'মা বলে পরিচয় দিতেই ঘৃণা হচ্ছে'
প্রকাশ | ০৮ জুন ২০১৭, ২০:৫৫
আরো অনেকের মতো তিনিও সন্তান হারিয়েছেন। কিন্তু পুত্রশোকের চেয়েও লজ্জা আর ঘৃণা আঁকড়ে ধরেছে তাকে। নিজেকে মা পরিচয় দিতেও লজ্জিত হচ্ছেন তিনি।
"আমি সন্তান হারিয়েছি। তাই নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের কষ্টটা আমি বুঝতে পারি। তবে তাদের কষ্টের সঙ্গে আমার কষ্ট মেলানোর সাহস নেই। বরং তাদের কাছে নিজেকে মা বলে পরিচয় দিতেই ঘৃণা হচ্ছে। কষ্ট পাচ্ছি, এটুকু বলারও সাহস নেই আমার"। এমন করেই নিজের অভিব্যক্তির কথা জানাচ্ছিলেন লন্ডন ব্রিজে হামলাকারী ইউসুফ জাগবার মা ভ্যালেরিয়া কলিনা খাদিজা।
গত ৭ জুন (বুধবার) বিবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মা জানান, কীভাবে বদলে গিয়েছিলেন তার ছেলে ইউসুফ। মরক্কোর বংশোদ্ভূত ইতালির নাগরিক ইউসুফ জাগবা। তবে তার মা ভ্যালেরিয়া জন্মসূত্রে মুসলিম নন। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ইতালিতেই থাকেন ভ্যালেরিয়া।
বিবিসির প্রতিবেদক তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ভ্যালেরিয়া বলেন, "কোনো অর্থবহন করে এমন কিছু বলা এখন আমার জন্য অসম্ভব"।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসময় নিজের বাড়ির মেঝেতে বসে ছিলেন তিনি। পুরো বাসাটা কেমন অন্ধকার। করিডরে একটি আলমারি ঠাসা বই। একটু লক্ষ করলেই চোখে পড়ে আর্নেস্ট হ্যামিংওয়ে, বার্নার্ড শয়ের বই। দেয়ালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অবদান রাখার একটি সনদপত্র ঝুলছে। তবে কোথাও কোনো পারিবারিক ছবি নেই।
শান্ত স্মিত কণ্ঠে ভ্যালেরিয়া প্রতিবেদককে বলেন, "ইউসুফ আমাকে বলেছিল, 'চলো মা, সিরিয়া চলে যাই। এখানে আমরা সঠিক ইসলামের পথে থাকতে পারব না'। আমি বলেছিলাম, তুমি পাগল হয়েছ। আমার কোনো আগ্রহ নেই তোমার সঙ্গে বা আর কারও সঙ্গে সিরিয়া যাওয়ার। আমি এখানেই ভালো আছি"।
২০১৬ সালে ছেলের পরিবর্তন নজরে আসে ভ্যালেরিয়ার। ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে তুরস্ক হয়ে সিরিয়া যেতে চেয়েছিলেন ইউসুফ। ইতালির বলোনিয়া বিমানবন্দরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইতালির নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ব্রিটিশ এবং মরক্কোর কর্তৃপক্ষকে ইউসুফ সম্পর্কে জানানো হয়। তিনি যে খুবই বিপজ্জনক তা-ও জানানো হয়। এরপরও ২২ বছরের ইউসুফের ভ্রমণে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় না।
ভ্যালেরিয়া জানান, এ ঘটনার পর ছেলেকে সাবধান হতে বলেন তিনি। কিন্তু ইন্টারনেট ও বন্ধুবান্ধবই ইউসুফকে বদলে দিয়েছিল। একসময় কাজের উদ্দেশে লন্ডনে চলে যান তিনি। সেখানে একটি ইসলামিক নিউজ চ্যানেলে কাজ নিয়েছেন বলে মাকে জানান। তবে তাকে সব সময় খুব বিষাদগ্রস্ত মনে হতো ভ্যালেরিয়ার। যেসব ছবি তিনি ভ্যালেরিয়াকে পাঠাতেন, সবগুলোতে খুব চিন্তিত ও গম্ভীর দেখাত তাকে।
হামলা করার দুদিন আগে ইউসুফের সঙ্গে ফোনে কথা হয় ভ্যালেরিয়ার। খুব ভালো ও স্বাভাবিকভাবে কথা বলেন তারা। দুদিন পর হামলার খবর পেয়ে ছেলের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন ভ্যালেরিয়া। ছেলের বন্ধুদের ফোন করে খোঁজ নিতে বলেন। পরে পুলিশ এসে তাকে জানায়, তার ছেলেই একজন হামলাকারী, গুলিতে নিহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৩ জুন (শনিবার) রাত ১০টার পর ব্যস্ত লন্ডন ব্রিজ এলাকায় গাড়িচাপা দিয়ে এবং এর অদূরে একটি মার্কেটে ছুরি নিয়ে হামলা চালায় তিনজন। এতে ৭ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হন। পরে তিন হামলাকারীই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। ওই হামলাকারীদের একজন ইউসুফ জাগবা।