প্রেমে পড়ে আইএস জঙ্গিকে বিয়ে এফবিআই কর্মীর!
প্রকাশ | ০৫ মে ২০১৭, ১৪:১৫
সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) এক জঙ্গির প্রেমে পড়ে দুঁদে গোয়েন্দাদের বোকা বানিয়ে আইএসের খাসতালুকে গিয়ে তাকে বিয়ে করারর মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র এক কর্মী।
ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)’র দোভাষী ড্যানিয়েলা গ্রিন বিয়ে করতে গিয়েছিলেন আইএসের খাসতালুক সিরিয়ায়। পাত্র জার্মান নাগরিক ডেনিস কাসপার্ট, আইএসের এক জন কট্টর জঙ্গি। সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেয়ার পর যিনি নাম বদলে হন আবু তালহা আল-আলমানি।
চেকোস্লোভাকিয়ায় জন্ম নেয়া গ্রিন এক মাকিন নাগরিককে বিয়ে করেন। ২০১১ সালে তিনি এফবিআইতে কাজ শুরু করেন। ২০১৪ সালের জুনে তিনি এফবিআইকে বোকা বানিয়ে তুরস্ক হয়ে সিরিয়া পাড়ি জমান।
আদালতের নথিপত্র অনুযায়ী তিনি সিরিয়ায় গিয়ে ২০১৪ সালের ২৭ জুন কাসপার্টকে বিয়ে করেন। তবে তিনি পরে তার ভুল বুঝতে পারেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় এক বান্ধবীকে করা এক ই-মেল বার্তা থেকে।
সিরিয়া যাওয়ার দু মাসের মাথায় আগস্টের গোড়ার দিকে তিনি আইএসের অন্দরমহল থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন এবং গ্রেপ্তার হন।
এফবিআই জানাচ্ছে, জার্মান নাগরিক কাসপার্ট খুব ভাল এক জন মিউজিশিয়ান। বহু জার্মান নাগরিককে তিনি নিয়ে আসেন আইএসে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে তিনি খুনের হুমকিও দিয়েছিলেন এক সময়। কাসপার্টের সঙ্গে এফবিআইয়ের দোভাষী ড্যানিয়েলা গ্রিনের আলাপ হয় অনলাইনে। স্কাইপে কাসপার্টের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন ড্যানিয়েলা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁরা মগ্ন থাকতেন গল্পে-আড্ডায়। এই ভাবেই কাসপার্টের সঙ্গে দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন ড্যানিয়েলা। কিন্তু কাসপার্টের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তো যেতে হবে সিরিয়ায়।
তাই এফবিআই কর্তাদের মিথ্যা কথা বলেন ড্যানিয়েলা। এফবিআইকে তিনি জানান, এক আইএস জঙ্গির সঙ্গে তার আলাপ-পরিচয় হয়েছে। সেই জঙ্গিকে তিনি তার প্রেমের ফাঁদে ফেলেছেন। এ বার সিরিয়ায় গিয়ে ওই আইএস জঙ্গির সঙ্গে তার দেখা করার খুব দরকার। তা হলে ওই জঙ্গিকে হাতেনাতে ধরে ফেলা যাবে। গ্রিনের ওই প্রস্তাব শুনে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান এফবিআই কর্তারা। আইএস জঙ্গিদের হাতেনাতে ধরতে তারা বিশ্ব ঢুঁড়ে ফেলছেন। এফবিআইয়ের অনুমতি নিয়েই আইএস জঙ্গি কাসপার্টের সঙ্গে দেখা করতে সিরিয়ায় যান ড্যানিয়েলা।
এভাবে মিথ্যা কথা বলে এফবিআই কর্তাদের ঠকানোটা যে ঠিক কাজ হয়নি, পরে যুক্তরাষ্ট্রে এসে নিজেই তা কবুল করেন ড্যানিয়েলা। তার চাকরি যায়। দু’বছরের কারাদ- হয় ড্যানিয়েলার এবং গত বছর তিনি মুক্তি পান।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সাবেক অফিসার জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এই ঘটনাটা যে এফবিআইকে চরম অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’ অস্বস্তিকর ছিল বলেই এত দিন ঘটনাটা ঢাকা-চাপা দিয়ে রেখেছিল এফবিআই।
কাসপার্টকে বিয়ের পর সিরিয়া থেকে প্রথম বার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে ড্যানিয়েলা যখন তার ভুল স্বীকার করেছিলেন এফবিআই কর্তাদের কাছে, তখন তা যাতে কাকপক্ষীতেও জানতে না পারে, তার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে এফবিআই। তাদের আশঙ্কা ছিল, ওই ঘটনা জানাজানি হলে এফবিআইয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। নষ্ট হবে বিশ্বাসযোগ্যতা। কিন্তু আদালত থেকেই বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে।
ড্যানিয়েলাকে যারা চেনেন অনেক দিন ধরে, এফবিআইয়ে তার এক সময়ের সহকর্মীরা, তারা কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না, এই কাজটা ড্যানিয়েলা করতে পারলেন কীভাবে! এফবিআইয়ের নীতিনিষ্ঠ কর্মী হিসেবেই সহকর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন ড্যানিয়েলা। ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পরেই এফবিআইয়ের চাকরি পান তিনি। বিয়েও করেছিলেন ড্যানিয়েলা এক মার্কিন নাগরিককে। সিরিয়ায় কাসপার্টের সঙ্গে প্রথমবার দেখা করতে যাওয়ার সময় তার মার্কিন স্বামীকেও মিথ্যা বলেছিলেন ড্যানিয়েলা। বলেছিলেন, তিনি মিউনিখে যাচ্ছেন, তার অসুস্থ বাবা, মাকে দেখতে। কিন্তু মিউনিখে না গিয়ে ড্যানিয়েলা চলে গিয়েছিলেন তুরস্কের ইস্তান্বুলে। সেখান থেকেই তিনি যোগাযোগ করেন কাসপার্টের সঙ্গে। তার পর কাসপার্টই ড্যানিয়েলাকে ইস্তান্বুল থেকে সিরিয়ায় নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন।