মুক্তিবেটি কাঁকন বিবির গল্প

প্রকাশ : ২৯ মে ২০১৬, ১৮:৩৭

জাগরণীয়া ডেস্ক

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের খুবই কাছে একটি গ্রাম, গ্রামের নাম নক্রাই। সেটি চেলা বাজার থেকে মাইল ছ'য়েকের পথ। সেখানেই ছিল এক খ্রীষ্টান খাসিয়া পরিবার। বাবা গিস্য়, তিনি জুমচাষের সাথেই আজীবন জড়িত ছিলেন। মা মেলি, তিনি স্বামীকে জুমচাষে সহযোগিতা করতেন এবং গৃহ সামলাতেন। গিসয় মেলি দম্পতির ছিল ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে। বড় ছেলে উহর, মেঝ ছেলে উসাল, ছোট ছেলে উফান। আর বড় মেয়ে কাফল, সবার ছোট মেয়ে কাঁতেক নিয়তা বা কাঁকন বিবি। বাবা মার আদুরে নাম কাকেট।

কাঁকন বিবির জন্ম কোন সালে বা কোন তারিখে তা তিনি জানেন না। তাঁর ভাষ্যমতে তিনি এখন আশি ঊর্ধ্ব একজন বৃদ্ধা। জন্মেছিলেন বৃটিশ ভারতের মিজোরাম প্রদেশে। কাঁকন বিবির বয়স যখন ছয় মাস তখন এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে তাঁর বাবা গিসয় মৃত্যুবরণ করেন। বাবার মৃত্যুর মাস ছ'য়েকের মাথায় চিরবিদায় নেন মা মেলিও। অভাবের সংসারে এই পাঁচটি এতিম সন্তান একেবারেই অসহায় হয়ে পড়ে তখন। গিসয়'র জমি-জিরাত বলতে তেমন কিছুই ছিল না। ফলে অল্প বয়েসি ভাইদের উপার্জনের জন্য কাজে লাগতে হয়। তাঁদের আর খুব বেশি পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ তখন পরিবারটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

কাঁকন বিবির বয়স যখন ৮/৯ মাস তখনই তাঁর বড় বোন কাফলের বিয়ে হয়ে যায় এক বাঙালি মুসলমানের সাথে। তাঁর নাম খুশি কমান্ডার। মূলত তিনি বৃটিশ আমলে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে চাকরি করতেন। এ কারণেই লোকে তাঁকে কমান্ডার বলত। মা মারা যাবার পর দুগ্ধ শিশু কাঁকন বিবিকে দেখাশোনা করতেন তাঁর বড় বোন কাফল। কিন্তু তাঁর বিয়ের পর কাঁকন বিবিকে দেখাশোনা করার আর কেউ রইল না। অবশেষে কাফলই তাঁর স্বামীর সহযোগিতায় কাঁকন বিবিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে সন্তানের মতো মানুষ করতে থাকেন। খুশি কমান্ডার ছিলেন গোঁড়ামিমুক্ত একজন উদার প্রকৃতির মানুষ।

ঐ গ্রাম থেকে একটু দূরেই ছিল পাকিস্তান সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ক্যাম্প। সেই ক্যাম্পে সৈনিক হিসাবে কাজ করত পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের আব্দুল মজিদ খান। দেখতে বেশ লম্বা-চওড়া। খুশি কমান্ডারের সাথে মজিদ খানের বেশ চেনা-জানা ছিল, বাড়িতেও আসতেন মাঝেমধ্যে। খুশি কমান্ডারই একসময় আবদুল মজিদ খানের সাথে কাঁকন বিবির বিয়ের ব্যবস্থা পাকা করেন। পারিবারিকভাবেই সে বিয়ে সম্পন্ন হয়। ধর্মান্তরিত হয়ে নাম হয় নূরজাহান বেগম। কাঁকন বিবির সেই বিয়ের সাল বা তারিখ কোনোটাই মনে নেই। তবে তিনি জানান, সময়টা মুক্তিযুদ্ধের ১২/১৩ বছর আগে। সেই অনুযায়ী ১৯৫৮/৫৯ সাল হতে পারে।

বিয়ে হওয়ার পর কাঁকন বিবি ভগ্নিপতির বাড়ি ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে কর্মস্থল বোগলা ক্যাম্পে এসে ওঠেন। সেখানেই নতুন করে সংসার শুরু করেন। এই বোগলা ক্যাম্পে তিনি প্রায় পাঁচ বছর ছিলেন। আব্দুল মজিদ খান বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে বদলিও হলে কাঁকন বিবিকেও সাথে নিয়ে যেতেন। সে সময় কাঁকন বিবি সুনামগঞ্জে প্রায় ছয় মাস, সিলেটে প্রায় ৭ মাস এবং ছাতকেও কিছুদিন স্বামীর সাথে কাটান। বিবাহিত জীবনের দীর্ঘ আট বছরে তাঁদের ঘরে তিনটি সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু জন্মের পরপরই তারা মৃত্যুবরণ করে। খুব সম্ভবত এ কারণেই আব্দুল মজিদ খান সিলেট আখালিয়া ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় কাঁকন বিবিকে পরিত্যাগ করেন। হঠাত্‍ করেই আব্দুল মজিদ খান উধাও হয়ে যান।

স্বামী নিরুদ্দেশ হওয়ার পর একা কাঁকন বিবি অসহায় হয়ে পড়েন। আবারো ভগ্নিপতি খুশি কমান্ডারের বাসায় ফিরে যান কাঁকন। সেখানে প্রায় বছর দেড়েক থাকার পর শাহেদ আলী নামে আরেকজনের সাথে বিয়ে হয় কাঁকন বিবির। দুই বছরের সেই সংসারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়, নাম সখিনা বিবি। ঐসময় অসহযোগ আন্দোলনে পুরো দেশ টালমাটাল ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। এসময় ভগ্নিপতি খুশি কমান্ডারকেও পাকিস্তানিরা হত্যা করে ফেলে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সুনামগঞ্জ-সিলেট অঞ্চলটি ছিল পাঁচ নম্বর সেক্টরের অধীন। এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন লে. কর্নেল মীর শওকত আলী। কাঁকন বিবি যে গ্রামে থাকতেন তার পাশেই মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। আবার এই ক্যাম্প থেকে খানিকটা দূরেই ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। যা স্থানীয়ভাবে টেংরা ক্যাম্প নামে পরিচিত। মুক্তিবাহিনীর যে ক্যাম্প ছিল তার কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন শহীদ মিয়া। মীর শওকত আলী একদিন এই ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন। তিনিই মূলত কাঁকন বিবিকে পাকিস্তানিদের ক্যাম্প থেকে খবর সংগ্রহের কাজে লাগানোর জন্য উত্সাাহিত করেন। কাঁকন বিবির সাথে সাক্ষাত্‍ করে তিনি তাঁকে কাজের গুরুত্বও বুঝিয়ে বলেন। কাঁকন বিবির স্বামী যেহেতু আগে পাকিস্তানি ক্যাম্পে কাজ করত সুতরাং তাঁর পক্ষেই সম্ভব সেই পরিচয় কাজে লাগিয়ে সেখানকার খবরাখবর এনে মুক্তিবাহিনীর কাছে প্রেরণ করা। দেশের জন্য কিছু একটা করতে পারবেন এই ভেবে রাজি হয়ে যান কাঁকন বিবি। দুধের শিশুকে স্বামীর কাছে রেখে নেমে যান কাজে। সেই তার যুদ্ধ শুরু।

কাঁকন বিবি মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত হন একজন 'ইনফরমার' হিসাবে। যাঁর কাজ ছিল পাকিস্তানি ক্যাম্পে ঢুকে তাদের হাতিয়ারের ধরন, সংখ্যা ও সৈনিকদের অবস্থান সম্পর্কে খবর সংগ্রহ করা। স্বামী শাহেদ আলী তাঁর এই কাজে বাধা দিলেও তিনি তা উপেক্ষা করেন। সেই কঠিন দায়িত্ব পালন করার জন্য তিনি কয়েক দিন সময় নেন। চিন্তা করেন। পরে নিজেই বুদ্ধি খাটিয়ে একটি ময়লা ও ছেঁড়া কাপড় পরে একদিন দিনের বেলায় ভিক্ষা করতে করতে রওনা দেন টেংরা ক্যাম্পের দিকে। এলাকার লোকজনদের অনেকেই তখন শরণার্থী হয়ে ভারতে চলে গেছে। ফলে তাঁকে খুব বেশি কেউ চিনতেও পারল না। প্রথমে টেংরা ক্যাম্পের বাইরে কয়েকটি বাড়িতে ভিক্ষা করেন। পরে কৌশলে এক সময় ঢুকে পড়েন টেংরা ক্যাম্পের ভিতর। ভিক্ষা করার পাশাপাশি মিলিটারিদের কাছে তাঁর প্রথম স্বামী আব্দুল মজিদ খানের খোঁজও করেন। নানা কায়দায় কিছুক্ষণ ক্যাম্পের ভেতর অবস্থান করে সবকিছু দেখার চেষ্টা করেন। এবং প্রথম দিন তিনি খুব ভালভাবেই তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। টেংরা ক্যাম্পে তিনি যা দেখেছেন তা সবই এসে জানান কোম্পানি কমান্ডার শহিদ মিয়াকে। মুক্তিবাহিনী তখন সেই মোতাবেক তাঁদের অপারেশন চালায় এবং এতে তাঁরা সফলও হয়।

দ্বিতীয় দিনও কাঁকন বিবি একই কায়দায় টেংরা ক্যাম্পে প্রবেশ করেন। তখন ক্যাম্পের একটি ঘরে কয়েকজন মেয়েকেও দেখতে পান। মেয়েরা ছিল ক্লান্ত এবং বিপর্যস্ত। কাঁকন বিবির বুঝতে বাকি থাকল না এদেরকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। দ্বিতীয় দিন তিনি যখন মিলিটারির কাছে তাঁর স্বামীর খবর জানতে চান তখনই তাঁকে আটক করে ফেলা হয়। কয়েকজন পাক হানাদার বাহিনীর সদস্য মিলে তার উপরে চালায় অকথ্য শারীরিক নির্যাতন। কিন্তু তখনো পর্যন্ত তারা ভাবতে পারেনি কাঁকন বিবি একজন 'ইনফরমার'। নির্যাতন শেষে তারা কাঁকন বিবিকে ছেড়ে দেয়। সেদিন অত্যাচারের মুখেও কাঁকন বিবি ঠিকই সেদিন সমস্ত তথ্য এনে কোম্পানি কমান্ডারকে জানান।

অত্যাচারে পোড় খাওয়া কাঁকন বিবি যেন আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেন। তার সাহস দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এদিকে নির্যাতনের খবর শুনে কাঁকন বিবিকে ‘নষ্টা মেয়ে’ বলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন স্বামী শাহেদ আলী। একমাত্র মেয়ে সখিনাকে রেখে দেন নিজের কাছে। স্বামী সন্তানকে হারিয়ে গৃহহীন, সম্বলহীন কাঁকন বিবি ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। এই দু:সময়েও কাঁকন বিবি 'ইনফরমার' হিসেবে কাজ করার জন্য যান সুনামগঞ্জে অবস্থিত পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে। সেখান থেকে যান সিলেট ক্যাম্পে। পরে যান গোবিন্দগঞ্জ, জাউয়া বাজার ক্যাম্পে। যেতেন সেই ভিক্ষা করার বেশেই। পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছে খোঁজ করতেন নিজের প্রথম স্বামীর। প্রায়ই পাকিস্তানি সৈন্যরা কাঁকন বিবিকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালাত। এতকিছুর পরেও কাঁকন বিবি নিজের কাজ সম্পর্কে ছিলেন পূর্ণ মাত্রায় সচেতন। দীর্ঘদিন পর কোম্পানি কমান্ডার শহিদ মিয়ার নির্দেশে তৃতীয়বারের মতো তিনি আবার যান টেংরা ক্যাম্পে। টেংরা ক্যাম্পে তখন আরও অনেক বাঙালি মেয়েকেই বন্দি করে রেখেছে পাক হানাদার বাহিনী।

এর মধ্যে কাঁকন বিবি ক্যাম্প থেকে খবর সংগ্রহ করে মুক্তিবাহিনীর কাছে প্রেরণ করছেন তা স্থানীয় কয়েকজন রাজাকার সন্দেহ করে। ওই রাজাকাররা পাকিস্তানি ক্যাম্পে গিয়ে অফিসারদের কাছে তাদের সেই সন্দেহের কথা জানায়। তাঁর ভগ্নিপতি খুশি কমান্ডার যে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ছিল এবং তাঁকে যে এ কারণে হত্যা করা হয়েছে সে কথাও জানায়। এরপর পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁকে ধরে নিয়ে যেয়ে অকথ্য নির্যাতন চালায়। টানা সাতদিন অজস্র হায়েনার লালসার শিকার হন কাঁকন বিবি। বিবস্ত্র করে চলে অমানুষিক অত্যাচার। গাছের সাথে বেঁধে নিষ্ঠুরভাবে পেটানো হয় তাকে। সারা শরীর দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। বিকৃত উল্লাসে সিগারেট দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়া হয় হাতে উরুতে তলপেটে। এক পর্যায়ে পাকহানাদাররা মোটা লোহার শিক গরম করে তাঁর উরু দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়। এই বীভত্স  নির্যাতনের পরও তাঁর মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে পারেনি পাকিস্তানি সৈন্যরা। সাতদিন পরে কৌশলে তিনি পালিয়ে আসেন বালাট ক্যাম্পে। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবার ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার বুকে তখন প্রতিশোধের আগুন।

মৃত্যুর দুয়ার দেখে এসে এবার তার সাহস দ্বিগুণ বেড়ে যায়, ইনফর্মারের পাশাপাশি শুরু করেন সম্মুখযুদ্ধ। রহমত আলীর কাছে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আর ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে গুপ্তচরের কাজ। নভেম্বর মাসে টেংরাটিলার যুদ্ধে উরুতে গুলিবিদ্ধ হন, যে দাগ এখনো বয়ে চলেছেন। তিনি টেংরাটিলাসহ আমবাড়ি, বাংলাবাজার, টেবলাই বালিউড়া, মহব্বতপুর, বেতুরা, দুরবিন টিলা, আঁধার টিলা মোট ৯টি যুদ্ধে সরাসরি অস্ত্র হাতে অংশগ্রহণ করেন। নভেম্বর মাসে শেষের দিকে রহমত আলীসহ আরও কয়েক যোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের জাউয়া ব্রিজ অপারেশনে যান। একটি সফল অপারেশনের সাক্ষী হয়ে থাকেন কাঁকন বিবি। গ্রেনেড দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন জাউয়া বাজার ব্রিজ। তবে আমবাড়ি বাজারের যুদ্ধে তার পায়ে আবার গুলি লাগে।

স্বাধীন দেশে সবাই নিজের মতো করে আবার জায়গা করে নিলেও বীরাঙ্গনা কাঁকন বিবির কোথাও জায়গা হলো না। অবশেষে কাঁকন বিবি একদিন নিজেই ঢাকায় চলে এলেন। এর-ওর কাছে জিজ্ঞেস করে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি খুঁজে বের করেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর কথাও হয়। একজন বীরাঙ্গনাকে বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজের পরিবারেই আশ্রয় দেন। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে বেশ কিছুদিন ছিলেন কাঁকন বিবি। পরে '৭৫-এর শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধুর আপত্তি সত্ত্বেও তিনি নিজ গ্রামেই ফিরে যান। নিজ গ্রামে বসেই মুজিব হত্যার খবর পান। কাঁকন বিবির বুকটা ভেঙে যায়।

'৭৫-এর পর থেকে প্রায় ২২ বছর কাঁকন বিবির কেটেছে স্থানীয় বাংলাবাজারের পাশে একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরে। এই সময়ে তিনি কিছুটা অপ্রকৃতিস্থও ছিলেন। পরে অবশ্য স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা উদ্যোগ নিয়ে তাঁকে চিকিত্সাছ করান, ভরণ-পোষণেরও দায়িত্ব নেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কাঁকন বিবিকে নিয়ে পত্র-পত্রিকায় কিছু লেখালেখি হয়। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করেন। শেখ হাসিনাও কাঁকন বিবির সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। বর্তমানে কাঁঠালবাড়ি গ্রামের সীমান্তবর্তী বাজারে সরকারি খাস জমির ৭০ শতাংশের উপর ঘর করে আছেন কাঁকন বিবি। দ্বিতীয় স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়ে সখিনাও এখন মায়ের সাথেই থাকে।

কিন্তু ভালো নেই কাঁকন বিবি। বয়সের ভারে ন্যুব্জ শরীর। অভাবের সংসারে চিকিৎসা ব্যয় যেন বিলাসিতা। শেখের বেটি কথা দিয়েছিলেন বীর প্রতীক উপাধি দিবেন। দেয়া হয়নি। তবু কাঁকন বিবির আফসোস নেই, শেখ হাসিনার দেয়া জমিতে ঘর তুলে বেঁচে আছেন কোনোমতে। কাঁকন বিবির ভাইদের পরিবার এখনো মিজোরামেই থাকে। তাঁদের কেউ কেউ মাঝেমধ্যে কাঁকন বিবিকে দেখার জন্য এদেশে আসেন। দু'ভাই ও একবোন গত হয়েছেন। এক ভাই জীবিত। তিনিই আসেন।

অসম সাহসী এই মাকে ভালোবাসে মানুষ নাম দিয়েছে 'মুক্তিবেটি'। 'মুক্তিবেটি' ডাক শুনলে ফিক করে হেসে দেন। এইটুকুতেই তার শান্তি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত