স্ত্রীর চাকরি, বেতন নেন স্বামী!
প্রকাশ | ৩১ মার্চ ২০১৭, ০০:২২
স্ত্রী চাকরি করছেন, কিন্তু সেই চাকরির বেতন নিজের হাতে পাওয়ার বা খরচ করার সুযোগ হয় না তার, স্বামীই নিয়ে যান সব টাকা। দিতে না চাইলে গৃহবন্দী করা বা বিচ্ছেদ এর ভয়। এই চিত্র আলজেরিয়ার কর্মজীবী সকল নারীর।
দেশটির প্রচলিত রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করেই কর্মস্থলে যাচ্ছেন আলজেরিয়ার অনেক নারী। কিন্তু নিজের শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত সেই উপার্জনের উপর নেই তাদের অধিকার। এ বিষয়ে দেশে আইন থাকলেও নেই তার প্রয়োগ।
চাকরিজীবী নারীদের ভাষ্য, বেতনের অর্থ নিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেল করেন স্বামীরা। যদি নিজের বেতনের ওপর স্বামীকে হস্তক্ষেপ করতে বাধা দেওয়া হয়, তাহলে চাকরি বাদ দিয়ে ঘরে থাকতে বাধ্য করা হয় অথবা বিচ্ছেদের মুখোমুখি হতে হয়। শুধু স্বামীরাই যে এমনটা করছেন তা নয়, পরিবারের বাবা বা ভাইয়েরাও বাড়ির মেয়েদের আয়ের অর্থ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন।
নাদিয়া নামে আলজেরীয় এক নারী বলেন, "আমি কোনো দিন আমার বেতন চোখে দেখিনি। আমার স্বামী সব নিয়ে যায়। আইনের মাধ্যমে আমাদের অধিকার রক্ষা হওয়া উচিত"।
এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে ২০১৫ সালে দেশটি পার্লামেন্টে একটি আইন করে। সেখানে বলা হয়, স্ত্রীর বেতনে হস্তক্ষেপ করলে স্বামীর সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। কিন্তু অনেক নারী মনে করেছেন, এই আইন তাদের জন্য যথেষ্ট নয়।
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি দেশটির পরিবার ও নারীবিষয়ক মন্ত্রী মৌনিয়া মেসলেমের এক বক্তব্যেও উঠে এসেছে একই কথা।
তিনি দেশটির কর্মজীবী নারীদের বেতন রাষ্ট্রকে দিয়ে দিতে আহ্বান জানান।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধান সম্পদ তেলের দাম কমে যাওয়ায় দেশটি যে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে এ অর্থ।
তিনি আরও বলেন, "আমরা আমাদের দেশকে তো সাহায্য করতে পারি"।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এল বিলাদকে তিনি বলেন, "আমাদের জীবনধারণের জন্য যে অর্থ ব্যয় হয় তা আমাদের স্বামীরা দিয়ে থাকে। তাই উপার্জিত এই বেতন আমাদের নয়"।
এই বক্তব্যের ফলে এই নারী মন্ত্রীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
এদিকে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে দেশটিতে নারী চাকরিজীবীর সংখ্যা ছিল ১০ দশমিক ২ শতাংশ আর ২০১৫ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। আলজেরিয়ায় বর্তমানে ২০ লাখ নারী কাজ করেন, যেখানে কর্মজীবী পুরুষের সংখ্যা ৯০ লাখের একটু নিচে। কিন্তু ২০০৭ সালে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা যেখানে ৩৪ হাজার ছিল, সেখানে সাত বছরে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে প্রায় ৬০ হাজার।
আইনজীবীরা বলছেন, কর্মক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেতনের অর্থকে কেন্দ্র করে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যাও বাড়ছে।
এ ব্যাপারে আইনজীবী ফাতেমা-জোহরা বেনব্রাহাম বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য, বিশেষ করে স্ত্রীদের বেতনের ওপর কর্তৃত্ব ফলানো এ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ। সম্প্রতি কয়েক বছরে বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা বেড়েছে। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার প্রধান কারণ অর্থ।
বেনব্রাহাম বলেন, এটি একধরনের আর্থিক নিপীড়ন। এ এক ভয়ানক প্রবণতা, যা দীর্ঘদিন ধরে নীরবে চলে আসছে।
আইনজীবী বেনব্রাহাম বলেন, অনেক নারী নিজেদের বেতন নিজের ও সন্তানের জন্য রাখার জন্য যদি বিবাহবিচ্ছেদ করতে হয়, তাহলে সেটাই ভালো বলে মনে করেন।
ইউনিভার্সিটি অব আলজেরিয়ার সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক নোরেদিন বেকিস বলেন, "পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ফল হলো এটা। আমাদের দেশে ছেলেদের শেখানো হয় আর্থিক ক্ষমতার ওপর আধিপত্য পুরুষের"।
উল্লেখ্য, আলজেরিয়ার প্রচলিত নিয়ম হলো স্বামীরা স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণের খরচ দেবে। আর স্ত্রীর উপার্জন তার নিজের জন্য থাকবে। তবু অনেক নারীকেই তাদের উপার্জন স্বামীর হাতে তুলে দিতে হয়, তাই মেয়েদের সেখানে কাজ করার আগ্রহ কম।