুর্ভিক্ষ আখ্যা দিয়ে লিখেন, "মাহমুদ সেলিম শুধু একজন শিল্পী নন। একজন সফল সংস্কৃতি-সংগঠক। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন জীবনের মায়া ত্যাগ করে। উদীচীর মত প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনের তিনি ছিলেন সুদীর্ঘ' ২৬ বছরের সাধারণ সম্পাদক। উদীচী আজ দেশে-বিদেশে পৌনে চার শ' শাখার বিকশিত বৃক্ষ। সে বিবেচনায় মাহমুদ সেলিম নামটি উদীচীর অন্যতম সমার্থক শব্দ।

সম্প্রতি ২১ শে পদক প্রাপ্তদের তালিকায় তার নাম প্রকাশ করায় কোন কোন ব্যক্তির গায়ে ফোস্কা পড়লো কেন বুঝলাম না। হতে পারে ঈর্ষা', প্রতিহিংসা অথবা কাঙ্খিত কোন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার না পাওয়ায় ক্ষোভ। কিন্তু তা প্রকাশ করতে সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে তাকে আক্রমন করা, কটুক্তি করা, ভর্তসনা করা, বিকৃত রুচি ছাড়া কিছু হতে পারে না। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় যা পরিপন্থি। রুচির দুর্ভিক্ষের সামিল। যার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করা দরকার। এ রুচি ও অপসংস্কৃতির অবসান হোক"।


উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদ এর আরেক সদস্য সুনীল ধর তার ফেসবুকে লিখেন, "একজন মাহমুদ সেলিম এর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে গিয়ে আপনার (শ্রদ্ধেয় শিমুল ইউসুফ) মতো এতো প্রবীণ একজন নাট্যব্যক্তিত্বের মুখে এমন কথা আমরা সাধারণ মানুষরা মোটেই আশা করি না। আপনাদেরতো আমরা সাধারণত মাথার উপরে স্থান দিয়ে থাকি, কিন্তু এ কি করলেন? অসাম্প্রদায়িক লড়াই সংগ্রামের অন্যতম লড়াকু, ১৯৭১ সালে রণাঙ্গনের গেরিলা যোদ্ধা, গণসঙ্গীত শিল্পী মাহমুদ সেলিম তো ইতোমধ্যেই প্রমাণ করছেন, তিনি কি এবং কি করতে পারেন। শুধুমাত্র "ইতিহাস কথা কও" এর মতো কালজয়ী ঐতিহাসিক সৃষ্টির জন্য মুক্তিযু্দ্ধের পক্ষের সকল মানুষের উচিত তাঁকে সম্মানিত করে শ্র্দ্ধা জানানো, তাও আবার '৭৫ পরবর্তী সময়ে, যখন আপনারা অনেকেই কোন পক্ষে ছিলেন তা বুঝতে সময় লেগেছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের। আর একটা কথা বুঝলাম না 'একুশে পদক' এর সাথে 'শহীদ আলতাফ মাহমুদ' এর কি সম্পর্ক কি?

এই স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে আপনি নিজেকে এবং একুশের গানের বিখ্যাত সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদ'কেও অসম্মানিত এবং অপমানিত করেছেন। আপনার ভাগ্যে একুশে পদক জোটেনি বলেই কি ক্ষোভের এমন বাজে প্রকাশ?

লজ্জিত হলাম একজন সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে.......... নিন্দা জানাই এমনতরো হীনমন্য সংস্কৃতির"।

একই পোস্টের কমেন্টে এনায়েত হাসান মানিক নামে একজন লিখেন, "শিমুল ইউসুফ, ঈর্ষা করে আপনার অর্জিত গৌরব আপনি নিজেই হারালেন। আপনার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পেশাদারিত্ব ছাড়া আর কিছুই রইল না। এখন থেকে যদি কোনো খেতাব বা পদক পান তা হলে সেটা ভিক্ষা হিসেবেই পাবেন।...ইতিহাস কথা কও আমার কাছে ছিল পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে একটি মুক্তির সংগ্রাম। যে সংগ্রাম উদীচী সমগ্র বাংলাদেশে একা-ই চালিয়ে গেছে। এই গীতিআলেখ্য কোনো কোনো জায়গায় আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও পরিবেশন করেছি, বাধা প্রাপ্ত হয়েছি, কোনো সময় গীতি আলেখ্যে উদ্ধৃত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ ই মার্চের ভাষণ পরিবেশন না করার জন্য চাপ এসেছে কিন্তু আমরা তা মেনে নেইনি।
সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অর্জন চোখে দেখা যায় না তবে উপলব্ধি করা যায়। যদি উপলব্ধি করার মতো জ্ঞান থাকে। উদীচী বার বার হত্যা আর জুলুম বঞ্চনার স্বীকার হয়েছে। কিন্তু কারো ঘরে ফসল তুলে দিয়েও মিত্র হতে পারেনি। সংস্কৃতিবান মানুষ উদার হয় জানি কিন্তু এতোটা নীচ হতে পারে তা জানা ছিল না"।

সাংবাদিক সাকিল অরণ্য লিখেন, "...অসাম্প্রদায়িক লড়াই সংগ্রামের এই মহান শিল্পী মুক্তিযুদ্ধের বীরসেনানী মাহমুদ সেলিম সারাজীবন এর সবকিছু বাদ দিলেও কেবল ‘ইতিহাস কথা কও’ এর মত কালজয়ী ঐতিহাসিক সৃষ্টির জন্য সহস্রবার সম্মানিত করা উচিত।

এ বছর ২১শে পদকে ভূষিত করে রাষ্ট্র তাঁর সেই লড়াই সংগ্রামের যে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে সেজন্য সারাদেশের অসংখ্য শিল্পীসমাজ, মুক্তিযুদ্ধের বীরসেনানীরা খুশি হয়েছেন। কিন্তু আপনার একটি ফেসবুক স্টাটাসে তাঁকে যে ভাষায় আক্রমন করেছেন তা অত্যন্ত হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছেন। যে ভাষায় আপনি তাঁকে আক্রমন করেছেন সেটি আপনার মত একটি অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ দিতে পারেন তা ভাবতেও পরিনা। অথচ সত্য এই আপনি এবং আপনিই অশ্লিল ভাষায় তাঁর সারাজীবনের লড়াই সংগ্রামকে অশ্রদ্ধা করেছেন। আজ সারাদেশে আপনার মত এমন মানুষের নিকট এই ধরণের বক্তব্য শুনে সংস্কৃতিকর্মীরা হতাশ হয়েছেন। অনেকেই আজ আপনার সাংস্কৃতিক মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তা আমার এবং আমার মত যারা আপনাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসেন তাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক..."।

তিনি শিমুল ইউসুফকে তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনার অনুরোধ করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত