যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুদের মুখ খোলার সুযোগ
প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০১৬, ১৩:৫৪
ভারতে যে সব বাচ্চারা প্রতিদিন নীরবে স্কুলে, রাস্তাঘাটে বা বাড়িতে যৌন নির্যাতন ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে, তারা যাতে সহজে অনলাইনে তাদের অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারে তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার একটি উদ্যোগ নিয়েছে।
ভারতের মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা অনলাইনে একটি ‘ই-ড্রপবক্সে’র সুবিধা চালু করছে, যেখানে এই বাচ্চারা খুব সহজে তাদের পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ জানাতে পারবে।
এই অনলাইন ফেসিলিটি-তে এমনভাবে সহজ ভাষা, ছবি ও আইকন ব্যবহার করা হয়েছে যাতে বয়সে খুব ছোট বাচ্চারাও এই ই-ড্রপবক্স ব্যবহার করতে পারবে। ছবিতে ক্লিক করেই বোঝাতে পারবে তার ওপর কী ধরনের অত্যাচার হয়েছে বা হচ্ছে।
এই পরিকল্পনার বিস্তারিত ঘোষণা করে ভারতের মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধী বলেছেন, ‘শিশু নির্যাতন পুরোপুরি বন্ধ করার জন্য ও শিশুদের ঘিরে লক্ষ্মণরেখাটা আরও প্রসারিত করতেই এই উদ্যোগ!’
ভারতে যে ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটস (এনসিপিসিআর) নামে সরকারি সংস্থা রয়েছে, তাদের ওয়েবসাইটেই এই ই-ড্রপবক্সটি হোস্ট করা হবে। কমিশনই এখন এর আইকনগুলো ও রেসপন্স সিস্টেমটির নকশা প্রস্তুত করছে, যার কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এই পুরো পরিকল্পনাটি নেওয়া হয়েছে দিল্লি পুলিশের প্রকল্প ‘অপারেশন নির্ভীক’ থেকে – যেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে অভিযোগ জমা করার বাক্স বসানো হয়েছিল।
বহু ছাত্রী সেই সব বাক্সে নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে তাদের ওপর হওয়া নির্যাতনের অভিযোগ জমা দিয়েছিল – তার অনেকগুলো থেকেই পরে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল।
এই অপারেশন নির্ভীক থেকেই সামনে এসেছিল দিল্লিতেই কত শিশু বা কিশোরী প্রতিদিন বাড়িতে বা স্কুলে নির্যাতিত হচ্ছে – কিন্তু তা নিয়ে তারা মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।
এখন সেই প্রকল্পটিই পুরো দেশের জন্য চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার – তবে সেটা হবে অনলাইনের আকারে, অভিযোগও জমা পড়বে ই-ড্রপবক্সে।
২০০৭ সালের একটি সরকারি সমীক্ষাতেই পাওয়া গিয়েছিল, ভারতে ৫৩ শতাংশেরও বেশি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, কিন্তু তার মধ্যে অধিকাংশই সেই লাঞ্ছনার কথা কাউকে বলতে পারে না। নির্যাতনের ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে নির্যাতনকারী হয় ওই শিশুর পরিচিত, আত্মীয় বা একান্ত আস্থাভাজন কেউ।
ই-ড্রপবক্স এই বিপুল সংখ্যক শিশু নির্যাতনের ঘটনা কতটা কমাতে পারবে তা নিয়ে সংশয় থাকলেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন ‘অন্তত কিছু ঘটনারও যদি আমরা প্রতিকার করতে পারি সেটাও বা কম কী?’
সূত্র: বিবিসি বাংলা