সুচিকে আর সহযোগিতা করবেন না মাহাথির
প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:৪৪
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির বিতর্কিত অবস্থানের জন্য সু চির পাশে আর থাকবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।
জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইড লাইনে ইস্তাম্বুল ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির আচরণ আমার বিশ্বাসকে নষ্ট করেছে। রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী যে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে কিছুই বলতে চাচ্ছেন না সু চি। আমরা আর সু চিকে কোনধরণের সাহায্য করবো না। বিতর্কিত এ অবস্থানের কারণেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানালেন মাহাথির মোহাম্মদ।
মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, তিনি খুব হতাশ যে, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তার লেখা চিঠির জবাবও দেন নি সুচি। ওই চিঠিতে গৃহবন্দীদের মুক্তি বিষয়েও কাজ করার কথা জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমরা রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের কাছে অভিযোগ করেছি। এছাড়াও বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে দেশে আশ্রয় দিয়েছি আমরা।
এর আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩ তম অধিবেশনে দেয়া বক্তৃতায় মাহাথির মোহাম্মদ রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমার সরকার এবং সুচিকে তিরস্কার করেন। এছাড়াও তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে গোটা বিশ্ব কেনো চুপ রয়েছে সে প্রশ্নও তোলেন।
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনী পরিকল্পিত সহিংসতা চালানোর আলামত খুঁজে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ব্যাপক হারে হত্যা ও ধর্ষণে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত সহিংসতা চালানোর যথেষ্ঠ প্রমাণ তাদের হাতে আছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা ইস্যুর যথাযথ সমাধান না করায় চলতি সপ্তাহে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির সম্মানসূচক নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছে কানাডা সরকার।
এদিকে, জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকটটি বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু রোহিঙ্গা সমস্যার উদ্ভব হয়েছে মিয়ানমারে তাই, এর সমাধানও হতে হবে মিয়ানমারে। জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের যে চুক্তি হয়েছে আমরা তারও আশু বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা দেখতে চাই। আমরা দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে আশ্রয় প্রদান করেছে, যারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশ সাধ্যমত তাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, নিরাপত্তা এবং শিশুদের যত্নের ব্যবস্থা করেছে।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় প্রথম থেকেই আমরা তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার-এর মধ্যে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে, মিয়ানমার মৌখিকভাবে সব সময়ই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলে অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে তারা কোন কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না -বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী বিপুল সংখ্যক নিপীড়িত ও রোহিঙ্গার মত নিজ গৃহ থেকে বিতাড়িত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আমার হৃদয়কে ব্যথিত করে। এ জাতীয় ঘটনাকে অগ্রাহ্য করে শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য ও টেকসই সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।