‘চোখের সামনেই মেয়েকে হত্যা ও স্ত্রীকে ধর্ষণ করে জঙ্গিরা’
প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৫৯
চোখের সামনেই জঙ্গিরা হত্যা করে তাঁর ছোট্ট মেয়েটিকে। ধর্ষণ করে তার স্ত্রীকে। কিন্তু কিছুই করতে পারেননি নিরুপায় জসোয়া বয়েল। হাত-পা ছিল বাঁধা। ১৪ অক্টোবর (শনিবার) টরন্টো বিমানবন্দরে নেমে পাঁচ বছর ধরে বন্দিজীবনের কাহিনি শোনাচ্ছিলেন হতভাগ্য জসোয়া।
২০১২ সালে আফগানিস্তানে তালেবান জঙ্গিরা অপহরণ করেছিল মার্কিন-কানাডীয় দম্পতি জসোয়া বয়েল ও তাঁর স্ত্রীকে। সেখানেই নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় তাঁদের। বন্দী অবস্থাতেই জন্ম নেয় তাঁদের চার সন্তান। তাঁদের একজনকে মেরে ফেলে জঙ্গিরা।
২০১২ সালে যখন আফগানিস্তান ভ্রমণে যান এই দম্পতি, তখনই অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন জসোয়ার স্ত্রী। আফগানিস্তানের তালেবান-অধ্যুষিত এক প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছেছিলেন তাঁরা। ওই গ্রামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও, এমনকি কোনো সরকারও ছিল না। সেই গ্রামের মানুষকে সাহায্য করতেই গিয়েছিলেন তাঁরা। সেখান থেকেই তাঁদের অপহরণের পর বন্দী করে জঙ্গিরা।
তবে তাঁদের আফগানিস্থানে যাওয়ার কারণটি একদম যৌক্তিক বলেই মনে করেন না জসোয়ার শ্বশুর জিম কোলম্যান। তিনি বলেন, ‘আমি এটাই বলি যে নিজের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে এমন ভয়ংকর একটি জায়গায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত কেমন করে মানুষ নিতে পারে। আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছে।’
গত বুধবার আফগানিস্তান সীমান্তের কাছ থেকে ওই দম্পতি এবং তাঁদের তিন সন্তানকে উদ্ধার করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। পরে গতকাল কানাডায় ফিরেছেন তাঁরা। বিমানবন্দরে তাঁদের স্বাগত জানায় কানাডা সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তার আগে দেশে ফেরার উড়োজাহাজে চেপেও ভয় যেন কাটছিল না তাঁদের। উড়োজাহাজে জড়সড় হয়ে বসে ছিলেন জসোয়ার স্ত্রী। পরনে বাদামি হিজাব। পাশের সিটে দুই সন্তান। একদম শেষে বসেছিলেন স্বামী জসোয়া। তাঁর কোলে সবচেয়ে ছোট সন্তান। মুখে কোনো কথা নেই। চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।
বিমানবন্দরে নেমে জানান দুর্বিষহ জীবনের কথা। বন্দী অবস্থায় ভয়াবহ জীবন যাপন করেন জসোয়া দম্পতি। ২০১৪ সালে জঙ্গিরা তাঁদের চোখের সামনেই মেরে ফেলে তাঁদের মেয়েকে। ওই বছরে ধর্ষণ করা হয় জসোয়ার স্ত্রীকে।
এমনকি মুক্তি পাওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগেও ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল জসোয়াদের। জসোয়া জানান, অপহরণকারীরা গাড়িতে করে তাঁদের নিয়ে যাওয়ার সময় গতিরোধ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তাদের গুলিতে মৃত্যু হয় বেশ কিছু জঙ্গির। আহত হন তিনিও।
জসোয়ার ভাই ড্যান বয়েল জানান, উদ্ধার হওয়ার পরেই ভাইয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছিল তাঁর। গলা শুনে পাঁচ বছর আগের মতোই লেগেছিল। তাঁদের সবার সঙ্গে এখন স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চান জসোয়া দম্পতি। সন্তানদের একটা নিরাপদ জীবন দেওয়ার প্রত্যাশা করছেন, যাতে হারিয়ে যাওয়া শৈশব কিছুটা হলেও ফিরে পায় তারা।
সূত্র: বিবিসি