‘ক্লিনটন ফাউন্ডেশন ও আইএসের অর্থের উৎস একই’

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০১৬, ১৪:৩১

অনলাইন ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগানো বিকল্প সংবাদমাধ্যম উইকিলিকসের পরিচালক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের অভিযোগ, হিলারি ও বিল ক্লিনটনের দাতব্য প্রতিষ্ঠান ক্লিনটন ফাউন্ডেশন আর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস (ইসলামিক স্টেট) একই উৎস থেকে তহবিল পান।  কাতার ও সৌদি আরবের ধনকুবেররা এই অর্থ ঢালছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

সম্প্রতি লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে থেকে রুশ সংবাদমাধ্যম রাশিয়ান টুডে (আরটি)কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জ এ দাবি করেন। ওই সংবাদমাধ্যমের তথ্যচিত্র নির্মাতা জন পিলজার দূতাবাসেই অ্যাসাঞ্জের সাক্ষাৎকার নেন। 

আরটির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জ উইকিলিকস কর্তৃক ফাঁসকৃত হিলারির ইমেইল সিরিজের মধ্যে গত মাসে প্রকাশিত ২০১৪ সালের একটি ইমেইলের দিকে ইঙ্গিত করেন। ফাঁস হওয়া ইমেইলগুলোর মধ্যে সেটিকেই ‘সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ’ হিসেবেও অভিহিত করেন আ্যসাঞ্জ।

উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান চালিয়ে ২০১৪-র ১৭ অগাস্ট লেখা ওই ইমেইলে দেখা যায়, হিলারি সেই বারাক ওবামার প্রশাসনে কাজ করা জন পডেস্টাকে সৌদি ও কাতার প্রশাসনকে ‘চাপ’ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। ইমেইলে বলা হয়, কূটনৈতিক এবং প্রথাগত গোয়েন্দা সম্পদ ব্যবহার করে সৌদি ও কাতার সরকারকে চাপ দেওয়া উচিত, যারা আইএসআইএল ও ওই অঞ্চলের অন্যান্য জঙ্গি সুন্নি ইসলামিক গোষ্ঠীকে চোরাগোপ্তা অর্থ ও রসদ সরবরাহ করে আসছে।

ফাঁস হওয়া ইমেইল থেকে জানা যায়, সৌদি সরকার ১৯৯৭ সাল থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন প্রতিষ্ঠিত এ দাতব্য ফাউন্ডেশনে ১০ থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য দিয়েছে। গত মাসে কাতারের সরকারও বিল ক্লিনটনের জন্মদিনে ওই ফাউন্ডেশনে ১ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেয়। 

বিরোধীদের অভিযোগ, এই অর্থ হিলারির নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে হিলারির প্রচারণা শিবিরের দাবি, ফাউন্ডেশনের অর্থ নিয়ে হিলারি কখনোই জানতে চাননি। নির্বাচনী প্রচারে ওই ফাউন্ডেশনের অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে না উল্লেখ করে তারা দাবি করেন, হিলারি যে সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখন সৌদি আরব ওই ফাউন্ডেশনে কোনো অর্থ দেয়নি।

এই প্রেক্ষাপটে অ্যাসাঞ্জ জন পিলজারকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার কখনোই মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে আইএসের সখ্যের কথা স্বীকার করেনি।

অ্যাসাঞ্জ বলেন, বিপরীতে তারা দেখানোর চেষ্টা করছে- দুর্বৃত্ত কয়েকজন সৌদি রাজপুত্র তাদের তেলের খনি থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে জঙ্গিদের সাহায্য করাসহ যা ইচ্ছা তাই করে আসছে; যেখানে দেশগুলোর সরকারের কোনো সমর্থন নেই।

এরপর পিলজার অ্যাসাঞ্জের কাছে প্রশ্ন রাখেন, সেক্ষেত্রে কি মনে করেন যে যাদের অর্থে আইএস গঠিত হয়েছে, তারাই ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অর্থ জোগাচ্ছে? এর হ্যাঁসূচক উত্তর দেন অ্যাসাঞ্জ। তিনি আরও জানান, হিলারি সংক্রান্ত ফাঁসকৃত ইমেইলে সৌতি আরবের সঙ্গে ৮০ বিলিয়ন ডলারের সর্ববৃহ্যৎ অস্ত্রচুক্তি-বিষয়ক আলোচনার তথ্য উঠে এসেছে।

হিলারি সংক্রান্ত বিভিন্ন ইমেইল ফাঁসের মধ্য দিয়ে মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছে ইউকিলিকস। 

তবুও দুনিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রের জনবিরোধী গোপন তথ্য ফাঁস করা অ্যাসাঞ্জ মনে করছেন, সবকিছুর পরও হিলারিই প্রেসিডেন্ট হবেন।

ডেমোক্র্যাট শিবিরের অভিযোগ, উইকিলিকসের ফাঁস করা নথির সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগ রয়েছে এবং হিলারি ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারিয়ে দিতেই সেগুলো ফাঁস করা হয়। তবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অ্যাসাঞ্জ।

আরটি’র সঙ্গের সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জের কাছে উইকিলিকস কর্তৃক হিলারির ইমেইল ফাঁসে রুশ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে  চাওয়া হলে তিনি বলেন,  আমার বিশ্লেষণ অনুযায়ী ট্রাম্পকে জিততে দেওয়া হবে না। কেন এটা বলছি? কেননা সামগ্রিক মার্কিন এস্টাবলিশমেন্টের কোনও অংশই তার সঙ্গে নেই। ইভানজিলিক্যালস ছাড়া (যদি আদৌ তাকে এস্টাবলিশমেন্ট বিবেচনা করা হয়) আর কোনও এস্টাবলিশমেন্ট তার সঙ্গে নেই।

পিলজারের সঙ্গের সাক্ষাৎকারে হিলারির জয়ের সম্ভাব্যতার ব্যাপারে অ্যাসাঞ্জ আরও বলেন, ব্যাংক, গোয়েন্দা সংস্থা, অস্ত্র ব্যবসার কোম্পানিগুলো, কিংবা বিদেশি তহবিল সব একত্রিত হয়ে হিলারির পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনকী মিডিয়াও তাই। মালিক-সাংবাদিক সবাই হিলারির সঙ্গে আছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জ সুইডেনে হস্তান্তর এড়াতে ২০১২ সাল থেকেই লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়ে আছেন। গোপনতথ্য ফাঁসের অভিযোগে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। দেশটিতে উইকিলিকসের কার্যক্রম নিয়ে একটি অপরাধ তদন্তও চলমান।

সম্প্রতি হিলারির নির্বাচনী প্রচার শিবিরের চেয়ারম্যান জন পডেস্টারের কয়েক হাজার ইমেইল ফাঁস হয়। তাতে গোল্ডম্যান সাকসকে অর্থের বিনিময়ে দেওয়া হিলারির বেশ কয়েকটি বক্তব্য এবং মধ্যপ্রাচ্য ও চীন-রাশিয়াকে নিয়ে তার আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশিত হয়। আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ফাঁস হওয়া জন পডেস্টার ইমেইল সিরিজ হিলারির জনপ্রিয়তায় ধস নামিয়েছে। এর আগে ট্রাম্পের তুলনায় অনেকদূর এগিয়ে ছিলেন এ ডেমোক্র্যাট প্রার্থী । 

অপরদিকে এবিষয়গুলো নিয়ে রাশিয়ার যোগসাজশে অ্যাসাঞ্জ ট্রাম্পকে জেতাতে ডেমক্রেট প্রার্থীর বিপক্ষে ষড়যন্ত্রে জড়িত বলে হিলারির প্রচার শিবির বেশ কয়েকমাস ধরে দাবি করে আসছে।