ইইউ এর পক্ষে রুশনারার আহ্বান

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০১৬, ০৩:৩৬ | আপডেট: ২০ জুন ২০১৬, ২১:৫৬

অনলাইন ডেস্ক

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর সাথে যুক্তরাজ্যের থাকা-না থাকা নিয়ে গণভোটে ইইউতে থাকার পক্ষেই ভোট দেওয়ার জন্য নিজ নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দাদের আহ্বান জানিয়েছেন লেবার পার্টির বাঙালি এমপি রুশনারা আলী।

বুধবার লন্ডনে নিজ নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দাদের উদ্দেশে এক খোলা চিঠিতে এ আহ্বান জানান ‘বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো’ আসনের এই এমপি। নিজের নির্বাচনী এলাকার মানুষদেরকে প্রিয় বাসিন্দা সম্মোধন করে খোলা চিঠি শুরু করেন লেবার এমপি রুশনারা। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন থেকে শুরু করে লেবার লিডার জেরিমি করভিন, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রীরা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে প্রায় সব বিশ্ব নেতা, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা ইইউতে থাকার পক্ষে মতামত দিচ্ছেন দাবি করে নিজেও একই মত পোষণ করার কথা জানান রুশনারা।

চিঠিতে তিনি বলেন, “আমার মতামতও হচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যেই ব্রিটেন সবদিক দিয়ে শক্তিশালী, নিরাপদ এবং ভালো। এই সম্মিলিত মতামত শুধু কথার কথা অথবা বিশ্বাস অথবা আবেগ থেকে নয়, এর পেছনে যথেষ্ট বাস্তবসম্মত এবং যৌক্তিক কারণ রয়েছে। কারণ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বহু সুফল আমরা প্রতিদিনই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ভোগ করছি”।

অন্যদিকে যারা ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে ক্যাম্পেইন করছেন তারা কথার ফুলঝুরি ছাড়া ইইউ ছাড়ার পর যুক্তরাজ্যের পরিচালনা নীতি বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না বলে দাবি করেন তিনি।

রুশনারা বলেন, “ইউনিয়ন পরবর্তী রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কে বিশদ কোনো পরিকল্পনাই তাদের টেবিলে নেই। এমনকি প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া সামলানোর ধারণাও তাদের নেই”।

যুক্তরাজ্যবাসীর জন্য স্মরণকালের মধ্যে একে ‘গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত’ মন্তব্য করে চিঠিতে বলা হয়, “আমরা যদি বাস্তবতাকে মানি তাহলে ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে ভোট দেওয়া মানেই আমাদের অর্থনীতির জন্য অনিশ্চয়তা এবং অস্থিরতা ডেকে আনা। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের বর্তমান গভর্নরের ভাষায় যার অন্য অর্থ হচ্ছে আরেকটি দীর্ঘ মেয়াদী অর্থনৈতিক মন্দা বা রিসেশন। আর এটা হলে অর্ধ মিলিয়ন মানুষ শুধু চাকরিই হারাবেন না, পাউন্ডের মূল্যও আনুমানিক ৩.৬% কমে আসবে”।

ইউনিয়ন ত্যাগ করলে মানুষের আয় কমে আসার পাশাপাশি দোকানে জিনিসপত্রের ‌‘কম দামে’ আঘাত আসার আশংকা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের এই এমপি। এতে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে বছরে পরিবার পিছু বার্ষিক ৩৫০ পাউন্ড সাশ্রয় কমে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

চিঠিতে ইইউতে থাকার পক্ষে যুক্তরাজ্যের চাকরি ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বেশকিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেন রুশনারা। যুক্তরাজ্যের তিন মিলিয়ন চাকরি ইইউ বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং ইইউ দেশগুলো থেকে প্রতিবছর গড়ে ২৪ বিলিয়ন পাউন্ড যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ হয় বলে পরিসংখ্যান দেন বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যদূত রুশনারা।

বাণিজ্যিক সুবিধার বাইরেও ইইউ সদস্যপদ যুক্তরাজ্যবাসীদের ‘মিনিমাম পেইড লিভ’, এজেন্সি ওয়ার্কারদের বিভিন্ন অধিকার, স্ববেতনে মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি, বেতনে সমতা, ধর্ম এবং বর্ণ বৈষম্য থেকে সুরক্ষা দিয়ে আসছে বলে ওই খোলা চিঠিতে বলেন তিনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইইউ ইউরোপের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও কাজ করছে বলে স্মরণ করিয়ে দেন রুশনারা।

অন্যদিকে ইইউ ত্যাগের পক্ষের ক্যাম্পেইনারদের মধ্যে অনেকেই উগ্র ডানপন্থি এবং বিভক্তি সৃষ্টিকারী রাজনীতিবিদ রয়েছেন বলে দাবি করে রুশনারা খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেন, ‍“অনেকেই ইসলামোফোবিক এবং বর্ণবাদী ভাষা ব্যবহার করেন।”

সুনির্দিষ্টভাবে নাইজেল ফারাজের নামে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‍“তিনি (নাইজেল) ব্রিটেনের এথনিক এবং মুসলিম কমিউনিটি সম্পর্কে প্রায়ই বাজে মন্তব্য করে থাকেন। যে কোনো সমস্যায় ইমগ্র্যান্টদের উপর দায় চাপানোর অলস মানসিকতা তার মতো লোকদের মনে কাজ করে।”

নাইজেল ফারাজরা অভিবাসনের নেতিবাচক দিককে তিলকে তাল করে বলতে আগ্রহী হলেও সুফলের কথা বলতে ততোটা আগ্রহী নন মন্তব্য করে রুশনারার ভাষ্য, ইইউ ত্যাগ করলে নাইজেল ও তার বন্ধুরা কখনোই ইমিগ্র্যান্টদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াবেন না।

রুশনারা বলেন, “ভিন্ন ভিন্ন কমিউনিটির মানুষ এক সাথে থেকে কিভাবে নিজেদের এবং সমাজের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে এর বড় উদাহরণ হচ্ছে আমার নির্বাচনী এলাকা বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো। অথচ ইইউ ত্যাগের পক্ষে ক্যাম্পেইন পরিচালনাকারীরা ইমিগ্র্যাশনের তথ্য বিকৃত করে সমাজে ভয় এবং অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি করছেন।”

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যখাতে ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার নাগরিক কর্মরত রয়েছে জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, “ইইউ ত্যাগ মানেই এই গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিসে লোক নিয়োগে বিশাল প্রতিবন্ধকতা। দক্ষ-অদক্ষ কর্মী থেকে শুরু করে, ডাক্তার, নার্স সব ক্ষেত্রেই ইমিগ্র্যান্টরা আমাদের দেশের জন্য ইতিবাচক প্রভাব রেখে আসছেন।”

ইইউ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সাথেও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ককে জোরদার করছে দাবি করে ‘ব্রিটেন হচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে আমাদের প্রবেশ দ্বার’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই মন্তব্য তুলে ধরা হয় চিঠিতে।

ইইউ এর সদস্য হওয়ার কারণে ট্যাক্স ফাঁকি, জলবায়ু সমস্যা, মাইগ্র্যাশন সমস্যা ও সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন যুক্তরাজ্য সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করে আসছে জানিয়ে রুশনারা বলেন, “এসব আর্ন্তজাতিক ইস্যু এখন আমরা আর এককভাবে মোকাবেলা করতে পারব না।”

বদলে যাওয়া বিশ্বে আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্কের ধারণাও বদলেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‍“এর সাথে পাল্লা দিতে না পারলে আমরাই ছিটকে পড়ব। কোনো ঐতিহাসিক ভুল যাতে আমাদেরকে পেছনে ঠেলে না দেয়।”

উল্লেখ্য, ইইউতে থাকার বিপক্ষে রয়েছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির বেশিরভাগ এমপিসহ যুক্তরাজ্য ইনডিপেনডেন্ট পার্টির নেতারা। এ ঘটনা ইতোমধ্যে ‘ব্রেক্সিট’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শেষ পর্যন্ত আগামী ২৩ জুনের গণভোটে যুক্তরাজ্যের ইইউতে থাকা-না থাকা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।