ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রীকে খুশী করতে...
প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৩৭
ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রী। চিকিৎসার কারণে চুল প্রায় উঠে গেছে। এবার স্ত্রীকে অভয় দিতে নিজের চুল ফেলে ন্যাড়া হলে স্বামী। শুধু তাই নয় ছবি তোলে স্বামী-স্ত্রীর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করলেন স্বামী।
ভালোবাসার এমনই অভাবনীয় ঘটনা ঘটিয়েছেন ভারতের কেরালার বাসিন্দা শান ইব্রাহিম বাদশাহ তার অসুস্থ স্ত্রী শ্রুতির জন্য।
ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য লজিক্যাল ইন্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে শান ইব্রাহিম জানান, ২০১৪ সালে কলেজের ওনাম উৎসবে দেখা হয়েছিল দুজনের। কলেজের বন্ধু-বান্ধবদের ডেকে এক তরুণী শানকে দেখিয়ে একটা চ্যালেঞ্জ ছোঁড়েন, উৎসব উপলক্ষে কানে জবা ফুল গুঁজে বারান্দা দিয়ে হেঁটে যেতে হবে শানকে। চ্যালেঞ্জটা লুফে নিয়েছিলেন শান, কিন্তু পাল্টা একটা চ্যালেঞ্জও তিনি ছুঁড়ে দেন, আমি এটা করতে পারি একটা শর্তেই, যদি কলেজেরই কোনো মেয়ে আমার হাত ধরে হাঁটে! সেদিন হাত ধরেছিলেন শ্রুতি। সেই থেকে পরিচয় এবং প্রেম।
যেদেশে দুই ভিন্ন জাতে বিয়ে করার জন্য অহরহ অনার কিলিং হয় সেখানে তারা দুই ভিন্ন ধর্মের অনুসারী প্রেম করছেন। স্বাভাবিকভাবেই সম্পর্কের খবর জানাজানি হওয়ার পর শুরু হয় দ্বন্দ্ব। শ্রুতির পরিবার সাফ না করে দিলেন শানকে। মেয়ের পড়াশুনাও বন্ধ করতে উদ্যত হলেন। শান অনেক বুঝিয়ে শ্রুতির পড়াশুনাটা শেষ করালেন। এবার শুরু হলো শ্রুতির জন্য পাত্র খোঁজা। বেঁকে বসলেন শ্রুতি, বিয়ে করতে চান শানকে। এইদকে, শানের পরিবার অনড়, বিয়ে করতে হলে শ্রুতিকে ধর্মান্তরিত হতে হবে। অবশেষে ২০১৭ সালে স্পেশাল ম্যারেজ এক্টে বিয়ে করলেন শান-শ্রুতি। চাকুরী নিয়ে শান চলে আসেন হায়দ্রাবাদে। শুরু করেন ‘হ্যাপি জার্নি’। কিন্তু দুজনের জন্য আরও যুদ্ধ বাকী ছিল।
হঠাৎ এক দিন শ্রুতি লক্ষ্য করেন তার ঘাড়ের এক দিকটা ফুলে উঠেছে। প্রথমে খুব একটা আমলে নেননি। কিন্তু কিছু দিন যেতেই ঘাড়ের অন্য পাশটাও ফুলে উঠতে শুরু করে।
চিকিৎসকরা জানান, শ্রুতির যক্ষ্মা হয়েছে। চিকিৎসা শুরু হয় কিন্তু উন্নতি নেই। ব্যথায় ক্রমশ কুঁকড়ে যেতে থাকলেন শ্রুতি।
চলতি বছরের জুন মাসে কোচিতে চিকিৎসার জন্য য়ানা হয় শ্রুতিকে। রিপোর্ট জানায়, লিম্ফোমায় আক্রান্ত শ্রুতি। ক্যান্সারের স্টেজ ফোর। চিকিৎসকদের কাছ থেকে খবরটা জেনে মুষড়ে পড়েছিলেন শান। কিন্তু সেই আঁচ লাগতে দেননি স্ত্রী শ্রুতির মনে। অভয় দিয়ে গেছেন প্রতি মুহূর্তে। শ্রুতিও জানেন মৃত্যু দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে। কিন্তু শানকে তিনিও তা বুঝতে দেননি। চিকিৎসার কারণে ঝরে পড়েছে সব চুল শ্রুতির। যে চুলে ফুল গুঁজে একদিন কলেজের বারান্দায় হেঁটেছিলেন শান। শ্রুতিকে আনন্দে রাখতে সেই চুলও বিসর্জন দিলেন।