জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের দাবি

আইএস-এর কাছে অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন হিলারি (ভিডিও)

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০১৬, ১৯:০২

অনলাইন ডেস্ক

সারা বিশ্বের শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস)। সিরিয়া, ইরাকে কথিত খেলাফত কায়েমের চেষ্টারত সংগঠনটি আক্রমণ চালাচ্ছে ইউরোপ-এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে। নৃশংসতার জন্য এরই মধ্যে কুখ্যাত হয়ে উঠেছে সংগঠনটি।

প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্বের পরাশক্তিগুলো যখন জঙ্গিদের নির্মূলের চেষ্টায় প্রকাশ্য অভিযানে, তখন তারা এত শক্তি, অর্থ, অস্ত্র কোথায় পায়! এর একটি জবাব পাওয়া গেলো গোপন তথ্য ফাঁসের জন্য বিখ্যাত ওয়েবসাইট উইকিলিকসে। তাদের দাবি, জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।   

উইকিলিকস দাবি করেছে, তাদের কাছে এমন কিছু নতুন দলিল-প্রমাণ এসেছে যা থেকে বোঝা যায় সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন নিজেই আইএস ও আলকায়দার কাছে অস্ত্র বিক্রির নির্দেশ দিয়েছেন। উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জ এই দাবি করেছেন বলে জানিয়েছে ডেইলি সান। 

উইকিলিকস জানিয়েছে, তাদের হাতে প্রমাণ রয়েছে সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই আইএস-আলকায়দাসহ ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অস্ত্র কবে সরবরাহ করা হয়েছে, কী পরিমাণ অস্ত্র দেওয়া হয়েছে, টাকার বিনিময়ে, নাকি বিনামূল্যে এসব অস্ত্র দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সানের প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি। 

দি পলিটিক্যাল ইনসাইডার ডট কমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন হিলারি যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত অস্ত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে বিক্রি করেছিলেন। তিনি লিবিয়ার বিদ্রোহীদের কাছেও অস্ত্র বিক্রির নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে গাদ্দাফির পতন ঘটে। এরপর হিলারি এই অস্ত্র সিরিয়ায় পাঠানোর নির্দেশ দেন যাতে বাশার আসাদ সরকারের পতন ঘটানো যায়। 

‘ফ্রেন্ডস অব সিরিয়া’ বা ‘সিরিয়ার কথিত মিত্রদের জোট’ গড়ার কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন হিলারি যাতে সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের কাজে সহায়তা দিতে পারে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। কিন্তু হিলারি ২০১৩ সালে লিবিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হত্যার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে লিবিয়ার বিদ্রোহীদের কাছে অস্ত্র বিক্রির কথা অস্বীকার করেছিলেন।

ডেমোক্র্যাসি নাও-কে দেওয়া স্বাক্ষাৎকারে অ্যাসেঞ্জ বলেন, হিলারির ফাঁস হওয়া এক হাজার ৭০০ ইমেইল এটাই প্রমাণ করে যে তার সঙ্গে সরাসরি সিরিয়ার বিদ্রোহী, আল কায়দা এবং আইএসের সম্পর্ক রয়েছে। সানের এই প্রতিবেদনে হিলারির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে নানা সময় জঙ্গিদেরকে সহযোগিতার অভিযোগ উঠার পর দায় অস্বীকার করেছেন তিনি।

আর কেবল হিলারি নয়, এর আগেও ইসলামি জঙ্গিদেরকে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দেয়ার বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। আফগানিস্তানে তালেবান প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের পরাশক্তি এই দেশটির ভূমিকা এখন প্রমাণিত। অবশ্য পরে তালেবান দমনে আফগানিস্তানে সৈন্যও পাঠিয়েছে তারা। সেনা অভিযানে তালেবান কখনও কখনও দুর্বল হলেও পরে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। তাদেরও অস্ত্রের যোগান একটি বড় প্রশ্ন হয়ে রয়েছে বিশ্বের কাছে। 

আইএস দমনের জন্য সিরিয়া, ইরাকেও নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের সঙ্গে রয়েছে ফ্রান্স, জার্মানিসহ বেশ কিছু পশ্চিমা উন্নত রাষ্ট্র। তবে আইএস বিরোধি অভিযানে থাকা রাশিয়ার সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্বও তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, রাশিয়া যেভাবে আইএস দমনের চেষ্টা করছে সেটা হিতে বিপরীত হচ্ছে। যদিও রাশিয়ার অভিযানেই সিরিয়ায় আইএসের শক্তি সীমিত হচ্ছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। 

সিরিয়ার শহর রাকায় আইএসের কথিত খিলাফতের রাজধানী। পরাশক্তিদের অভিযান সত্ত্বেও এর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে আইএস। ইরাকেও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় দেশটির সেনাবাহিনী আইএসবিরোধী বড়সড় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী আগাতে পারছে না বলে প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। 

ফালুজার একটি অংশ মুক্ত করলেও রাজধানী বাগদাদের একটি অংশ, কিরকুর, বাইজিদসহ আইএস জঙ্গিরা বিরাট এলাকা এখনও দখল করে রেখেছে। সেনারা অবরোধ করে রাখলেও তাদের অস্ত্র আর গোলাবারুদের যোগান বন্ধ হয়নি বলেই ধারণা করা হচ্ছে।