সৌদিতে গণধর্ষণের শিকার এক স্ত্রীর আকুতি!
প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০১৭, ২১:০৭
স্বামী ছিলেন দিনমজুর। ঢাকায় একটি রড সিমেন্টের দোকানে কাজ করতেন তিনি। পাঁচ বছর আগে রড বহন করার সময় এক দুর্ঘটনায় বাঁ কাঁধ ভেঙে গেলে সহায়-সম্বল বিক্রি করেও আর সুস্থ করা সম্ভব হয়নি। প্রায় ১৭ বছর আগে বিয়ে করা সংসারে তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। স্বামী কর্মহীন হয়ে পড়ায় প্রায় সাত সদস্যের পরিবারে চলে আসে অভাব-অনটন। সেই অভাব থেকে বাঁচতেই স্ত্রীকে সৌদি আরব পাঠান স্বামী। কিন্তু সৌদি আরবে যাওয়ার ২৬ দিন পর স্ত্রী ফোন করে জানান, প্রতিদিন তাকে গণধর্ষণ করা হচ্ছে। স্বামী তাকে পরামর্শ দেন পুলিশকে জানাতে। কিন্তু সৌদি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও মুক্তি মেলেনি তার। উল্টো ১৫ দিন ধরে স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
এমন নির্মম গল্প ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বাসিন্দা এক পরিবারের।
জানা যায়, অভাবের সময় স্ত্রী দুই ছেলেকে নিয়ে নরসিংদী চলে যান ঐ দিনমজুর স্বামী। সেখানে ছেলেরা রিকশা চালায় আর স্ত্রী একটি সুতার কারখানায় কাজ নেন। তাদের আয়ের একটা অংশ দিয়ে নান্দাইল গ্রামের বাড়িতে দুই মেয়ে ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে কোনোমতে জীবন চলে যাচ্ছিল তাদের। এমন সময় গত বছরের নভেম্বরে স্ত্রী তাকে জানান, নরসিংদীর বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে তিনি সৌদি আরবে যাবেন কাজ করতে। এ জন্য তার কোনো টাকা লাগবে না। সব কিছু বহন করবে সেখানকার এক লোক। বেতন হবে মাসে ২০ হাজার টাকা। স্ত্রীর এ কথায় স্বামী সায় না দিলেও স্বামীর কথা না মেনেই স্ত্রী পাড়ি দেন সৌদি আরব।
সেখান থেকে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর তিনি ফোন করে জানান, তাকে চার তলার একটি ভবনের নিচতলায় রাখা হয়েছে। স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তার ওপর চলে যৌন নির্যাতন। মালিক যাওয়ার সময় বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেন।
স্ত্রী তাকে বলেন, "কোনো প্রতিবাদ করলে চলে নির্যাতন। আমি জানি তুমি আমাকে ক্ষমা করবা না। তার পরও তুমি আমার সব। আমাকে এই গজবের হাত থেকে নিয়ে যাও। আমি বাঁচতে চাই"।
স্ত্রীর এ আকুতি শোনার পর থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন স্বামী।
তিনি জানান, এর এক সপ্তাহ পর একজনের পরামর্শে তিনি স্ত্রীকে বলেছিলেন বন্দিদশা থেকে ছুটে গিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হতে। তার কথামতো স্ত্রী কৌশলে বের হয়ে গেলে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়ার সময় দুই দিন পর কথিত মালিক তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। এর পর থেকে স্ত্রীর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছেন না। স্ত্রী এখনো বেঁচে আছেন, না মরে গেছে তা-ও জানতে পারছেন না।
তিনি আরো জানান, স্ত্রীকে সৌদি আরব থেকে ফিরিয়ে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ, র্যাবের কাছে গিয়েও কোনো কাজে আসেনি। এই অবস্থায় তিনি কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, "দুই ছেলের কাছ থেকে জেনেছি, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার শাহজাহান নামের এক ব্যক্তি আমার স্ত্রীকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছে"।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাজাহানের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায়। লক্ষ্মীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে নেমে সরকারবাড়ির মফিজ উদ্দিনের ছেলে শাহজাহান বললে অনেকেই চিনে। তবে তিনি বাড়িতে কম থাকেন। ঢাকা ও নরসিংদীতে বেশি থাকেন। বর্তমানে তিনি নরসিংদী আছেন।
লক্ষ্মীগঞ্জে খোঁজ নিলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লোকজন জানায়, শাহজাহান এলাকায় হঠাত্ আসে। কোথায় কী করে কেউ জানে না।
তবে তার ভাই কবিরাজ মো. ফজলুল হক বলেন, "শাহজাহান দীর্ঘদিন ধরে তার শ্বশুরবাড়ি নরসিংদীর মাধবদীতে বসবাস করে। সেখানকার লোকজনের সঙ্গে সে ব্যবসা করে"। তবে কী ব্যবসা তা তিনি জানাতে পারেননি।
এদিকে শাহজাহানের কর্মস্থল ফয়সাল এন্টারপ্রাইজের মালিক মোজাম্মেল হক মুকুল বলেন, "ওই মহিলা যেসব অভিযোগ করেছেন সব মিথ্যা। তার সঙ্গে আমার গত সপ্তাহেও কথা হয়েছে। তিনি বাঙালি খাবার ছাড়া খেতে পারেন না। এ কারণে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তার কাছে মোবাইল ফোন না থাকায় তিনি সাময়িকভাবে যোগাযোগ করতে পারছেন না"।
এই বিষয়ে নান্দাইল থানার ওসি মো. আতাউর রহমান বলেন, "দালালদের নাম-পরিচয়, মোবাইল নম্বরসহ লিখিত অভিযোগ দিলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব"।