যে চিঠি কাঁপিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানকে
প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২০:৫৭
গত ২৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ রয়েছেন পাকিস্তানের স্বাধীনতাকামী বেলুচিস্তানের অধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত সমাজকর্মী ও প্রকাশক ওয়াহিদ বেলুচ। নিখোঁজ বাবার জন্য একটি আবেগঘন খোলা চিঠি লিখেছে তার স্কুলপড়ুয়া কন্যা। এক ছোট্ট মেয়ের ওই চিঠির আবেগ ছুঁয়ে গেছে মিডিয়াপাড়ার কর্মীদেরও, কাঁপিয়ে দিয়েছে পুরো পাকিস্তানকে।
সেই খোলা চিঠিটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
পাপা প্রতি রোববার (ছুটির দিন) আমাকে বই কিনতে রেগাল চকে নিয়ে যেতো।
সেজন্য আমি প্রতি রোববার সকালে ঘুম থেকে উঠি। উঠেই বাবার জন্য অপেক্ষা করি, তার সঙ্গে রেগাল চকে যাবো বলে...কিন্তু বাবা ডাকে না...পরের রোববারও আমি সকালে জেগে বাবার জন্য অপেক্ষা করি...কিন্তু বাবাকে খুঁজে পাই না...!
পাপা, ২৬ জুলাই থেকে অনেক রোববার পেরিয়ে গেলো। কিন্তু তোমাকে দেখি না...তুমি নেই এটা আমি ভাবতে পারি না পাপা...!
আমি কখনোই কারও এতো বেশি শূন্যতা অনুভব করিনি... কাউকে এতো বেশি মনেও পড়েনি! পাপা, তোমার জন্য খুব দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে...আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি... এটা অসহ্য! তুমি কি বোঝো তোমাকে ছাড়া প্রতিটা মিনিট কতোটা কষ্টের? তোমাকে কতোটা দরকার আমার?
আমার কাঁধে তোমার হাতের শূন্যতা অনুভব করছি পাপা। ভয়ে বা দুর্বলতায় তোমা সাহস যোগনো হাতের শূন্যতা অনুভব করছি। পাপা, তোমার স্নেহের দু’টো হাত আমার খুব দরকার। আমি প্রার্থনা করি এই দু’হাত সবসময়ই আমার সঙ্গে থাকবে, কারণ তুমিই আমার শক্তি, আমার সাহস!
কিন্তু তুমি নিখোঁজ পাপা !
পাপা, আমি খুব দুঃখিত। তুমি আমার জন্য এতোকিছু করেছো...তার জন্য কখনোই ধন্যবাদ বলিনি।
আমার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ পরামর্শক এবং শ্রেষ্ঠ বন্ধু হওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ পাপা। জানি হয়তো আমি তোমার লক্ষ্মী মেয়ে ছিলাম না...কিন্তু তুমি সবসময় শ্রেষ্ঠ বাবা...!
মনে পড়ে, যখন আমি ছোট্ট ছিলাম, একবার শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। তোমার ভালোবাসা ও সেবায় আমি সহসাই সুস্থ হয়ে যাই। আজ আমাকে তোমার দরকার, কিন্তু আমি অসহায়। আমার চোখে ভাসে যেন তুমি কোনো অজ্ঞাতস্থানে ভীত পড়ে আছো। কিন্তু আমি তোমাকে পাচ্ছি না। আমি তোমাকে উদ্ধার করতে পারছি না। তোমাকে সাহায্য করার মতো কিছুই করতে পারছি না পাপা, আমি দুঃখিত। আমি অসহায়।
আগে যখন আমি কাঁদতাম, তুমি আমার অশ্রু মুছে দিতে...এখন তুমি কোথায় পাপা?
আমি মামাকেও (মা) কাঁদতে দেখি। তোমার ছোট্ট মিষ্টি মেয়ে মাইকান স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। শত কোটি উপায়ে আমি চোখ বন্ধ করে তোমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। পাপা, তুমি পুরো বিশ্বের সেরা বাবাদেরও সেরা। আমি দুঃখিত। তোমাকে সাহায্য করতে পারছি না পাপা, আমি দুঃখিত।
পাপা, আমি জানি তোমার আকাশের মতো একটা বিশাল হৃদয় আছে এবং সেই হৃদয়েরই বিশালতায় যারা এখন তোমার সঙ্গে এই অমানবিক আচরণ করছে তাদের ক্ষমা করে দেবে। ক্ষমা করে দেবে তাদেরও যারা তোমার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে তোমার সঙ্গে অসদাচরণ করেছে। আমাকে ক্ষমা করো পাপা, কারণ আমি যে আমাকেই ক্ষমা করতে পারছি না।
আমি তোমার যন্ত্রণা অনুভব করছি। তোমাকে নিরাপদে ফিরে পেতে আমি এখন সব কিছু করতে পারি। আমি যদি তোমাকে পাই, তবে কখনো আর হারাতে দেবো না পাপা।
পাপা, আমার এখনও মনে হয় তুমি আমাকে দেখছো। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কী করবো! আমি একা। তোমাকে মনে পড়ছে খুব পাপা। আমি দুঃখিত!
পাপা, এখন হয়তো সবার মনে পড়ছে তোমাকে, কিন্তু শূন্যতা যে খুব যন্ত্রণার!
তুমি আমাকে সবকিছুই শিখিয়েছো, কিন্তু তোমাকে ছাড়া কীভাবে বাঁচবো তা শেখাওনি। যখন আমার আঙুল কেটে গেলো...যখন একরাতে আমার প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করছিলো...তুমি সারারাত জেগেছিলে আমার শিয়রে...সেই সেবা-শশ্রুষার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা। কিন্তু এই দুঃসময়ে তোমাকে ছাড়া কীভাবে বাঁচি পাপা?
আমার সব দুঃখ-কষ্ট এক নিমিষে নিয়ে যাওয়া পাপা তুমি কোথায়?... বড় একা। আমি জানি না, তোমাকে কীভাবে খুঁজে পাবো!
আমি পৃথিবীর সবচেয়ে হতভাগ্য মেয়ে, কারণ আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারছি না পাপা। তুমি আমাকে সবসময় তোমার বীর রাজকন্যা বলো...কিন্তু আমি তোমার বীর মেয়ে হতে পারিনি। তুমি সেই বাবা যে তার কন্যাকে দুনিয়ার সব ভালোবাসা ও স্নেহ দিয়ে বড় করেছো... কিন্তু তোমার হানি আজ এক অপদার্থ মেয়ে। সে আজ তোমার জন্য কিছুই করতে পারছে না!
পাপা, আমাকে ক্ষমা করো...