বিনা দোষে জেলে: ২০ বছর পর পাক নারীর মুক্তি
প্রকাশ | ২৭ মে ২০১৮, ০০:৩৬ | আপডেট: ২৭ মে ২০১৮, ০০:৫৭
নিজের বাবা-মা ও ভাইকে খুন করেছেন এই অপবাদে ২০ বছর জেলে ছিলেন পাকিস্তানের করাচির আসমা নওয়াব (৩৬)। প্রায় দুই দশক পরে গত ৭ এপ্রিল ২০১৮ তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং জেল থেকে ছাড়া পান। খবর আল জাজিরার।
১৯৯৮ সালে নিজ বাড়িতে এক ডাকাতির ঘটনায় আসমা মা, বাবা ও ভাই খুন হন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। আর তাতেই তার উপর এসে পড়ে পরিবারকে খুন করার অভিযোগ। মাত্র ১২ দিনের শুনানিতে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়। তারপর তিনি এই আদেশের বিপরীতে আপিল করেন। কিন্তু আপিলের নানা নিয়মে আটকে ফাইলটি আটকে থাকে ১৭ বছর। ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি কার্যতালিকায় উঠে এবং ৩ বছর শুনানি হয় এবং যথোপযুক্ত প্রমাণের অভাবে আদালত আসমাকে নির্দোষ দাবি করে এবং তাকে মুক্তি দেয়। প্রায় ২০ বছর পর জেল থেকে ছাড়া পান আসমা।
শুধু আসমা একা নয়, পাকিস্তানের আপিল বিভাগে দীর্ঘ জটিলতায় আটকে আছে অসংখ্য মামলা। পাকিস্তানের মানবাধিকার সংস্থার মতে, শুধুমাত্র ২০১৭ সালে ৩৮ হাজারেরও বেশি মামলার কার্যক্রম সুপ্রীম কোর্টে আটকে আছে বলে জানা গেছে।
আসমা নওয়াব মুক্তির পর তিনি বহু কষ্টে নিজের বাড়িটি খুঁজে পান যা ইতিমধ্যে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। সেখানে এখনও ঝুলছে ১৯৯৮ সালের ক্যালেন্ডার। কিছু পুরনো ছবি ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই বাসায়। এ প্রসঙ্গে আসমা বলেন, আমি সবাইকে হারিয়েছি। এখন আমার কাছে কিছুই নেই। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় আজ আমি নিঃস্ব। তিনি আরও বলেন, একে তো আমি নারী, তার উপর গরীব।পুরুষ শাসিত সমাজে নারীদের বাধা আরও বেশি। তাই বিচারে চলে দীর্ঘসূত্রিতা। অপরদিকে, পুলিশরা দুর্নীতি করে ধনাঢ্যদের ঠিকই পালানোর রাস্তা করে দেয়।
তিনি জানান, আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আজ থেকে যত নারী বিনাদোষে বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতায় আটকে আছেন তাদের জন্য লড়াই করবো। আমি আবার পড়াশুনা করবো এবং একটি চাকরি করবো। আর যেসব নারীদের আওয়াজ কেউ শুনে না, তাদের জন্য কাজ করবো। আমি তাদের মামলায় তাদেরকে সাহায্য করবো।
আসমার আইনজীবি জাভেদ ছত্রী বলেন, যদিও সে নির্দোষ, তবুও সমাজ তাকে সহজে গ্রহণ করবে না। তার ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে কিন্তু কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে।
এ প্রসঙ্গে নারী অধিকারকর্মী ও আইনজীবি বেনজীর জাতই বলেন, বৈষম্যযুক্ত এ সমাজে বিচার ব্যবস্থা ধনীদের ঠিকই পার পাওয়ার রাস্তা ঠিকই করে দেয়, কিন্তু গরীবদের জন্য তা চরম ভোগান্তিকর।