অভাবে সন্তান বিক্রি করছেন আফগান নারীরা

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:৩৫

জাগরণীয়া ডেস্ক
মামারিন ও তার মেয়ে আকিলা। ছবি সিএনএন

আফগানিস্তানে তীব্র খরার কারণে অর্থনৈতিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করায় সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বাবা-মায়েরা।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি শহরে টানা চার বছর ধরে নেই বৃষ্টির দেখা। জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব পড়েছে স্থানীয় কৃষিতে। ২০১৭ সালে আফিমের উৎপাদন রেকর্ড মাত্রায় হলেও এই বছরে তা কমে গেছে এক-তৃতীয়াংশ। তীব্র খরায় কৃষিখাত চরম সংকটে পড়েছে। 

পশ্চিমাঞ্চলের হেরাট শহরের বাইরে একটি শরণার্থী শিবিরে অনেকের মধ্যে একজন মামারিন। মামারিন জানান, যুদ্ধে তিনি স্বামী হারিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তীব্র খাদ্য সংকটে পড়ে তিন সন্তানকে নিয়ে চলে এসেছেন শরণার্থী শিবিরে সহযোগিতার আশায়। কিন্তুই কিছুই পাননি তিনি। অভাবে পড়ে ৬ বছরের মেয়ে সন্তান আকিলাকে ৩ হাজার ডলারের বিনিময়ে নাজিমুদ্দিন নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।

মামারিন সিএনএনকে বলেন,বাকি সন্তানদের নিয়ে টিকে থাকতে আকিলাকে বিক্রি করে দিই ৩ হাজার ডলারে। যদিও আমি পেয়েছি মাত্র ৭০ ডলার। আমার কোনও টাকা নেই, খাবার নেই, স্বামীও নেই।

মেয়ে আকিলা কি জানে যে তাকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মামারিন জানান, না, সে জানে না। কীভাবে জানবে? সে তো এখনও শিশু। কিন্তু আমার আর কোনও উপায় ছিল না। বাধ্য না হলে কি কেউ তার নাড়ির টুকরোকে বিক্রি করে?

আকিলাকে কেনা নাজমুদ্দিন অবশ্য বিষয়টিকে দয়া হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেন, আকিলার পরিবার গরীব এবং ক্ষুধার্ত। আমি নিজেও গরিব। ধীরে ধীরে পুরো টাকাটা তাদের দিয়ে দিব।

শিশু বিক্রির এই ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। খরার প্রকোপে থাকা পুরো পশ্চিম আফগানিস্তান জুড়ে এমন ঘটনা ঘটেই চলছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

জাতিসংঘের মতে, ২০১৮ সালে তীব্র খরার কারণে আফগানিস্তানে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন অন্তত দুই লাখ ৭৫ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাট থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৮৪ হাজার এবং বাদঘিছ এলাকার এক লাখ ৮২ হাজার। এই বছর দেশটিতে চলমান সহিংসতাতেও এত মানুষ বাস্তুচ্যুত হননি বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে। 

তথ্যসূত্র: সিএনএন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত