৫০০ কোটি রুপি খরচের বিয়ে নিয়ে তদন্ত শুরু
প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৬:১০
সাড়ে তিন বছর জেল খেটে ২০১৫ সালে ছাড়া পান ভারতের বিজেপি নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী ও খনি মাফিয়া জি জনার্দন রেড্ডি। বেআইনি খননের অভিযোগে জেলে যেতে হয়েছিল তাকে। তখন দামি গাড়ি, চপার-সহ রেড্ডি এবং তার স্ত্রীর অন্তত ৭০ কোটির স্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। আর জেল থেকে বের হবার বছরের মাথায় মেয়ের বিয়েতে ৫০০ কোটি রুপি খরচ করলেন রেড্ডি। ভারতে তীব্র নোট সংকটের মধ্যেও এত খরচ করে মেয়ের বিয়ে দেয়ার বিষয়টি হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে চারিদিকে।
খনি মাফিয়া জি জনার্দন রেড্ডি মেয়ের বিয়েতে তৈরি করেন বিলাসবহুল মণ্ডপ। নিমন্ত্রণ করেন সামনের সারির সব রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবীদের। এলাহি ব্যবস্থা ছিলো বিয়েতে। বিয়ের ছাদনাতলা থেকে গোটা বিয়ে বাড়িকে সাজানো হয়েছিল বাজিরাও মহলের আদলে। বলিউড আর্ট ডিরেক্টরদের সাহায্য নিয়েই এই ধরনের বিয়ে বাড়ি সাজিয়ে তুলেছিলেন জনার্দন। শুধু এতেই শেষ নয়, খাবারের দিক থেকে কোনো কমতি রাখেননি রেড্ডি। দেশ-বিদেশের খাবারের ভাণ্ডার ছিল গোটা বিয়ে বাড়িতে। তথ্যসূত্র অনুযায়ী, প্রায় ৫০ হাজার অতিথি নিমন্ত্রিত ছিল এই বিয়েতে। রাখা হয়েছিল সাড়ে তিন হাজারের মতো দেহরক্ষী।
তবে বিয়ের চমক শুরু হয়েছিল বিয়ের আমন্ত্রণপত্র থেকেই। এলইডি ডিসপ্লে লাগানো সোনার আস্তরণযুক্ত বিয়ের আমন্ত্রণপত্র দিয়ে প্রথমেই চমকে দিয়েছিলেন মন্ত্রী রেড্ডি। রেড্ডির মেয়ে ব্রাহ্মণীর বিয়ে হচ্ছে রাজীব রেড্ডি নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যার দক্ষিণ আফ্রিকা ও অন্যত্র হিরে ও সোনার খনি রয়েছে।
কী ভাবে আয়কর দফতরের নজর এড়িয়ে এত কিছু করলেন রেড্ডি? প্রশ্নটা তুলেছিলেন আরটিআই কর্মী এবং আইনজীবী টি নরসিংহ মূর্তি। এ নিয়ে আয়কর দফতরে অভিযোগ জানান তিনি।
গতকাল বুধবার (১৬ নভেম্বর) রেড্ডির মেয়ে ব্রাহ্মণীর বিয়ে হয় বেঙ্গালুরুর অভিজাত প্যালেস গ্রাউন্ডসে। তাতে খরচ হয় ৫০০ কোটি রুপি। মূর্তির দাবি অনুযায়ী, রেড্ডির মেয়ের বিয়ের আগে-পরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান মিলিয়ে মোট খরচ ৫০০ কোটি পেরিয়ে ছুঁয়েছে ৬৫০ কোটিতে। বিষয়টি উঠেছিল রাজ্যসভাতেও। শেষ পর্যন্ত নড়েচড়ে বসেছে আয়কর দফতরও। রেড্ডি কী ভাবে বিয়েতে এই বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করছেন, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে তারা।
নরসিংহ মূর্তির প্রশ্ন, জেল খাটা রেড্ডির মতো এমন একজন ‘দাগি অপরাধী’ নিজের মেয়ের বিয়েতে কী ভাবে ৫০০ কোটি টাকা খরচ করলেন? ওই আইনজীবীর দাবি, বিপুল পরিমাণ করের টাকা ফাঁকি দিয়েছেন খনি মাফিয়া। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় হচ্ছে দেখেও আয়কর দফতর পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন, তা জানতে চান মূর্তি।
প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দলের প্রথম সারির অনেক নেতাকেই মেয়ের বিয়েতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রেড্ডি। বাদ যাননি কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াও। তবে হইচই শুরু হতেই বিষয়টি থেকে দূরত্ব বজায় রাখার যথাসম্ভব চেষ্টা করেছে বিজেপি। বিয়েটি এড়িয়ে যান দলের প্রথম সারির নেতারা। খোঁদ নয়াদিল্লি থেকে নাকি আসে এ নির্দেশ।
এদিকে রেড্ডি জানিয়েছেন, বিয়ের ঝামেলা মিটে গেলে সকলের সামনে খরচের হিসেব আনবেন তিনি।
সূত্র: আনন্দবাজার, এনডিটিভি।