মঙ্গলে প্রাণের ইঙ্গিত মিলেছিল ৪০ বছর আগেই
প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৬, ১৪:৫৮ | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৬, ১৫:০২
মঙ্গল গ্রহে প্রাণের ইঙ্গিত মিলেছিল ৪০ বছর আগেই। মঙ্গলের মাটিতে মিশে আছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়ার মতো বহু কোটি অণুজীব। এমনটাই দাবি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একাংশের।
১৯৭৬ সালে পৃথিবী থেকে প্রথম যে দু’টি রোভার মহাকাশযান ‘ভাইকিং-১’, ‘ভাইকিং-২’ মঙ্গল গ্রহে নেমে সেখান থেকে মাটি তুলে এনেছিল, তা পরীক্ষা করেই মঙ্গল গ্রহে প্রাণের প্রমাণ মিলেছিল। খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞান-জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোবায়োলজি’র প্রকাশিত গবেষণাপত্রে এমনটিই দাবি করেছেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক গিলবার্ট লেভিন ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেল্থের জীববিজ্ঞানী প্যাট্রিসিয়া অ্যান স্ট্র্যাট।
মঙ্গলে যে এখনও অণুজীব বেঁচে থাকতে পারে, কী ভাবে তার প্রমাণ পেয়েছিলেন জ্যোতির্জীববিজ্ঞানীরা?
সম্প্রতি এমন প্রশ্নের জবাবে আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গিলবার্ট লেভিন জানান, ‘‘ভাইকিং-১’ ও ‘ভাইকিং-২’, এই দুর্টি রোভার মহাকাশযান সেই সময় মঙ্গলে নেমে, সেখান থেকে ‘লাল গ্রহে’র মাটি তুলে এনেছিল। তারপর সেই মাটি ল্যাবরেটরিতে পরিশোধিত পানির মধ্যে রাখা হয়েছিল। আর সেই পানির মধ্যে রাখা হয়েছিল প্রচুর পরিমাণে নিউট্রিয়েন্ট। ওই পরীক্ষাটির নাম ছিল- ‘ল্যাব্ড রিলিজ (এলআর) এক্সপেরিমেন্ট’। ওই পানিতে রাখা নিউট্রিয়েন্টের সঙ্গে মঙ্গল গ্রহ থেকে তুলে আনা মাটি ভাল ভাবে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দেখার চেষ্টা করা হয়েছিল, মঙ্গলের মাটিতে এখনও সত্যি-সত্যিই অণুজীব রয়েছে কি না। অণুজীব থাকলে পানিতে মেশানো নিউট্রিয়েন্টগুলিকে পানি থেকে শুষে নেওয়ার কথা ‘লাল গ্রহে’র মাটির। আর ঠিক সেটাই হয়েছিল। পানিতে মেশানো প্রচুর নিউট্রিয়েন্ট শুষে নিয়েছিল মঙ্গল থেকে তুলে আনা মাটি। ওই নিউট্রিয়েন্টগুলির বিপাক হয়েছিল। দ্রবণের রং পরিবর্তন হয়েছিল, প্রত্যাশিত ভাবেই। প্রত্যাশিত মাত্রাতেও। শুধু তাই নয়, ওই নিউট্রিয়েন্টগুলির বিপাক বা মেটাবলিজমের পর সেই দ্রবণ বা সলিউশন থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থের অণু বেরিয়ে আসতেও দেখা গিয়েছিল। ঠিক যে ভাবে পৃথিবীর মাটিতে অণুজীব থাকলে তা পানিতে মেশানো নিউট্রিয়েন্টগুলির সঙ্গে বিক্রিয়া করে, ঠিক সেই ভাবেই। এটাই পরোক্ষে প্রমাণ করেছে, মঙ্গলের মাটিতে এখনও রয়েছে অণুজীবের অস্তিত্ব। প্রাণের অস্তিত্ব।’’
তাহলে কেন সেই সময় মঙ্গলের মাটিতে প্রাণের ইঙ্গিত পাওয়ার খবরটি ঘোষণা করেনি নাসা?
এমন প্রশ্নের জবাবে নাসার অ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্ট ক্রিস ম্যাকে জানান, প্রথমত, তিনটি পরীক্ষার মধ্যে বাকি দু’টি পরীক্ষায় তেমন উল্লেখযোগ্য কোন প্রমাণ বা ইঙ্গিত মেলেনি। দ্বিতীয়ত, মঙ্গলের মাটি বা বায়ুমণ্ডলে কোন জৈব পদার্থের হদিশ মেলেনি তখনও। তাই প্রশ্ন উঠেছিল, যদি কোন জৈব পদার্থের অস্তিত্বই না থাকে মঙ্গলের মাটি বা বায়ুমণ্ডলে, তা হলে ‘লাল গ্রহে’র মাটিতে যদি থাকেও-বা অণুজীব এখনও, বেঁচে থাকার জন্য তারা বিপাক বা মেটাবলিজমটা করবে কী ভাবে? সে ক্ষেত্রে হয়তো কোন নন-বায়োলজিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে ওই বিপাক বা মেটাবলিজম ঘটে থাকতে পারে।'
গবেষণাপত্রে লেভিন আরো জানান, এ বার সাম্প্রতিক তথ্যের ভিত্তিতে হয়তো ওই পরীক্ষার ফলাফল আবার খতিয়ে দেখা যেতে পারে। ‘লাল গ্রহে’ পানি, মিথেনের অস্তিত্ব সাম্প্রতিক অতীতে প্রমাণিত হয়েছে। তাই প্রাণ যে সেখানে পৃথিবীর মতো কোন পথেই সৃষ্টি হয়েছিল, সেই বিশ্বাস আরও জোরালো হয়েছে আমাদের। তারই আলোকে এ বার আমাদের ৪০ বছর আগেকার পরীক্ষার আবার খতিয়ে দেখা উচিত।’’
এবার গবেষকদের জোরালো দাবি, মঙ্গলের মাটিতে এখনও রয়েছে অণুজীবের মতো প্রাণের অস্তিত্ব!
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা