মণিপুরে বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্তের নির্দেশ
প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৭, ০০:০১
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি রাজ্য মণিপুরে বিচারবহির্ভূত হত্যার বেশ কিছু ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গত চার দশকে (১৯৭৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত) মণিপুরে দেড় হাজারের বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে এসব হত্যার দায় রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর ওপর চাপিয়েছেন। এসব সংগঠন স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালত গত বছর যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার-পরিজনকে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রমাণ জড়ো করতে বলেন। সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনী বেসামরিক লোকজনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু আদালত এ বিষয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পেশ করা সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণ করেছেন। এসব সংগঠনের অভিযোগ, নিরাপত্তা বাহিনী বিতর্কিত বিদ্রোহ দমন আইন ‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট (এএফএসপিএ)’ প্রয়োগ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এ আইনের আওতায় নিরাপত্তা বাহিনীকে সন্দেহভাজন লোকজনকে আটকের ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে অভিযানকালে ‘ভুলক্রমে’ কোনো বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করা হলে সেনাসদস্যদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মণিপুর এবং ভারতশাসিত কাশ্মীরে এই আইনটি ‘বেনামি হত্যাকাণ্ড’ সংঘটনে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
হিরোজিৎ সিং নামের নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সাবেক সদস্য গত মাসে বিবিসিকে বলেন, তিনি মণিপুরে শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছেন এবং খাতায় তার হিসাবও রেখেছেন।
হিরোজিৎ বলেন, ‘আমি কেবল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে নিজের দায়িত্ব পালন করছিলাম। আমি এ কথা স্বীকার করছি এ জন্য যে সত্যি বলাটাকে আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।’
মানবাধিকারকর্মীরা বলেছেন, হত্যার ঘটনাগুলো তদন্তের জন্য আদালত যে নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার-পরিজন কিছুটা শান্তি পেতে পারেন।
পার্বত্য রাজ্য মণিপুরের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। প্রায় চার দশক ধরে সেখানকার বিদ্রোহীরা স্বাধীনতার দাবিতে লড়াই করছে। একটা সময় মণিপুরে বিদ্রোহীদের প্রায় ৩০টি সংগঠন ছিল। সেগুলোর ছয়টিকে সরকার নিষিদ্ধ করেছে। জাতিগত বিরোধের জেরেও মণিপুরে সহিংসতা হয়ে থাকে। কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, মণিপুরে ২০০০ থেকে ২০১২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্রোহীরা ১ হাজার ২১৪ জন বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে। পাশাপাশি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ৩৬৫ জন সদস্যও এ সময় নিহত হয়েছেন।
সূত্র: বিবিসি