রোহিঙ্গাদের ফেরা রুখতে মাইন পুঁতছে মিয়ানমার
প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৩:০২
সেনাবাহিনীর লাগাতার হামলা-নির্যাতন-ধর্ষণের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যাতে আর নিজ বাড়িঘরে ফিরতে না পারে, সে জন্য মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চলজুড়ে প্রাণঘাতী স্থলমাইন পুঁতে রাখছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ সরকারের দুটি উৎস থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করে রয়টার্স ৬ সেপ্টেম্বর (বুধবার) আরো জানিয়েছে, তিন দিন ধরে মিয়ানমার এই স্থলমাইন পোঁতার কাজ করছে।
নতুন করে সহিংসতা সৃষ্টির পর মিয়ানমার থেকে গত ১৩ দিনে দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের অনেককেই সীমান্তে বাধা দিচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এমন হাজার হাজার মানুষ প্রাণভয়ে ফের বাড়িতে ফিরতে না পেরে সীমান্তেই অবস্থান করেছ। বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বাধা পাওয়া রোহিঙ্গারা যাতে আর রাখাইনে না ফিরতে পারে, সে জন্যই স্থলমাইন বাসানো হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্রটি রয়টার্সকে বলে, ‘আমাদের সদস্যরা তিন থেকে চারটি গ্রুপকে সীমান্তে কাঁটাতার বরাবর মাটিতে কিছু পুঁততে দেখে। পরে আমরা নিজস্ব মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি যে, তারা (মিয়ানমার) সেখানে স্থলমাইন পুঁতছে।’
এ ধরনের কাজ তো ‘রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা’ও করতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে সূত্রটি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে, তারা রোহিঙ্গা বিদ্রোহী না।’
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান খান রয়টার্সকে বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) তিনি মিয়ানমার সীমান্তে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর (সোমবার) এ ধরনের দুটি বিস্ফোরণ হয়েছে।
মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে একটি শিশুর বাম পা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসে। তার সঙ্গে আসার আরেকটি শিশুরও সামান্য আঘাত ছিল বলে জানান বিজিবি কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, এগুলো স্থলমাইন বিস্ফোরণ হতে পারে।
সোমবারের বিস্ফোরণের ব্যাপারে ভুক্তভোগী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বরাত দিয়ে বিজিবি কর্মকর্তা আরো বলেন, সীমান্তে নো-ম্যানস ল্যান্ডে চলাচলের কাদাপানির মধ্যে স্থলমাইল পুঁতে রাখা ছিল।
দুজন রোহিঙ্গা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এই বিস্ফোরণের ঘটনার কাছাকাছি সময়ে তাঁরা সেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখেছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশের একজন কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে জানিয়েছেন, সীমান্তে মাইন পেতে রাখার এবং এসব মাইনে বাংলাদেশে পলায়নরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হতাহত হওয়ার কিছু কিছু খবর তারাও পাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের’ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এই হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। সেখান থেকে পালিয়ে আসার রোহিঙ্গাদের দাবি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বাচারে গ্রামের পর গ্রামে হামলা নির্যাতন চালাচ্ছে। নারীদের ধর্ষণ করছে। গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭০ জন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ সাধারণ নাগরিক।
মিয়ানমার সরকারের আরো দাবি, ‘বিদ্রোহী সন্ত্রাসীরা’ এখন পর্যন্ত রাখাইনের প্রায় দুই হাজার ছয়শ বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এখনো রাখাইন রাজ্যে থাকা মুসলিমদের মধ্যে মাইকে প্রচার চালাচ্ছে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।