রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবে মালয়েশিয়া
প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:২৪
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর হামলা-নির্যাতন-ধর্ষণের মুখে জীবন বাঁচাতে যদি কোনো রোহিঙ্গা মুসলমান পরিবার বিপদসঙ্কুল সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়ার উপকূলে পৌঁছায় তাহলে তাদের আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর গত ২৫ অক্টোবর থেকে প্রায় এক লাখ ৬৪ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মম হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ আর নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে সহায়-সম্বল হারানো এসব ‘দেশহীন’ শরণার্থীর ভাষ্যে।
মালয়েশিয়া মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির মহাপরিচালক জুলকিফলি আবু বাকার আজ শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রয়টার্সকে বলেন, নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে আন্দামান সাগর হয়ে ছোট ছোট নৌকায় করে রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়ায় উপকূলের দিকে আসতে পারে। আগে থেকেই এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী মালয়েশিয়ায় আশ্রয়ে রয়েছে।
‘আমরা উপকূলে তাদের আটক করে প্রাথমিক মানবিক সাহায্য দিয়ে পুনরায় তাদের একই সমুদ্র পথে ঠেলে দিতে পারি। কিন্তু দিন শেষে মানবতার কারণে আমরা এটা করতে পারি না।’
এখনো পর্যন্ত নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখা যাচ্ছে না, যোগ করেন জুলকিফলি আবু বাকার।
মালয়েশিয়া জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনের অনুসিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেনি। শরণার্থীদের এখানে অবৈধ অভিবাসী হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়।
মুসলিম অধ্যুষিত মালয়েশিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ৫৯ হাজার নিবন্ধিত শরণার্থী রয়েছে। কিন্তু অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যাটা এর দ্বিগুণ বলেও জানান মালয়েশিয়া মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির মহাপরিচালক।
মালয়েশিয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী থাইল্যান্ডও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে।
২০১৫ সালে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বেশ কয়েকটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, মানবপাচারের শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যার পর গণকবর দেওয়া হয়।
গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের’ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এই হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে।
মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭০ জন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ জন সাধারণ নাগরিক।
মিয়ানমার সরকারের আরো দাবি, ‘বিদ্রোহী সন্ত্রাসীরা’ এখন পর্যন্ত রাখাইনের প্রায় দুই হাজার ৬০০ বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এখনো রাখাইন রাজ্যে থাকা মুসলিমদের মধ্যে মাইকে প্রচার চালাচ্ছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।