বাড়ি ফিরেও ভোগান্তি নারী ফুটবলারদের
প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৩:১৬
টানা দু’বার এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ চ্যাম্পিয়নশিপের গৌরব অর্জনের পর এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বেও অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন, দেশের জন্য এতো বড় সাফল্য নিয়ে আসার পরেও কলসিন্দুরের সেই মেয়েদের বাড়ি ফিরতে হয়েছিল লোকাল বাসে। পথে জুটেছিল নানাজনের নানা কটূক্তি। সাথে থাকেনি কোন অভিভাবক কিংবা বাফুফের কোন কর্মকর্তা। কিন্তু এখানেই যেন ভোগান্তির শেষ নয়। বাড়ি ফেরার পর পুরস্কারের বদলে তিরস্কার জুটেছে এসব সোনার মেয়েদের।
অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল টিমে খেলছেন এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বে অপরাজেয় থেকে গত মঙ্গলবার (০৬ সেপ্টেম্বর) বাড়ি ফিরেছেন ময়মনসিংহের গারো পাহাড়ের কোলঘেঁষা গ্রাম কলসিন্দুরের ৯ ফুটবলার। কিন্তু বাড়ি ফেরার একদিন পরেই তাদের আনন্দ যেন ফিকে হয়ে গেছে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রীষ্মকালীন ফুটবল প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে কুমিল্লা যাচ্ছে কলসিন্দুর উচ্চ বিদ্যালয়। এ প্রতিযোগিতায় নিজেদের বিদ্যালয়ের হয়ে খেলতে সানজিদা-মার্জিয়া-তাসলিমা ও তহুরাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বুধবার (০৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিদ্যালয়ে নিজেদের অভিভাবকসহ ডেকে আনা হয় ওই ৯ নারী ফুটবলারকে।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক তাসলিমা বলেন, "শিক্ষকদের তলবে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে আমরা স্কুলে যাই। কিন্তু ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাফুফে আমাদের সংবর্ধনা দেবে। এ জন্য ১৬ সেপ্টেম্বর আমাদের ঢাকায় যেতে হবে। সাফ ফুটবলের ক্যাম্পও শুরু হবে ক’দিন বাদেই। এ সব বিষয় তুলে ধরলে উল্টো আমাদের শরীরচর্চা শিক্ষক জোবেদ আলী ক্ষেপে যান"।
তাসলিমা বলেন, "শিক্ষকরা আমাদের অভিভাবকদের বলেছেন, বন্ড সই দিয়ে আপনাদের মেয়েদের নিয়ে যান। ওরা আর কোনদিন স্কুলে পড়া তো দূরের কথা, নাম নিলেই ওদের জুতাপেটা করে দাঁত ভেঙে দেওয়া হবে"।
উদ্বিঘ্ন তাসলিমা বলেন, "সামনে আমাদের কয়েকজনের টেস্ট পরীক্ষা। যদি আমাদের রেজিস্ট্রেশন না করে টিসি দিয়ে দেয় তাহলে তো আর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হবে না"।
সেরা এগারোতে খেলা গোলকিপার মাহমুদা আক্তারও একই অভিযোগ করেন।
তাসলিমার বাবা সবুজ মিয়া’ অভিযোগ করে বলেন, "না খেললে আমগর মেয়েগরে বিদ্যালয় থেইক্ক্যা বাইর কইরা দিবার হুমকি দিছে জোবেদ স্যার। আমারেও মারপিট করছে। আমি পুলিশরে জানাইছি"।
নাজমার বাবা আবুল কালাম বলেন, "মাস্টাররা আমগরে ডাইক্যা নিয়া অপমান করছে। মাইয়াগরে বহিষ্কার করবার হুমকি দিছে"।
অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক জোবেদ আলী তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলম জানান, অভিযুক্ত শিক্ষককে ধরতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। তাকে ধরতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে ধোবাউড়াগামী লোকাল বাসে অভিভাবকহীন ও অনিরাপদ অবস্থায় বাড়ি ফেরে কলসিন্দুরের ৯ ফুটবলার। পথে জুটে নানা কটূক্তি ও তিরস্কার। এই ঘটনায় ভুল স্বীকার করেছেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। ভবিষ্যতে এই নারী ফুটবলারদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি খেয়াল রাখা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।