ভ্রমণপিপাসুদের জন্য টিপস
প্রকাশ | ৩০ এপ্রিল ২০১৭, ২২:৪৯
আমরা কম বেশি সবাই নতুন নতুন জায়গায় ভ্রমণ করতে পছন্দ করি। পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য দেখতে সবাই চায়। আর তাই একটু সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে দূরে কোথাও। কাছে কিংবা দূরে যেখানেই হোক, ভ্রমণ আপনার মন ও শরীর দুটোর জন্যই উপকারী। অনেকের কাছে ভ্রমণ একটি নেশা, আবার কেউ হয়তো পেশার কারণে ছুটছেন দেশ হতে দেশান্তরে। তবে যে কারণেই ভ্রমণ করুন না কেন, অবশ্যই সবার আগে নিজের নিরাপত্তার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। কারণ অনেক সময় আমরা অনেক পাহাড় থেকে পর্বতে, নদী থেকে সমুদ্রে, গ্রাম থেকে জঙ্গলে ভ্রমণ করতে চলে যাই।
কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা চিন্তা করলে আমাদের মনে কল্পনার শেষ থাকে না। তাই ভ্রমণের পূর্বশর্ত হল পরিকল্পনা।
কোথায় যাবেন? কীভাবে যাবেন? কতদিন থাকবেন? ইত্যাদি প্রশ্নের জবাব তৈরি করাই পরিকল্পনা। তাই কোথাও ঘুরতে গেলে সর্বপ্রথম যা করতে হবে তা হচ্ছে পরিকল্পনা। এক সপ্তাহ আগে থেকে লিস্ট করা শুরু করুন। একটি খাতা ও একট কলম নিন আর লিখে ফেলুন সম্ভাব্য গন্তব্যস্থলের নাম। এরপর ঠিক করুন সে জায়গার কোথায় কোথায় ঘুরবেন এবং ট্যুরে সারাদিন কী করবেন, কোন হোটেলে থাকবেন, কোন রেস্টুরেন্টে খাবেন, কী খাবেন ইত্যাদি। আপাতদৃষ্টিতে এ বিষয়গুলোকে অনেকেই গুরুত্ব না দিলেও, এগুলো কিন্তু জীবনের মূল্যবান একটি অংশ। কারণ ভ্রমণে প্রচুর পরিশ্রম হয়। তাই এ-সংক্রান্ত একটি তালিকা আগে থেকেই ঠিক করে নিন।
হোটেলে থাকলে হোটেল ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচের আগে থেকেই খোঁজ নিয়ে রাখুন। আর ক্যাম্প করলে সেটির উপযোগিতা ও নিরাপত্তার বিষয়টিও জেনে নিন। এতে সারাদিনে সময় কিছু বাঁচবে, সব রকম পরিস্থিতির জন্যও আপনি মোটামুটি প্রস্তুত থাকবেন।
যখন আপনার পরিকল্পনা একদম ঠিকঠাক হয়ে যাবে, তখন যে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে তা হচ্ছে প্রথমেই ট্রেন, বাস অথবা প্লেনের টিকেটের টাইম, ডেট সবকিছু আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখুন। কারণ এখন অনেক মানুষ ঘুরতে যায়। টিকেট না পাওয়ার কারণে যেন আপনার সুন্দর একটি পরিকল্পনা ভেস্তে না যায়। কিন্তু অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেন, প্লেন, লঞ্চ অথবা বাস অধিক যাত্রীবাহী গাড়ি এড়িয়ে চলুন। গাড়িতে কখনোই অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু খাবেন না। রাতের বেলা একা ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন।
আমি যখনই কোথাও ঘুরতে যাই, তার আগের রাত আমার একটুও ঘুম হয় না। ব্যাগে কী কী নিবো, যদি কোনোকিছু বাদ পড়ে যায়। কত টাকা নেবো, যদি টাকা শেষ হয়ে যায়! এই রকম আরও নানা উদ্ভট চিন্তায় রাতে ঘুমই হয় না। এসব চিন্তা এড়াতে তাই আগে থেকেই টাকা, ব্যাগ গুছিয়ে রাখা উচিৎ।
অবশ্যই প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র খুব খেয়াল করে ব্যাগে নিন। টুথব্রাশ থেকে শুরু করে কোনো কিছুই বাদ দিবেন না। চাইলে ডেটল, এ্যান্টিসেপটিক ক্রিম এবং প্লাস্টার সঙ্গে নিন। বলা তো যায় না, কোনো কাজে আসলেও আসতে পারে। যেকোনো মুখ্য সময়ে কাজে লেগে যেতে পারে। আবহাওয়া মানিয়ে নিতে না পারলে ঘুরতে গিয়ে অনেকের আবার জ্বর-সর্দি-কাশি হয়ে যায়। তাই গুরুত্বপূর্ণ যেমন জ্বর, পেট খারাপ, অ্যাসিডিটি, বমি, মাথা ব্যথার মেডিসিনগুলো বেশি খেয়াল করে ব্যাগে রাখুন। এতে একদম ভুল করবেন না।
ফোনের চার্জার, হেডফোন নিতে ভুলবেন না। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে ফোন সম্পূর্ণ চার্জ করে নিন। জরুরী কনটাক্টগুলো আগেই সেভ করে নিন। সুন্দর সূর্যাস্তের ছবি তুলতে গিয়ে দেখেছেন আপনার ক্যামেরার ব্যাটারি শেষ? এবং আপনার কোনো ব্যাকআপও নেই? এমন দুর্ভাগ্য যাতে আপনার না হয় তাই কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি এক্সট্রা ব্যাটারি এখনই ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখুন। কাপড়-চোপড়ের ক্ষেত্রে যেগুলো আরামদায়ক, সেগুলোই নেবেন। আরামদায়ক পোশাক না পরলে আপনার মন-মেজাজ দু’টোই খারাপ হবে। আর হ্যাঁ অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে কাপড় নেবেন। নাহলে বৃষ্টি পড়লে, পানিতে গোসল করতে নামলে কাপড় ভিজবে, ময়লা হবে। তখন যাতে কোনো ঝামেলায় পড়তে না হয়, তাই আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
বনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সঙ্গে পতঙ্গ প্রতিরোধক স্প্রে অথবা ওডোমস ক্রিম নিবেন। সূর্যের আলো প্রতিরোধকের জন্য সানগ্লাস ও হ্যাট নিয়ে নেবেন। যখন আপনার মনে হবে আপনি প্রয়োজনীয় সব ব্যাগে ঢুকিয়েছেন, তখন অ্যালার্ম দিয়ে বাতি বন্ধ করে দিন, এমনিতেই ঘুম চলে আসবে। সকালে সময়মত ঘুম থেকে উঠতে ভুলবেন না কিন্তু!
কখনো ট্রেন, প্লেন, বাস, লঞ্চ মিস করার অভিজ্ঞতা আছে? যেহেতু ঢাকা জ্যামের শহর, তাই কোথাও যাওয়ার আগে অন্তত দুই ঘণ্টা আগে ঘর থেকে বের হবেন। তা না হলে এমন অনেক অভিজ্ঞতা হবে যা আগে কখনও ছিল না।
যেখানে ট্যুর করছেন, সেখানকার সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখাবেন। তবে নিজের সংস্কৃতির কথাও ভুলে যাবেন না। কোনো দেশে ঘুরতে গেলে কম সময়ে সাশ্রয়ীভাবে তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার একটা উপায় হলো ওই দেশি কোনো উৎসবে অংশগ্রহণ করা। যেমন- ইন্ডিয়ার হোলি, ব্রাজিলের রিও ফেস্টিভাল, USA-তে ক্রিসমাস ইত্যাদি।
খাবারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। যা কিছু কিনবেন, খাবেন, দাম জেনে নেবেন আগেই। আর খাবার অপরিচিত হলে আগেই সেটির বিষয়ে জেনে নেবেন। কারণ খাবার সংস্কৃতি আপনার সঙ্গে বা আপনার অঞ্চলের সঙ্গে না-ও মিলতে পারে। আনন্দ করতে গিয়ে বেশি আবেগপ্রবণ হবেন না। অন্যের ডিস্টার্ব হয় এমন কাজ বা আনন্দ করতে যাবেন না। হোটেলে হৈচৈ বা চিৎকার চেঁচামেচি করবেন না। নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকবেন না। এমন কি প্রকৃতিকেও ডিস্টার্ব করবেন না। কিংবা গাইডের নির্দেশনা অমান্য করে কোনো কাজ করবেন না।
নিজের সঙ্গীদের ছেড়ে বা না বলে একা একা কোথাও চলে যাবেন না। যদি যেতেই হয়, তাহলে মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে যাবেন। বনে বা হাওরে অপচনশীল পলিথিন, প্লেট, বোতল, চকোলেটের খোসা, শ্যাম্পুর খোসা, ফেলবে না। এই প্রকৃতি দেখার অধিকার যেমন আমাদের আছে, তেমনি প্রকৃতি রক্ষা করার দায়িত্বটাও কিন্তু আমাদেরই নিতে হবে। বনে চলাফেরার সময় যথাসম্ভব নিশ্চুপ চলুন এবং বন্য প্রাণিদের বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকুন।
ট্যুরের সময়টুকুতে খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে একদমই অনিয়ম করবেন না। আবার পেটে সমস্যা হতে পারে এমন খাবারও খাবেন না। যেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন, সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কিংবা অন্য ট্যুরিস্টদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবেন না। বরং স্থানীয় মানুষগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করুন। গ্রামের মানুষগুলো কিন্তু অনেক সহজ সরল মনের হয়। একটু হেসে কথা বললেই ওরা আপনার যেকোনো সমস্যায় এগিয়ে আসবে।
যেখানেই ঘুরতে যাবেন অনেক বেশি ছবি তুলুন। সবকিছুর ছবি তুলুন। কারণ আপনি হয়ত মাত্র একবারই সে জায়গাটা দেখবেন। লোকে কী বলবে ভেবে চুপচাপ ঘুরে চলে আসবেন না। কারণ আজকের তোলা ছবিটা পরবর্তীতে স্যুভেনির হিসেবে আপনার কাছে থাকবে আজীবন। শুধু মনে রাখবেন- একবার লেন্সের পেছন থেকে বেরিয়ে আসার পর শুধু দৃশ্যটিই উপভোগ করবেন।
ভ্রমণের খরচটা বাঁচানোর সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে চান, তাহলে ভ্রমণকারী গ্রুপে বা বন্ধুরা দলবদ্ধ হয়ে ভ্রমণে যেতে পারেন। আর যত বেশি মানুষ, তত বেশি মজা। যদি এক শহর থেকে আরেক শহর বা দূরের পথ আপনি ট্রেন বা গাড়িতে করে যান, তাহলে তা অবশ্যই রাতে করুন। এতে আপনার রাতে থাকার হোটেলের খরচও বেঁচে যাবে, আবার আপনি একটু অভ্যস্ত হয়ে গেলে গাড়িতেই ঘুমিয়ে নিতে পারবেন। তবে অবশ্যই নিজের ব্যাগ ও মূল্যবান জিনিসপত্র সামলে রাখবেন।
কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে ওয়েবসাইটে এবং ট্যুর গাইডবুক থেকে সেই স্থান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। ট্যুরিজম ওয়েবসাইট-ব্লগ পড়ে, মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে সেখানের সম্পর্কিত হোটেল বা এয়ারলাইনে কী কী অফার চলছে তা জেনে নিন এবং দাম তুলনা করে নিন।
ট্যুরে সবকিছু যে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। না চাইলেও সামনে পড়তে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ঝামেলা অথবা যেকোনো বিপদ-আপদ। সেগুলো কীভাবে সামলাবেন, তার প্রাথমিক প্রস্তুতি আগের থেকেই নিয়ে রাখা ভালো।