মাসিকের প্রথম দিনে ছুটি পাবে মেয়েরা
প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০১৭, ২২:২৩
ভারতে একটি মিডিয়া কোম্পানি তাদের নারী কর্মীদের জন্য মাসিক ঋতুস্রাবের প্রথম দিনে সবেতন ছুটি দেওয়ার নীতি ঘোষণা করেছে।
'কালচার মেশিন' নামে ওই সংস্থাটি বলছে, মাসিকের প্রথম দিনটি যে মেয়েদের জন্য শারীরিকভাবে অস্বস্তিকর এবং কাজের জন্য আদর্শ নয়- এই বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দিতেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোম্পানির সত্তর-আশিজন নারী কর্মী এই সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত, এবং ভারত সরকারও যাতে অনুরূপ নীতি গ্রহণ করে তার জন্য এখন তারা ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন।
এজন্য প্রতিষ্ঠানটি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, নারী কর্মীরা বিশেষ দিনগুলোতে তাদের কেমন লাগে, সে কথা বলছেন। ভিডিওর শেষের দিকে যখন তাদের জানানো হয়, প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য মাসিকের প্রথম দিনে ছুটির ব্যবস্থা করেছে, সবাই তখন এটিকে স্বাগত জানিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
সংস্থার হিউম্যান রিসোর্স প্রেসিডেন্ট দেবলীনা এস মজুমদার বলেন, "চলতি জুলাই মাসের গোড়া থেকেই আমরা সংস্থার নারী কর্মীদের জন্য এই এফওপি (ফার্স্টডে অব পিরিওড) নীতি গ্রহণ করেছি। অনেক সময়ই দেখা যায় নারীরা মানসিকভাবে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সমকক্ষ হলেও শারীরিক কারণে তাদের চেয়ে পিছিয়ে পড়েন। যেমন প্রতি মাসে ঋতুবতী হওয়ার সময় তারা অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন বা মানসিক অবসাদে ভোগেন। এই সমস্যাকে অ্যাড্রেস করতেই আমরা এফওপি নীতি অনুসরণ করছি। এই ছুটিটা হবে একটা অপশনাল ছুটি- আমাদের নারী কর্মীরা প্রতি মাসে তাদের পিরিওডের প্রথম দিনে এই ছুটিটা নিতে পারবেন"।
দেশটির সবচেয়ে বড় ট্রেড ইউনিয়ন সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বিবিসিকে বলেন, "এই সিদ্ধান্তটা শিল্পবান্ধব হল কি না, সেটা নিয়ে আমি আদৌ বিচলিত নই। বিজনেস-ফ্রেন্ডলি হোক বা না-হোক, এটা তো হিউম্যান ফ্রেন্ডলি বটেই। আর শুধু সে কারণেই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো উচিত"।
এমন কী, দেশের সব নারী শ্রমিক ও কর্মীরা এই ছুটি পেলেও কর্মদিবসের তেমন কোনও ক্ষতি হবে না বলেই তার অভিমত।
তপন সেন বলেন, "আমাদের দেশে শ্রমিকদের মধ্যে নারীদের শতকরা হার আর কতটুকু? তাতে যদি তারা মাসে একদিন, বছরে বড়জোর বারোটা দিন বাড়তি ছুটি পান তাতে আর কী এমন হেরফের হবে? আর তাছাড়া এটাকে মেয়েদের শারীরিক কারণে ছুটি বলা উচিত নয় - এটা হল প্রাকৃতিক কারণ। প্রত্যেক সমাজেরই সেটার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এমন কী মাতৃত্বকালীন ছুটিও কিন্তু চালু হয়েছিল একই রকম কারণে"।
এদিকে কালচার মেশিনের নারী কর্মীরা তাদের হঠাৎ-পাওয়া এই সুবিধেকে অন্যদের জন্যও ছড়িয়ে দিতে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বরাবরে একটি অনলাইন পিটিশনও শুরু করেছেন - যাতে দারুণ সাড়াও মিলছে।
ভারতের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধী আর মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকরের উদ্দেশে পাঠানো সেই আবেদনে এই ছুটিকে গোটা দেশ জুড়ে আইনগত বৈধতা দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছে কালচার মেশিন।
ফলে মাসিকের প্রথম দিনে নারীদের ছুটির দাবি অচিরেই ভারতে আরও বড় আকার নিতে চলেছে, সেই সম্ভাবনাও তাই স্পষ্ট।
সূত্র: বিবিসি