রাখাইনে প্রবেশাধিকার চায় কানাডা
প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:২৫
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কফি আনান কমিশন বাস্তবায়ন কমিটিকে কা্জ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছে কানাডা। পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়ত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশাধিকার দাবি করেছে জাস্টিন ট্রুডোর দেশ।
জাতিসংঘের ধারাবাহিকতায় রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের নীতিকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ আখ্যা দিয়েছে দেশটি। টরেন্টোভিত্তিক সিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন ডি-ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’কে ফোন করে পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সাম্প্রতিক ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের লক্ষ্যে সেনা অভিযান শুরুর কয়েকদিনের মাথায় 'বিদ্রোহী রোহিঙ্গা'রা ২৪টি পুলিশ চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের সমন্বিত হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়ে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার করে সরকার। তখন থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়েছে। বিপন্ন মানবতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে সারাবিশ্ব। শনিবার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সমর্থনে দুইটি প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে কানাডাতেও। সেই দুই মিছিলের একটিতে অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিলা ফ্রিল্যান্ড মিয়ানমারকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত করেন। বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন অনুযায়ী আমাদের কাছে এটা জাতিগত নিধনযজ্ঞই মনে হচ্ছে। আর এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি গর্বিত যে কানাডীয়রা এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে।’
ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদার হওয়ার পর থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দেয় সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে। তবে এইসব তথ্য পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় সংবাদ সংগ্রাহকদের।
চলতি মাসের প্রথমে একটি স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশের মাধ্যমে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েঠিলো অন্তত ৭০০ বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারা স্বাধীন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে কাজ করার সুযোগ দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছিলো। এবার কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানালেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কানাডায় প্রবেশাধিকার চাইবে কানাডা। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে কানাডার রাষ্ট্রদূত রাখাইনে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে সেখানে কোনও স্বাধীন কমিশনকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।‘
এরআগে ১৩ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর চলমান সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা ও দেশটির রাষ্ট্রীয় উপেদষ্টা অং সান সু চি’কে ফোন দিয়ে তিনি এই উদ্বেগ জানিয়েছেন। এসময় তিনি চলমান পরিস্থিতিতে নৈতিক ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সু চি’র ভূমিকার ওপর সুনির্দিষ্টভাবে জোর দেন। আর দেশটির ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রী ম্যারি ক্লদে বিভূ শুক্রবার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আরো ২.৫৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন।
গত তিন সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশের হাতে প্রায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ১ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান জেইদ রা’দ আল ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় দৃষ্টান্ত’ আখ্যা দিয়েছেন। মহাসচিব গুয়েতেরেজ প্রশ্ন রেখেছেন, এক তৃতীয়াংশ মানুষ দেশ থেকে উচ্ছেদ হলে তাকে জাতিগত নিধন ছাড়া আর কী নামে ডাকা যায়।