মন্দির বাঁচাতে তৎপর পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট!
প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:৪৩
সুপ্রাচীন একটি মন্দিরের অদূরেই তৈরী হয়েছে সিমেন্ট কারখানা সহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টরি। মন্দিরের সামনের পুকুরের জল শুকিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত কারখানার জল নেওয়ার জন্য। আর তাই দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ধমক দিচ্ছে সিমেন্ট কারখানার মালিককে- ‘দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে ওই পুকুরকে’। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নির্দেশ, ‘ওই পুকুর এবং ওই মন্দিরকে রক্ষা করতে দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে’। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এই দেশটির নাম পাকিস্তান।
পাকিস্তান অধ্যুষিত পাঞ্জাব প্রদেশের চকওয়াল জেলার কাতাসরাজ্ মন্দির। ইতিহাস বলছে ষষ্ঠ শতাব্দীতে তৈরী হয়েছে এই মন্দির। কথিত আছে পার্বতীর শোকে শিব যখন কেঁদেছিলেন দেবাদিদেবের চোখের জলেই তৈরী হয়েছিল ওই পুকুর। আর ওই পুকুরকে কেন্দ্র করেই কাতাসরাজ মন্দির। পাকিস্তনের মাটিতে ১৩ টি হিন্দু ধর্মস্থানের একটি কাতাসরাজ।
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কারখানায় ব্যবহারের জলের জন্য মন্দিরের পুকুরকেই ভরসা করতেন শিল্প মালিকরা। ফলে ভরা পুকুর এর পানি ক্রমশ তলানিতে এসে ঠেকে। মামলা হয় দেশের শীর্ষ আদালতে।
গত ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সাকিব নাসির ‘কাতাসরাজ বাঁচাও’ মামলার রায় দিতে গিয়ে তাৎপর্যপূর্ণভাবে মন্তব্য করেছেন, ‘কাতাসরাজ শুধু হিন্দুদের তীর্থস্থান নয়। এটা পাকিস্তানের অন্যতম হেরিটেজ। একে যেকোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে।’
প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়, আশেপাশের সমস্ত টিউবওয়েল বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরকে ফিরিয়ে দিতে হবে আগের অবস্থায়।
কিন্তু শুধু সুপ্রিমকোর্ট নয়, কাতাসরাজের আশেপাশের মানুষ বলছেন সম্প্রীতির অন্য এক নজিরের কথা। রামমন্দিরের রাজনীতি নিয়ে ভারত যখন উত্তাল, একের পর এক ঘায়ে যখন গুড়িয়ে যাচ্ছে বাবরি মসজিদ ঠিক সেই সময় কাতাসরাজের মন্দিরে লেখা হয়েছে সম্প্রীতির মহাকাব্য। অযোধ্যার বদলা যাতে কাতাসরাজের উপর নেমে না আসে তাই স্থানীয় মুসলিমরাই মন্দিরের সিংহাসন থেকে হিন্দু দেবতার মূর্তি তুলে নিয়ে রেখেছিলেন নিজেদের নিরাপদ আশ্রয়ে। ওই অঞ্চলের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণ কেন্দ্র কাতাসরাজ মন্দির।
কাতাসরাজের সংস্কৃতি তাই বলে হিংসার যেমন ধর্ম কিংবা সীমানা হয় না ঠিক তেমনি সম্প্রীতিও ধর্ম কিংবা দেশ মেনে হয় না।
তথ্যসূত্র: বাংলাবাজ