রাখাইনে ২৮ হিন্দু গ্রামবাসীর লাশ!
প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:৪৭
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২৮ হিন্দু গ্রামবাসীর লাশ পাওয়ার দাবি করেছে দেশটির সরকারি বাহিনীগুলো। ২৪ সেপ্টেম্বর (রবিবার) পাওয়া এসব লাশের মধ্যে ২০টি নারীদের এবং বাকী আটটি পুরুষ শিশুর বলে জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার, খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
দেশটির সরকার জানিয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এক শরণার্থী মিয়ানমারের হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করার পর রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় গ্রাম ইয়ে বাও কিয়ার কাছে তল্লাশি চালানো হয়।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ওই শরণার্থী জানান, ২৫ আগস্ট এআরএসএ-র প্রায় ৩০০ জঙ্গি প্রায় ১০০ জনকে ধরে গ্রামের বাইরে নিয়ে হত্যা করে।
তবে এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ)। তাদের দাবি, তারা বেসামরিকদের ওপর কোনো হামলা চালায় না এবং কোনো হিন্দুকেও হত্যাও করেনি।
অপরদিকে মিয়ানমার সরকার বলেছে, তারা আট নারী গ্রামবাসীকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করে তাদের বাংলাদেশে নিয়ে গেছে। নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে বলে জানিয়েছেন মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাও হতাই।
রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে সাংবাদিকসহ মানবাধিকার কর্মী ও ত্রাণকর্মীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত এবং এ কারণে ওই এলাকায় সংঘটিত বলে মিয়ানমার সরকারের দাবি করা ঘটনাটি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এআরএসএ-র এক মুখপাত্র বলেছেন, তার বিশ্বাস বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে এবং এ কারণেই এআরএসএ-র জঙ্গিরা গ্রামবাসীদের হত্যা করেছে বলে ‘মিথ্যা’ রটনা সৃষ্টি করছে।
প্রতিবেশী এক দেশ থেকে টেক্সট বার্তার মাধ্যমে আব্দুল্লাহ নামে পরিচয় দেওয়া ওই মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, বেসামরিকদের লক্ষ্যস্থল না করতে এআরএসএ আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিশ্রুত এবং যাই বলা হোক না কেন এ বিষয়ে অটল থাকবে।
উত্তর রাখাইনের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় দুপক্ষের সংঘাতের মাঝখানে পড়ে গেছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। এদের একটি অংশ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে; মিয়ানমারের সৈন্য ও বৌদ্ধ পাহারাদারদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ করেছে তারা। অন্যরা তাদের ওপর হামলার জন্য বিদ্রোহীর বেশে আসা সন্দেহভাজন সরকারি চরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।
২৫ আগস্ট রাতে এআরএসএ-র বিদ্রোহীরা পশ্চিম রাখাইনে প্রায় ৩০টি পুলিশ ফাঁড়ি ও সেনাবাহিনীর শিবিরের ওপর একযোগে হামলা চালিয়ে সরকারি বাহিনীর ১২ জনকে হত্যা করে।
এ ঘটনার পর থেকেই দেশটির রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সরকারের দাবি, অভিযানে চারশরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে যাদের অধিকাংশই বিদ্রোহী।
কিন্তু প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে প্রবেশে সহিংসতার মাত্রা যে আরও অনেক ব্যাপক তা টের পাওয়া যায়। পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বৌদ্ধ বেসামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট ও বাড়িঘর-দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করে।
সহিংসতা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত চার লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে মিয়ানমার সরকার রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছে তাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ।
অপরদিকে মিয়ানমার জাতিগত নির্মূলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।