'বিরোধ বাড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়'
প্রকাশ | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৩:০৩
মিয়ানমারের রাখাইনে বৌদ্ধদের সঙ্গে এই মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরোধ বাড়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দুষছেন সেদেশে রোহিঙ্গাদের দমনপীড়নের ঘটনায় নীরবতার জন্য সমালোচিত অং সান সু চি।
আন্তর্জাতিক মহলের ‘নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’ এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে এক সাক্ষাৎকারে মিয়ানমারের জাতিগত জটিলতার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানান সু চি।
তিনি বলেন, "বিশ্ববাসীর এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে সেখানে সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার পর, যার জন্য মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দায়ী করেছে সরকার"।
সু চি বলেন, “আমি খুব খুশি হব যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সব সময় বড় ধরনের অসন্তোষ ছড়ানোর কারণ তৈরি না করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ার জন্য অগ্রগতি আনতে এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমাদের সহযোগিতা করে।”
পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলার বিষয়টি এড়িয়ে প্রত্যেকে যদি শুধু পরিস্থিতির নেতিবাচক দিকের প্রতি মনোযোগ দেয় তাহলে তা কোনো কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি কমিশন রাখাইন স্টেটে পৌঁছানোর পর এ বিষয়ে কথা বললেন সু চি।
রোহিঙ্গা-রাখাইন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে করণীয় বের করতে কাজ করছে আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশন, সেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধিও রয়েছে।
সু চি বলেন, “রাখাইনে শুধু রোহিঙ্গারাই সন্ত্রস্ত ও উদ্বেগে নেই। রাখাইনরাও উদ্বিগ্ন। শতাংশের হিসেবে রাখাইন জনগোষ্ঠী হিসেবে পিছিয়ে পড়া নিয়ে তাদের উদ্বেগ।”
এদিকে রাখাইনে সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবির তৎপরতা বাড়ানো হলেও জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এরইমধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখনও নৌকায় করে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসছে রোহিঙ্গারা।
তবে সু চি বলছেন, তার দেশের সরকার পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে’।
রয়টার্স জানায়, মিয়ানমারের আইনে যে ১৩৫টি নৃ গোষ্ঠীর স্বীকৃতি আছে তার মধ্যে রোহিঙ্গারা নেই। কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে এলেও দেশটির ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গার অধিকাংশকেই নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। চলাফেরার স্বাধীনতা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মতো মৌলিক অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত। বৌদ্ধদের অধিকাংশই তাদের ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী’ বিবেচনা করে বলে রয়টার্সের ভাষ্য।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন চলতি সপ্তাহে বলছে, রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে রাখাইনে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর সেখানে আলাদাভাবে বসবাস করে দুই সম্প্রদায়। সর্বশেষ গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় ৯ সীমান্ত পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে শুরু হয় সেনা অভিযান। এরপর দুইপক্ষের সহিংসতায় ৮৬ জনের মৃত্যুর খবর স্বীকার করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। নিহতদের মধ্যে ৬৯ জনকে সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদী বলেছে তারা। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নিহতের সংখ্যা আরও বেশি।
সেনা অভিযানে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং বেসামরিকদের হত্যার অভিযোগ করেছে সংগঠনগুলো। তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকার তা অস্বীকার করেছে।
ওই এলাকায় বিদেশি সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়নি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নীরব থাকায় মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সু চির সমালোচনা হচ্ছে নানা মহল থেকে। তার নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিও তোলা হয়েছে।