প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরা সুনামগঞ্জ
প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৬, ১৭:১৫ | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬, ১৭:৪০
সংস্কৃতির তীর্থ স্থান কিংবা মৎস্য, পাথর-ধানের সম্পদ হিসেবে পরিচিতি এই সুনামগঞ্জ। কিছু কিছু বঞ্চনার গ্লানি টানলেও অনেক ক্ষেত্রে সুনামগঞ্জ বিলিয়ে দিয়েছে তার রূপ-রহস্য! প্রাকৃতিক সম্পদও যেন হাওর ঘেরা জনপদ সুনামগঞ্জকে দেশ কিংবা দেশের সীমার বাইরেও আলাদাভাবে পরিচয় করে দিয়েছে।
মরমী কবি হাছন রাজা ও বাউল সাধক শাহ আবদুল করিমের এই জেলায় রয়েছে স্বচ্ছ জল আর ছায়াবৃক্ষ হিজল করচের হাওর ‘টাঙ্গুয়া’। যার অবস্থান সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে (বর্ষা মৌসুমে) ১০৭ কিলোমিটার দূরত্ব ভাটির জনপদ বলে খ্যাত সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে। হেমন্তে এর দূরত্ব আরও বাড়ে। আবার বর্ষায় এ হাওরে জলরাশির আয়তনও বেড়ে যায়।
তাহিরপুর-ধর্মপাশা উপজেলার ৯ হাজার ৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর। হাওর এলাকায় ছোট-বড় ৫২টি বিল ও ৮৮টি গ্রাম রয়েছে। ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের কোলঘেঁষা টাঙ্গুয়ার হাওর পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। প্রকৃতির অবিশ্বাস্য দান রয়েছে যেখানে। ত্রি মিতালীর দেখা মেলে এই ‘টাঙ্গুয়ার’ হাওরে।
সেপ্টেম্বর মাসে প্রকৃতির অফুরন্ত দান টাঙ্গুয়ার হাওরে ‘জ্যোৎস্না’ উৎসব হয়ে গেল।
এদিকে টাঙ্গুয়া হাওরের নয়নাভিরাম দৃশ্য মুগ্ধ করে ভ্রমণপিপাসুদের। যেখানে অনবরত শোনা যায় অতিথি পাখির কলতান। আসছে শীতে অতিথি পাখির আগমন ঘটবে স্বচ্ছ জলের হাওর টাঙ্গুয়ায়। একই সঙ্গে আকাশ-পাহাড় ও জলের মিতালীও দারুণ কাছে টানে ভ্রমণপ্রেমীদের! তাই দেশ-বিদেশ থেকে অগণিত পর্যটক ছুটে যান টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য আর জীববৈচিত্র্য উপভোগ করতে।
আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকায় প্রতিনিয়ত সেখানে ঘুরতে যাচ্ছেন পর্যটকরা। আর এই পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই টাঙ্গুয়ার হাওরে কাজ শুরু করবে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
১১ নভেম্বর (শুক্রবার)টাঙ্গুয়ার হাওরে সাংবাদিকদের জন্য ব্যতিক্রমী ভ্রমণের আয়োজন করেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি। ভ্রমণকালে টাঙ্গুয়ার হাওরে ওয়াচ টাওয়ার এলাকা ও ট্যুরিস্ট পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন ঘুরে দেখেন। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম।
ডিআইজি মিজানুর রহমান বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসেন। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে পাশাপাশি পর্যটকদের সুবিধার জন্য আর কী কী করা যায়, এ জন্যই মূলত এখানে আসা। তা ছাড়া ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যক্রম এখনও শুরু করেনি। আমরা চাচ্ছি এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, সঠিক নিরাপত্তা থাকলে এখানে অনেক অনেক পর্যটক আসবে। তবে এখানে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে যাতায়াত। এ এলাকায় পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেই, টয়লেট সুবিধাও নেই। সরকারের উচ্চ পর্যায় এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছেন।
কীভাবে যাবে টাঙ্গুয়ায়:
বিভাগীয় শহর সিলেট থেকে প্রাইভেট বাসে কিংবা সুনামগঞ্জমুখী বাসে যাতায়াত করা যাবে। সিলেট থেকে প্রথমে সুনামগঞ্জ যেতে হবে। দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার। সুনামগঞ্জ শহরে প্রবেশের আগে মল্লিকপুরস্থ সুরমা নদীর ওপর দিয়ে আবদুজ জহুর সেতু হয়ে তাহিরপুর যেতে হবে। এই সেতু থেকে টাঙ্গুয়ার উপজেলা তাহিরপুরের দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটার। প্রাইভেট বাসই ভরসা, স্থানীয় ছোট ছোট ব্যাটারি চালিত রিকশা আর মোটরসাইকেল তো রয়েছেই। যাতায়াত খরচ একটু বেশিই হবে। তাহিরপুর পৌঁছার পর ইঞ্জিন চালিত নৌকাযোগে প্রায় ২ ঘণ্টার বিরামহীন পথ চলার পর হিজল-করচ, স্বচ্ছ জল আর অতিথি পাখির আনাগোনায় পৌঁছা যাবে। প্রায় ৫ ঘণ্টার ভ্রমণ। তাই সুযোগ করেই তাহিরপুর কিংবা ভালো কোথাও নাস্তা সেরে নিতে হবে।