গত ৯ বছরেই নারী পুলিশের ৮০ শতাংশ নিয়োগ
প্রকাশ | ০৭ মার্চ ২০১৮, ২২:১৩
দেশের নারী পুলিশের ৮০ শতাংশ সদস্য নিয়োগ পেয়েছে গত সাড়ে ৯ বছরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দশ উদ্যোগের অন্যতম নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান ব্যাপক সাফল্যের ইঙ্গিত বহন করে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পুলিশ বিভাগে কর্মরত ১১ হাজার ৭৬৭ জন নারী পুলিশের মধ্যে ৯২৪৭ জন অর্থ্যৎ প্রায় ৮০ শতাংশ নিয়োগ পেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের দুই মেয়াদে।
এই তথ্য থেকে দেখা যায়, পুলিশ বাহিনীতে কাজ করতে নারীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। ফলে, ২০০৮ সালে যেখানে দেশে নারী পুলিশের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫২০ জন, বর্তমানে তা বেড়ে ১১ হাজার ৭৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে পুলিশ বাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যা ১ লক্ষ ৯৮ হাজার ৬৫৩ জন। সেখানে এখনও পুলিশে নারী প্রতিনিধিত্ব মাত্র ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো ১৪ জন নারী পুলিশ বাহিনীতে যুক্ত হন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের পুলিশে যোগদানের পথ প্রশস্ত করেন। এর ফলে, বর্তমানে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাটির বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা কাজ করছেন।
দেশে মোট নারী পুলিশের মধ্যে বর্তমানে ২ জন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি), ৪ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ৩৭ জন পুলিশ সুপার, ৯৩ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ১২৬ জন সহকারি পুলিশ সুপার, ১১০ জন পরিদর্শক (নিরস্ত্র), ৬৪৬ জন উপ-পরিদর্শক, ৫৫ জন পুলিশ সার্জেন্ট, ৯২৮ জন সহকারি ইন্সপেক্টর, ২৮ জন নায়েক এবং ৯৩৩৮ জন কনস্টেবল।
পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে নারীদের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিআইজি রওশন আরা বেগম বলেন, ৩০ বছর আগে যখন পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলাম তখনকার সমাজ আজকের মত নারীর প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল ছিল না।
তিনি বলেন, “এমনকি মানুষ তখন নারী পুলিশের কথা চিন্তাও করতে পারতো না। তবে, দিন বদলের সাথে সাথে নারীর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। যা নারীদের পুলিশ বাহিনীতে কাজ করতে আগ্রহী করে তুলেছে।”
উচ্চ পদস্থ এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ হওয়াটাই সবার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুরুষ ও নারী উভয় পুলিশ সদস্যই একই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেন।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীতে আমার তিন দশকের কর্মজীবনে অনেক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছি যখন কাউকে পছন্দসই পরিষেবা দিয়ে হাসিমুখে বিদায় করতে পেরেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে রওশন আরা বলেন, নারী পুলিশ সদস্যরা তাদের সমকক্ষ পুরুষ সহকর্মীদের মতোই জটিল মামলা, অভিযান বা অন্য যে কোন পেশাগত দায়িত্ব পালনে যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে।
পুলিশ বাহিনীতে কাজ করার ক্ষেত্রে নারীদের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক পূর্ব) নাজমুন নাহার সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ বাহিনীতে কাজের পরিবেশ যথেষ্ট সন্তোষজনক এবং নারীদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রতি পুরুষ সহকর্মীদের আচরণ খুবই প্রশংসনীয়, যা এধরনের কাজ করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে প্রধান দায়িত্বই হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নিরাপত্তা প্রদান করা”।
নাজমুন নাহার বলেন, প্রশিক্ষণই নারী পুলিশকে তাদের পুরুষ সহকর্মীদের মতো একই রকম প্রতিশ্রুতি ও দক্ষতার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহায়ক চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের দু’জন নারী সার্জেন্ট, দু’জন নারী সহকারি উপ-পরিদর্শক ও চারজন নারী কনস্টেবল একইভাবে তাদের পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে সফলভাবে কাজ করছে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, কেবল পুলিশরাই নন, অন্যান্য পেশার নারীরাও তাদের প্রতিদিনের পারিবারিক জীবনে সমস্যার মুখোমুখী হন।
তিনি বলেন, নারীদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও সাংসারিক অনেক কাজ করতে হয়। কিন্তু পুরুষদের করতে হয়না। তিনি আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে পুরুষদেরও তাদের সাংসারিক কাজ ভাগাভাগি করে নেয়ার পরামর্শ দেন। যাতে আরও বেশি সংখ্যক নারী পেশাগত জীবনে সাফল্য লাভ করতে পারেন।
নিয়মিত পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি ২০১১ সালে মহিলা পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়। ২৫৮ সদস্যের মহিলা পুলিশ ব্যাটালিয়ন সফলভাবে বিমানবন্দর এবং নিরাপত্তা চেক পয়ন্টগুলোতে নিরাপত্তা রক্ষায় সফলভাবে কাজ করছে।
দেশে পুলিশ বাহিনীতে কাজ করা ছাড়াও জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশনে শান্তিরক্ষী হিসাবে অনেক নারী পুলিশ কাজ করে আসছেন। বর্তমানে ৭৭ জন নারী পুলিশ জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশনে নিয়োজিত আছেন। মোট ১১০৯ জন নারী পুলিশ এই পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন সম্পন্ন করেছেন।
বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নারী পুলিশকে দেশ ও বিদেশে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সক্ষম করে গড়ে তুলছে।
সূত্র: বাসস