গুজরাট দাঙ্গা

১৪ বছর পর ১১ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০১৬, ১৯:৫৯ | আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬, ১৬:৩৮

অনলাইন ডেস্ক

২০০২ সালে গুলবার্গ সোসাইটি হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত গুজরাটে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার সময় বর্বর হত্যাকাণ্ডের দায়ে ১১ জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে ভারতের একটি আদালত। খবর বিবিসির।

ঐ ঘটনায় অভিযুক্ত ২৪ জনের মধ্যে ১২ জনকে সাত বছরের ও একজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

শুক্রবার আহমেদাবাদের বিশেষ আদালত রায় ঘোষণার সময় ওই ঘটনাকে ‘সভ্য সমাজের ইতিহাসে অন্ধকারতম দিন’ বলে আখ্যায়িত করেন।

প্রায় দেড় দশক আগে একটি ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে ৬০ হিন্দু পূণ্যার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঐ ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ৬৯ জন মানুষকে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করে উম্মত্ত একদল লোক।

সমালোচকরা বলে থাকেন, ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই দাঙ্গা বন্ধে কোনো ভূমিকা নেননি। তবে মোদি বরাবরই অপরাধের দায় অস্বীকার করে আসছেন। এমনকি ওই দাঙ্গার জন্য মুখমন্ত্রী হিসেবে তিনি একবারের জন্যও ক্ষমা চাননি। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টও পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকায় তার বিচার করতে রাজি হয়নি।

এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে গুজরাট পুলিশকে দেওয়া হলেও ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট একটি স্বাধীন বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করে।

বিশেষ এই তদন্ত দলের অনুসন্ধানের আওতায় থাকা দাঙ্গার সময় সংঘটিত ১০টি প্রধান ঘটনার মধ্যে গুলবার্গ হত্যাকাণ্ড অন্যতম। গুলবার্গ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ৬৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ২০০৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিচার শুরু হয়। এদের মধ্যে মামলা চলাকালীন ছয় জনের মৃত্যু হয় এবং একজন পলাতক রয়েছে।

এই মামলায় ৮ নারী সহ ৩৩৮ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর গত ২ জুন বাকিদের মধ্য থেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) নেতা অতুল বৈদ্যসহ ২৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।

ওই দাঙ্গার ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রখ্যাত মুসলিম রাজনীতিক ও ওই এলাকার তৎকালীন কংগ্রেস পার্টির এমপি এহসান জাফরি। এই আমৃত্যু দণ্ডের এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রী জাকিয়া জাফরি।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমার চোখের সামনে এহসান জাফরিকে খুন করা হয়েছে, এটা মোটেই ন্যায়বিচার হয়নি। আমার স্বামী নরেন্দ্র মোদীর কাছে সাহায্য চেয়েও পাননি।”

গুলবার্গ হত্যাকাণ্ডের বেঁচে যাওয়া অনেকে বলেন, উম্মত্ত লোকেরা বাড়িতে হামলা চালালে আত্মরক্ষার জন্য তিনি নিজের অস্ত্র থেকে গুলি ছুঁড়েছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরা স্টেশনে সবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডে ৬০ জন করসেবকের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে এই ঘটনার সূত্রপাত। পর দিন সকাল সকালে আহমেদাবাদের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ চমনপুরা এলাকায় মুসলিমবিরোধী স্লোগান দিতে দিতে হাজির হয় এক বিশাল বাহিনী, তারা গুলবার্গ হাউজিং সোসাইটিতে হামলা চালায়।

চল্লিশটি বহুতল ভবনের এই আবাসিক এলাকার প্রায় সবগুলোতে উচ্চ-মধ্যবিত্ত মুসলিম ব্যবসায়ী পরিবার বাস করতেন। হামলায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তাদের অনেকেই ওই দিন আশ্রয় নিয়েছিলেন সাংসদ এহসান জাফরির বাড়িতে।

সেসময় থানায় ফোন করে অভিযোগ করেও কোনও সাহায্য পাননি আক্রান্তরা। হিংস্র হয়ে ওই বাহিনী একের পর এক বাড়িগুলোর দরজা বন্ধ করে দিয়ে সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়, সঙ্গে চলতে থাকে নির্যাতন। বাড়িগুলোর অর্থ ও মালামালও লুটপাট করে হামলাকারীরা।

প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে চলা ওই নৃশংস গণহত্যাকাণ্ডে সাংসদ জাফরিসহ ৩৫ জন জীবন্ত পুড়ে মারা যান; খুন হন আরও ৩৪ জন।