যুক্তরাষ্ট্রে নৈশক্লাবে গুলি

এক ব্যক্তি হত্যা করলো অর্ধশত মানুষ

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০১৬, ০১:৩৪ | আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬, ০১:৪২

অনলাইন ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডো শহরে সমকামীদের একটি নৈশক্লাবে এক বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫৩ জন।

স্থানীয় সময় শনিবার মধ্যরাতে শহরের পালস নৈশক্লাবে এ ঘটনা ঘটে। খবর রয়টার্সের।

রবিবার অরল্যান্ডোর মেয়র বাডি ডিয়ার হতাহতের এ সংখ্যা জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো জনসমাগমস্থলে গুলি চালিয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ হত্যার ঘটনা।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাত ২টায় বন্দুকধারী গুলিবর্ষণ করলে এক কর্মকর্তা তাকে প্রতিহতের চেষ্টা করেন। ক্লাবের বাইরে তার সঙ্গে গোলাগুলিতে লিপ্ত হন ওই কর্মকর্তা। এক পর্যায় দৌড়ে ওই ক্লাবে ঢুকে পড়েন বন্দুকধারী।

এরপর ‘জিম্মি পরিস্থিতি’ তৈরি হয় জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মিনা বলেন, ক্লাবের ভিতরে আটকে পড়া অনেকের কাছ থেকে ফোন আসছিল। শনিবার রাতে হামলাকারী দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেন জানিয়ে মিনা বলেন, তার ‘ভালো’ প্রস্তুতি ছিল বলে মনে হচ্ছে।


অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে একটি সাজোয়া যান দিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। এরপর বন্দুকধারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

মধ্যরাতে ক্লাবে গুলি শুরু হওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা পর সেখানে ঢুকে হামলাকারীকে হত্যা করে পুলিশ। পরে তার পরিচয় সনাক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ বলছে, হামলাকারী ওমর সিদ্দিকী মতিন বেসরকারি সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করতেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অনুসারী ছিলেন বলে সন্দেহ করছে এফবিআই।

এফবিআই-র একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “খুব সম্ভবত হামলাকারী ইসলামিক স্টেটের অনুগত ছিলেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে”। 

তবে মতিনের বাবা মির সিদ্দিকী এনবিসিকে বলেছেন, তার ছেলের এই কাণ্ডের পেছনে ধর্মীয় কোনো কারণ সম্ভবত নেই।

নৈশক্লাবের ভিতর থেকে বেঁচে আসা ক্রিস্টোফার হ্যানসেন সিএনএনকে বলেন, “এটা মর্মান্তিক।” তিনি জানান, একের পর এক গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি। সবখানে শুধু রক্তাক্ত দেহ পড়েছিল। পার্কিং লটে সেগুলোতে লাল, হলুদ ট্যাগ লাগানো হচ্ছিল, যাতে বোঝা যায় কার দ্রুত সহায়তা দরকার এবং কার অবস্থা ততোটা খারাপ নয়।

ঘটনার সময় নিজেদের ফেইসবুক পেইজে ক্রেতাদের ‘বাইরে বেরোনোর’ এবং ‘দৌড়ে দূরে সরে যাওয়ার’ পরামর্শ ‍দিয়েছিল নৈশক্লাবটি।  

সেখানে রিকার্ডো আলমোদোভার নামের এক ব্যক্তি লেখেন, “নাচের ফ্লোরে এবং বারে থাকা লোকজন মেঝেতে শুয়ে পড়ে। আমাদের মধ্যে যারা বারের কাছে ও পেছন দিকে ছিলাম এমন কয়েকজন পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে আসতে পেরেছি, তারপর দৌড় দিয়েছি।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করা একটি ভিডিও ফুটেজে ঘটনাস্থলে জরুরি বিভাগের কয়েক ডজন গাড়ি এবং ফুটপাতে আহতদের চিকিৎসা দিতে দেখা  যায়।

এদিকে স্বজনদের খোঁজ জানতে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে উদ্বেগ নিয়ে জড়ো হয়েছেন অনেকে।

এক নারী বিবিসিকে বলেন, ক্লাবের ভিতর থেকে ফোন করার পাশাপাশি এসএমএস পাঠিয়েছিলেন তার মেয়ে, যার বাহুতে গুলি লেগেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, হামলা শুরুর পর থেকে ৪০ থেকে ৫০টি গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন তারা।

উল্লেখ্য, হামলার সময় শতাধিক ব্যক্তি ওই নৈশক্লাবে ছিলেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এই ক্লাবটিই শহরে সমকামীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় হিসেবে পরিচিত।

শুক্রবার অরল্যান্ডোর এক কনসার্টে গুলিতে ২২ বছর বয়সী পপসঙ্গীত শিল্পী ক্রিস্টিনা গ্রিমি নিহত হওয়ার একদিন না পেরোতেই নৈশক্লাবে গুলিবর্ষণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।