রাখাইনে ৫ গণকবরের সন্ধান
প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:৩৪
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অনেক রোহিঙ্গাকে হত্যা করে পাঁচটি স্থানে গণকবর দেওয়া হয়েছে। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের সময় এসব হত্যাকাণ্ড ও গণকবর দেওয়ার ঘটনা ঘটে। বার্তা সংস্থা এপির নিজস্ব অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিবেদন ১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থাটি।
এদিকে, গণকবরের খবর গণহত্যার আলামত বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তিনি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
বৃহস্পতিবার মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, স্যাটেলাইট চিত্র এবং রোহিঙ্গাদের ভাষ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইনের গু দার পিন গ্রামে অন্তত পাঁচটি গণকবরের সন্ধান মিলেছে। গ্রামটির উত্তর দিকে তিনটি বড় গণকবর আর গ্রামের কাছে পাহাড়ের পাশে দুটি গণকবর রয়েছে। সেখানে অন্তত ৪৩০ জন মানুষকে হত্যার পর কবর দেওয়া হয়।
রোহিঙ্গা এক যুবক (৩০) বলেন, সেনারা অনেককে নদীতে ফেলে মারে, অনেককে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়। এসিডে দগ্ধ করা হয় অনেকের শরীর। কমপক্ষে চারশ মানুষকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে ২০ শিশু ছিল।
গ্রামের একটি স্কুলে মিয়ানমারের ২০০ সেনা ঘাঁটি গেড়েছিল। হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য সেনারা শুধুই রাইফেল, ছুরি, গ্রেনেড ও রকেট লঞ্চারই আনেনি; সঙ্গে এসিডও নিয়ে এসেছিল।
এক প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গা বর্ণনা দেন, ফুটবল মাঠে বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়েছিল মিয়ানমারের সেনারা। নিহতদের চেহারা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল, মুখের একটি অংশ ছিল এসিডে দগ্ধ এবং বুলেটবিদ্ধ। গণকবরগুলোতে শুধু মানুষের হাড্ডি আছে। অনেকে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছেন। এসিডেও ঝলসে দেওয়া হয় বহুজনকে।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামটিতে কাউকে প্রবেশ করতে দেয় না মিয়ানমার সরকার। তাই নিশ্চিত হওয়া যায়নি, কতজন মারা গেছেন। তবে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার কিছু ভিডিও তারা পেয়েছে।
এদিকে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণকবরের প্রকাশিত খবর গণহত্যার আলামত বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। রাখাইনের সংঘাতপ্রবণ এলাকায়, বিশেষ করে বুথিডং ও মংডুতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ অবাধ করতে আহ্বান জানান তিনি।
ইয়াংহি লি বলেন, ‘আমরা তুলাতলি হত্যাযজ্ঞের কথাও জেনেছি। সেখানেও গণকবর পাওয়া গেছে। এবার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাও গণহত্যারই চিহ্ন। গণহত্যার খবর অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা উচিত।’
এদিকে, মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চির বাড়িতে বৃহস্পতিবার পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। তবে হামলার সময় সু চি বাড়িতে ছিলেন না।