ঝিনাইদহের মেয়ে সোনিয়া রিও অলিম্পিকে
প্রকাশ | ০৮ আগস্ট ২০১৬, ০০:৪৩
শনিবার জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠেছে আধুনিক অলিম্পিকের ৩১তম আসরের। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে ১৭দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এই ক্রীড়াযজ্ঞে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ দলও। গলফ, সাঁতার, শ্যুটিং, অ্যাথলেটিকস ও আর্চারি এই পাঁচটি ইভেন্টে বাংলাদেশের হয়ে সাতজন ক্রীড়াবিদ নিজেদের সেরাটা দেওয়ার লড়াইয়ে নামবেন। এর মধ্যে রয়েছেন ঝিনাইদহের মেয়ে সাঁতারু সোনিয়া আক্তার।
ঝিনাইদহ শহরের হাটখোলা বাজারে পান বিক্রি করতেন আনিসুর রহমান। পানের ডালা সাজিয়ে বসে থাকতেন, মাথার ওপর দিয়ে বয়ে যেত রোদ-বৃষ্টি। ছেলেমেয়েদের মুখে খাবার জোগাতে কী যে কষ্ট করেছেন একসময়! এখন দিন বদলেছে। সেই হাটখোলা বাজারেই এখন বড়সড় মুদি দোকান দিয়েছেন আনিসুর রহমান। বাড়িতে উঠেছে পাকা ঘর। দুঃখ ঘুচেছে। সবই সম্ভব হয়েছে মেয়ে, সাঁতারু সোনিয়া আক্তারের সুবাদে।
প্রতিবেশীরা সোনিয়ার বাবাকে ডেকে বলত, ‘মেয়ে মানুষ সাঁতার শিখে কী হবে?’ কিন্তু বাবা কখনোই মেয়েকে বাধা দেননি। ফলে কাল পরিক্রমায় সোনিয়া ঝিনাইদহের নবগঙ্গা থেকে শুরু করে মাতিয়েছেন মিরপুরের জাতীয় সাঁতারপুল।
বড় ভাই সাঁতার শিখতেন ‘জাহিদ স্যারের’ কাছে। ছোট বোন সোনিয়াও বায়না ধরেন সাঁতার শেখার। বায়না মেটাতে ভাই বোনকে নিয়ে যান কোচের কাছে।
২০০৩ সালে যশোর শিক্ষা বোর্ডের হয়ে বয়সভিত্তিক সাঁতার দিয়ে শুরু সোনিয়ার। জুনিয়রে অংশ নিয়ে ২০০৬ সালে জেতেন ১১টি সোনা, ২টি ব্রোঞ্জ। আর ২০১০ সালে ১১টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে ১০টিতেই জেতেন সোনা। এর মধ্যে ৯টিতে ছিল জাতীয় রেকর্ড। ঘরোয়া টুর্নামেন্টে এমন সাফল্যই তাকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
সোনিয়া আক্তার এবার অলিম্পিকে সাঁতারের ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে অংশ নেবেন। ঝিনাইদহের এই বিখ্যাত সাঁতারু এবারই প্রথম অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন।
সোনিয়া প্রথম আন্তর্জাতিক মিটে অংশ নেন সিঙ্গাপুরে ২০১০ যুব অলিম্পিক গেমসে, ২০১১-তে যুক্তরাজ্যের আইল অব ম্যানে অংশ নেন কমনওয়েলথ যুব গেমসে। এরপর সাঁতরেছেন ২০১৪ কাতার বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০১৫ কাজান বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে।
সোনিয়ার বাড়ি ঝিনাইদহ শহরের পাশে ভুটিয়ারগাতি গ্রামে। সোনিয়া ওই গ্রামেরই মাদ্রাসায় আলিম পড়ছেন।
দীর্ঘদিন বাংলাদেশ আনসারের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরে এ বছর সোনিয়া স্থায়ী চাকরি পেয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে।