নারী শ্রমিকদের জন্য পাটের ন্যাপকিন
প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ০১:১৯
কলকাতার নৈহাটির পাটকলে কাজ করেন অনেক নারী শ্রমিক। এদের একটি বড় অংশই ঋতুকালীন সমস্যা আর তা থেকে সংক্রমণের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কলকাতা ঘেঁষা ঘিঞ্জি শিল্পাঞ্চলগুলিতে এ এখন নিত্যদিনের ঘটনা।
ইন্ডিয়ান জুট ইন্ডাস্ট্রিজ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের (ইজিরা) একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছিল এই তথ্য। কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, হাড়ভাঙা খাটুনির সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর জীবন, বিশেষত অজ্ঞতার কারণে ঋতুকালীন সমস্যা থেকেই সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হচ্ছেন এই নারী শ্রমিকরা। দিন এনে-দিন খাওয়া এই শ্রমিকদের কাছে স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনা বিলাসিতারই সামিল।
নিজেদের সমীক্ষার ভিত্তিতেই ইজিরা-র বিজ্ঞানীরা ২০১৪-র শেষের দিকে কম খরচে বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি এবং নারী শ্রমিকদের মধ্যে তা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ শুরু করেন। দু’বছরের মাথায় তাদের এই উদ্যোগ সফল হতে চলেছে। পাটকাঠির গুঁড়ো ও পাটের আঁশের মিশ্রণে তৈরি হয়েছে এই নতুন ধরনের স্যানিটারি ন্যাপকিন ‘সাথী’। ইতিমধ্যেই গুণমানের জন্য ন্যাশনাল টেস্ট হাউজের শংসাপত্র পেয়েছে সাথী। দামও বাজার চলতি ন্যাপকিনের অর্ধেক। এমনকী এর শোষণ ক্ষমতাও অনেক বেশি।
সম্প্রতি নৈহাটির হুকুমচাঁদ চটকলের নারী কর্মী ও শ্রমিকদের হাতে পাটজাত ন্যাপকিনের ও বাজারের অন্য ন্যাপকিনের প্যাকেট তুলে দেন ইজিরার বিজ্ঞানীরা। দু’টির তুলনা করে দেখতে বলা হয় নারীদের। দেওয়া হয় ফিডব্যাক ফর্মও। আর যারা ন্যাপকিন ব্যবহারে অভ্যস্ত নন, তাদের জন্য হয় একটি কর্মশালা। ডিসেম্বরের মধ্যে কলকাতা সংলগ্ন সব শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলিতেই এ ধরণের কর্মশালার পরিকল্পনা নিয়েছে ইজিরা।
ইজিরা-র পরিচালনা সমিতির সদস্য সমীরকুমার চন্দ্র বলেন, ‘‘পাটের উৎপাদনের তুলনায় ব্যবহার কম। কম খরচে পরিবেশবান্ধব এই ন্যাপকিন দিয়ে আমরা নারীদের স্বাস্থ্যসচেতন করতে পারি। সব কারখানায় সেজন্য আগে বিনামূল্যে ন্যাপকিন বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
বিজ্ঞানী সম্পূর্ণা চট্টোপাধ্যায় জানান, "উপকারিতার পাশাপাশি কম দাম শুনে আগ্রহী অনেকেই। নৈহাটির চটকলের মহিলা আধিকারিকেরাও এ নিয়ে সচেতন করতে চাইছেন নারী শ্রমিকদের"।
সম্পূর্ণাদেবী বলেন, ‘‘পাট থেকে যে শুধু বস্তা নয় অনেক কিছুই তৈরি করা যায়, এ তারই উদাহরণ। সরকারি প্রশংসাপত্রও পেয়েছি। এখন সব নারীরাই পাটের তৈরি ন্যাপকিনের উপর নির্ভর করতে পারবেন।’’