কাজের ফাঁকে বিশ্রামের অধিকার পেলেন কেরালার নারীকর্মীরা
প্রকাশ | ২৪ জুলাই ২০১৮, ১৭:৩০
কাজের ফাঁকে একটু ‘বসার অধিকার’ এর জন্য লড়াই করে অবশেষে জয়ী হয়েছেন ভারতের কেরালা রাজ্যের নারী শ্রমিকরা। খবর বিবিসি এর।
কেরালা রাজ্যে যেসব নারী শ্রমিক কাপড়, গহনা কিংবা খুচরো বিক্রেতার দোকানে কাজ করেন তারা ভয়াবহ এক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করতে বলা হয় তাদের। নেই কোন বসার সুযোগ। নেই টয়লেটে যাওয়া অথবা সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে তারা যদি দেয়ালে হেলান দিতে চান তাতেও মালিকরা ক্ষুব্ধ হন। আর এর মধ্যে কোন নিয়ম কানুন ভঙ্গ করা হলে তাদের বেতন থেকে অর্থ কেটে নেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে নারী শ্রমিক মায়া দেবী বলেন, বহু বছর ধরে কাজ করছেন একটি কাপড়ের দোকানে। তার কাজ ছিল ক্রেতারা শাড়িসহ যেসব কাপড় দেখতে চায় সেগুলো নামিয়ে তাদের সামনে তুলে ধরা। কিন্তু তার কাজের পুরো এই সময়টাতে তিনি কখনো বসতে পারতেন না। এমনকি দোকানে যখন কোন খদ্দের থাকতো না, তখনও আমাদের বসার অনুমতি ছিল না।
দিনের পর দিন এসব নিয়ম এতই কঠোর হয়ে উঠে তারা শেষ পর্যন্ত ‘বসার অধিকার’ পেতে আন্দোলনে নামেন। কেরালা রাজ্যের নারীদের একটি ইউনিয়ন সম্প্রতি সরকারের কাছে তাদের দাবি দাওয়া পেশ করেন।
পার্শ্ববর্তী কর্নাটকা রাজ্যে ট্রেড ইউনিয়নের একজন নেত্রী মৈত্রেয়ী বলেন, অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন যে এটা নিয়ে আইন করার কী আছে। কাজের সময় একজন শ্রমিক বসবেন, টয়লেটে যাবেন, পানি খাবেন- এসব তো স্বাভাবিক বিষয়। অথচ এই স্বাভাবিক অধিকারটুকুই আসলে নেই। আর এরকম যে শুধু কেরালাতেই হয় তা কিন্তু না। অন্যান্য রাজ্যের পরিস্থিতিও এই একই রকমের।
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যেসব শ্রমিক কাজ করেন তাদের একটা বড় অংশ নারী। কিন্তু তাদের অধিকার রক্ষার জন্যে সেরকম সুনির্দিষ্ট কোন আইন নেই ভারতে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বীমা কিম্বা পেনশনের মতো কোন বেনেফিট তিনি কখনো পান নি। মজুরি বাড়ানো এবং কিছু বেনেফিট নিশ্চিত করার জন্যে সহকর্মীদের নিয়ে একটি ইউনিয়ন গড়ে তোলার চেষ্টা করলে ২০১৪ সালে তার চাকরি চলে যায়।
এ সংক্রান্ত একটি পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে যতো শ্রমিক কাজ করছেন তাদের মাত্র ৭ শতাংশ হয়তো সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শ্রম দপ্তরের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানান, এই আন্দোলনের মুখে আমরা নতুন আইন তৈরি করেছি যেখানে নারী শ্রমিকদেরকে বসতে দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সাথে তাদেরকে টয়লেটে যেতেও পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আইনের ভঙ্গের অভিযোগ এলে দোকান মালিককে জরিমানাও করা হতে পারে।