পদ্মশ্রী পেলেন বৃক্ষমাতা থিম্মাক্কার

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:১১

জাগরণীয়া ডেস্ক

২৫ বছরের সংসারে সন্তান না হওয়ায় রক্ষণশীল সমাজ একঘরে করে রেখেছিল কর্ণাটকের চিক্কাইয়া-থিম্মাক্কা দম্পতিকে। অথচ বর্তমানে আট হাজার সন্তানের বৃক্ষমাতা থিমাক্কা বন্ধ করে দিলেন সকলের মুখ, পেলেন পদ্মশ্রীর সম্মান।

পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়নের কারণেই পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হওয়া বর্তমানে ১০৬ বছর বয়সী থিম্মাক্কার জীবন সহজ ছিল না। গর্ভধারণ করতে না পারলে নাকি নারী পূর্ণতা পান না– এই প্রচলিত ধারণার কোপে পড়ে জীবনটা শেষ হতে বসেছিল কর্নাটকের গুব্বি তালুকের বাসিন্দা বেকাল চিক্কাইয়া এবং তার স্ত্রী থিম্মাক্কার। নারী বলে সমাজের রোষানলটা ছিল থিম্মাকার উপরেই বেশি। সেই ‘অপরাধে’ তাকে একঘরে করে দেয় সমাজ। ছিল না পড়াশুনা আর জমিজমা। কোনরকমে দিনমজুর হিসেবেই জীবন পার করছিলেন চিক্কাইয়া-থিম্মাক্কা দম্পতি। কিন্তু সন্তান না হওয়ায় সামাজিক কুসংস্কারে পড়ে কাজের জায়গায়ও নিয়মিত আক্রমণ ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মুখে পড়তেন থিম্মাক্কা। কিন্তু হঠাৎ-ই একদিন মনে হলো, সারাজীবন এমন অপমান সহ্য করে চলা যায় না। কিছু একটা করে সমাজের মুখ বন্ধ করতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে মা না হওয়ার গ্লানি ঘুচে যায়। ঠিক করলেন, গাছ লাগাবেন আর তাদেরই বড় করবেন সন্তানসম স্নেহে। দেখিয়ে দেবেন, মাতৃত্ব মানে কেবল নিজের শরীরের ভিতরে একটি ভ্রূণ ধারণ করা নয়, মাতৃত্ব মানে কেবল নিজের শরীরের ভিতর থেকে জন্ম দেওয়া একটা মানবসন্তান নয়। মাতৃত্ব মানে নতুন এক প্রাণের যত্ন।

আজ থেকে প্রায় ছ’দশক আগের কথা। প্রথম বছরে ১০টি বট গাছ লাগালেন থিম্মাক্কা। বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে, একটি খালি জায়গায় গিয়ে গাছগুলি লাগালেন তিনি। ওই ১০টি গাছই তার প্রথম সন্তান। পরের বছরে সেই সংখ্যাটা হল ১৫, তার পরের বছরে ২০। তিন বছরের মাথায় ৪৫টি সন্তান নিয়ে ভরা সংসার হল থিম্মাক্কার। পাশাপাশি দিনমজুরের কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। কাজ শেষে নেন নিজের সন্তানদের যত্ন।

রোজ চার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গাছগুলিতে পানি দিয়ে আসতেন। গরু-ছাগলের হাত থেকে চারাগাছগুলিকে বাঁচাতে কাঁটাতারের বেড়াও দিতেন দু’জনে মিলে। থিম্মাক্কার নিজের গ্রাম হুলিকাল থেকে কুদুর অবধি মোট ২৮৪টি বটগাছের চারা লাগিয়ে রাস্তার ছায়াশীতল এক সবুজের সারি গড়ে তুলেছেন থিম্মাক্কা। 

এক সময়ে থিম্মাক্কার কাজে মুগ্ধ হয় তার গ্রামবাসী। বুঝতে পারে, সন্তান না থাকলে গাছ দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন সবুজের এক মহারণ্য। তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে, গ্রামবাসীরাই তাকে ‘সালুমারাদা’ বলে ডাকতে শুরু করেন। কন্নড় ভাষায় সালুমারাদা শব্দের অর্থ, ‘গাছেদের সারি’। একে একে স্থানীয়দের মাধ্যমে সারা ভারতে আলোচনায় চলে আসেন থিম্মাক্কা। ১৯৯৬ সালে ‘জাতীয় নাগরিক সম্মান’ পান তিনি। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থাও  এই বৃক্ষজননীর কাজ দেখতে দূর দূর থেকে ছুটে আসেন। বর্তমানে বৃক্ষমাতা থিম্মাক্কার আট হাজার সন্তানের যত্ন সরকারিভাবে নেয়া হচ্ছে। 

থিম্মাক্কা বলেছিলেন, নিজের সন্তানদের নিজে প্রতিপালন করতে পারলেই তিনি খুশি হতেন। কারণ কখনোই কারও সাহায্য চাননি তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত