স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি চান যে দম্পতি
প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০১৮, ০১:৪৬
‘‘আমাদের হার্ট এখনো ভালো আছে, এগুলো পরে নষ্ট না করে কাউকে দিয়ে দেয়া কি ভালো না? আমাদের জোর করে বাঁচিয়ে রাখাই হবে অপরাধ। সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি আমাদের নিজেদের জন্যও আমাদের বেঁচে থাকার দরকার নেই। আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে অর্থ ও সম্পদ নষ্ট করারও কোন কারণ নেই।”
এভাবেই এক ভারতীয় বৃদ্ধ দম্পতি রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ’র কাছে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর অনমুতি চেয়ে আবেদন করেছেন। মুম্বাইয়ের দম্পতি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ইরাবতি লাভাতে (৭৮) এবং অবসরপ্রাপ্ত পরিবহন কর্মকর্তা নারায়ণ লাভাতে (৮৭) গত ২১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে এই আবেদ জানান।
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেস জানায়, নিরিবিলি পরিবেশে একটি কক্ষে বসবাস করেন এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। তাদের কক্ষে সঙ্গেই একটি রান্না ঘর এবং একটি টয়লেট আছে। তাদের ঘরে দুটি বিছানা, একটি টেলিভিশন, দেয়ালে যুক্ত কাঠের সেল্ফভর্তি বই।
তবে সম্প্রতি তাদের কাছে দর্শণার্থী ও ফোন কলের সংখ্যা লক্ষ্যনীয়ভাবে বেড়েছে। এর বেশিরভাগই অবশ্য গণমাধ্যমকর্মীদের। তারা কেন ‘স্বেচ্ছায় মৃত্যুর’ পথ বেছে নিয়েছেন তা জানতে চান সবাই।
এই দম্পতির কোন সন্তান নেই। বিয়ের পরপরই কোন সন্তান না নেয়ারি সিদ্ধান্ত নেন তারা। বই পড়ে, টিভি দেখে, শরীরচর্চা করে, জানালা দিয়ে বাইরে বাচ্চাদের খেলা দেখে সময় কাটান। সম্প্রতি তার একটি ওয়াশিংমেশিন কিনেছেন। এতে কাপড় পরিষ্কার করে শুকাতে দেন। এটিও এখন তাদের রুটিনে পরিণত হয়েছে।
শারিরীকভাবে অসুস্থ না হলেও প্রতিদিন একই কাজ করতে হয় বলে বিরক্ত এই দম্পতি। তারা দুজনেই বলেন, “আমদের কাছে প্রতিটি দিন একই রকম। আমাদের নিজেদের মধ্যে আর কোন বিষয়ে কথা বলার কিছু নেই। এভাবে থাকতে থাকতে আমরা বিরক্ত।”
এ কারণেই তারা ‘স্বেচ্ছায় মৃত্যুর’ জন্য আবেদন করেছেন। চিকিৎসকের সহায়তা নিয়েই তারা মৃত্যুবরণ করতে চান। তবে এখন পর্যন্ত তারা কোন সাড়া পাননি।
ভারতের আইনে এ ধরণের মৃত্যুর অনুমতি নেই। কেবলমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে(প্যাসিভ ইউথেনাসিয়া) চিকিৎসার বাইরে চলে যাওয়া যন্ত্রণায় কাতর ব্যক্তিকে বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
এমন তথ্য জানার পরই নারায়ণ অনুসন্ধান করতে থাকেন অসুস্থ না হলেও বৃদ্ধ বয়সে কোথায় স্বেচ্ছায় মৃত্যুর সুযোগ রয়েছে। তিনি জানতে পারেন সুইজারল্যান্ডে এ ধরণের মৃত্যুর বৈধতা আছে। তখন তিনি স্ত্রীসহ সুইজারল্যাণ্ডে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকায় ভিসা পাননি। তবে ইরাবতির ভিসা হলেও স্বামীকে ছাড়া তিনি একা যাননি।
তাদের আবেদনের জবাব না পেলেও তারা আর কোন ইচ্ছার কথা জানাননি। তাদের পরিকল্পনা আছে যদি সরকার তাদের আবেদনে সারা দেন, তবে তারা এই ছোট ফ্ল্যাটটি সরকারের কাছে তুলে দিবেন। যদিও এটি এখন বড় ‘যদির’ ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু যদি তাদের একজন মারা যান তাহলে আরেকজনের কী হবে? সে পর্যন্ত তাদের নিয়মিত এই ভয়ের মধ্য দিয়েই যেতে হবে।
সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন