কাতারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ক্ষতিপূরণ চাইবে এনএইচআরসি
প্রকাশ | ১৩ জুন ২০১৭, ০১:৪৩
সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে কাতারের জাতীয় মানবাধিকার কমিটি (এনএইচআরসি)। কাতারের ওপর এই তিন দেশের এক নিষেধাজ্ঞায় আক্রান্ত নাগরিকদের শত শত অভিযোগ পাওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনএইচআরসি।
এনএইচআরসি ১১ জুন (শনিবার) জানিয়েছে, ‘কাতারের ওপর আরব দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার ফলে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে বসবাসরত নাগরিকরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তা তুলে ধরতে সংস্থাটি একটি আন্তর্জাতিক আইন সংস্থাকে নিয়োগ দিয়েছে।’
এনএইচআরসির চেয়ারম্যান আলি বিন স্মাইখ আল মারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কাতারের বিরুদ্ধে উপসাগরীয় দেশগুলোর এই পদক্ষেপ একটি আন্তর্জাতিক অপরাধের সমান।’ উল্লেখ্য, সৌদি আরব, বাহরাইন, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরো অন্যান্য আরব দেশ গত সোমবার- দোহা সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে- এমন অভিযোগে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সমপর্ক ছিন্ন করে। এমনকি স্থলে, জলে ও আকাশপথেও কাতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী কাতারের নাগরিকদের ১৪ দিনের মধ্যে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। একইসঙ্গে কাতারে বসবাসকারী ওই তিন দেশের নাগরিকদেরও ১৪ দিনের মধ্যে কাতার ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
আল মারি বলেন, সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী কাতারের নাগরিকদের ১৪ দিনের মধ্যে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। একইসঙ্গে কাতারে বসবাসকারী ওই তিন দেশের নাগরিকদেরও ১৪ দিনের মধ্যে কাতার ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কাতার সন্ত্রাসবাদ সমর্থনের অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
আল মারি বলেন, এনএইচআরসি কাতারের আইনজীবী সংগঠনের সঙ্গে একটি বৈঠকে আইনজীবীদের ৭০০ অভিযোগ নিয়ে একটি মামলা দায়ের করতে বলেন।
অভিযোগগুলোর মধ্যে একটি অভিযোগ ছিলো সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০ বছর ধরে বাস করা এক কাতারি নাগরিকের। আল মারি সাংবাদিকদের এই অভিযোগ নিয়ে বলেন, তাকে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে কাতারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
কাতারে তার কোনো বাড়িঘর নেই, চাকরি নেই, কোনো আয় নেই। এটা সত্যিই একটি মানবাধিকার পরিস্থিতি। আল মারি যোগ করেন যে, আন্তর্জাতিক আইন সংস্থাটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা দেশগুলোর ন্যাশনাল কোর্টগুলোর কাছে দেশগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করবে এবং ক্ষতিপূরণ চাইবে।
এদিকে, আলাদাভাবে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও কাতারের উপর আরব দেশগুলোর এই নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছে। সংস্থাটি জানায়, এটি (এই নিষেধাজ্ঞা) পরিবারগুলোকে ভেঙ্গে দিচ্ছে এবং মানুষের জীবিকা অর্জনের রাস্তা ও শিক্ষা ধ্বংস করে দিচ্ছে। অ্যামনেস্টির গ্লোবাল ইস্যু প্রোগ্রামের সহ-পরিচালক জেমস লিঞ্চ বলেন, রাজনৈতিক ঝামেলার এই সময়ে এই পদক্ষেপের প্রভাবে গালফ রাষ্ট্রগুলোতে বসবাসকারী সম্ভাব্য হাজার হাজার মানুষ হতাশা ও ভীতির শিকার হচ্ছে।
সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদ সংস্থাগুলো শনিবার ও রোববার জানিয়েছে যে, প্রত্যেক রাষ্ট্রই সেসব দেশে বসবাসকারী কাতারি নাগরিকদের পরিবারগুলোকে সাহায্য করতে একটি হটলাইন খোলার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই হটলাইন মূলত কি সাহায্য করবে তা বলা হয়নি।
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমজান আল থানি ধারাবাহিকভাবে বলে আসছেন যে, তার দেশের উপর এই নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে। তিনি বলেন, জিসিসি’র মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন দেশের বিরুদ্ধেও কখনো এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। মিত্রভাবাপন্ন ও অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো তো দূরে থাক।
সূত্র: আল-জাজিরা