ইউটিউবে মনিটাইজেশনের পর যা করবেন

প্রকাশ | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:০৪ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:১০

অনলাইন ডেস্ক

মনিটাইজেশন তো হলো; কিন্তু তাতেই কি শেষ হয়ে গেল ইউটিউবারের সব কাজ? অনেক ধরনের খুঁটিনাটি বিষয় তখনো রয়ে যায়। অ্যাডসেন্সের অ্যাকাউন্ট কিভাবে করতে হবে, চ্যানেলকে কিভাবে বড় করবেন, সার্চে ইউটিউব ভিডিও কিভাবে প্রথমে আনবেন—এ ধরনের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানাচ্ছেন তুসিন আহম্মেদ।

টাকা পাবেন যেভাবে
মনিটাইজেশন হচ্ছে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা। ইউটিউবারদের ভিডিওতে পপআপ আকারে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন থাকে। এই বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকেই গুগল আপনার ইউটিউব ভিডিও থেকে আয় করে এবং একই সঙ্গে আপনিও গুগল থেকে, মানে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। বিজ্ঞাপনের আয়ের ৪০ শতাংশ ইউটিউব রেখে দেবে এবং বাকি ৬০ শতাংশ টাকা আপনি অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন।

মনিটাইজেশন তো হলো, এবার টাকা কিভাবে পাবেন? গুগল অ্যাডসেন্সের কথা নিশ্চয় শুনে থাকবেন। অ্যাডসেন্স https://www.google.com/adsense কিন্তু শুধু ব্লগ বা ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, অ্যাডসেন্স ইউটিউবেও রয়েছে।

যখন মনিটাইজেশনের জন্য আবেদন করবেন, সেখানে আপনার ঠিকানা দিতে হবে এবং একই সঙ্গে আপনার ব্যাংকের ঠিকানা, অ্যাকাউন্ট নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিতে হবে। অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে প্রথমবার যখন ১০ মার্কিন ডলার জমা হবে তখন ইউটিউব আপনার ঠিকানায় একটি কোড পাঠায়। সেটির জন্য আবেদন করতে হবে। সেই কোডটি দিয়ে ঠিকানা যাচাই করতে হয়। এরপর ১০০ মার্কিন ডলার জমা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ১০০ ডলার হয়ে যাওয়ার পর আপনি যে ব্যাংকের ঠিকানা দিয়েছিলেন সে ঠিকানায় মাসের ২১ তারিখে ডলার পাঠিয়ে দেবে অ্যাডসেন্স। এবার আপনার ব্যাংকটি এই ট্রান্সফারকে প্রসেস করবে, এতে কিছুদিন সময় লাগবে। সাধারণত ২৬ বা ২৭ তারিখেই ব্যাংকে ডলারগুলো টাকা হিসেবে জমা হয়ে যায়। আর তারপর আপনি ব্যাংক থেকে কিংবা বুথ থেকে টাকা তুলে নিতে পারবেন।

ইউটিউব প্রিমিয়ারে কী লাভ হয়?
ইউটিউবে একটি চমৎকার ফিচার হলো ইউটিউব প্রিমিয়ার্স। ধরুন, আপনি একটি ভিডিও তিন দিন পর আপনার চ্যানেলে প্রকাশ করতে চান। ইউটিউব প্রিমিয়ার্স ফিচারটি ব্যবহার করে প্রকাশের আগেই চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারকে জানিয়ে দেওয়া যাবে যে তিন দিন পরে একটি ভিডিও আপনি পাবলিশ করতে যাচ্ছেন। ফলে সাবস্ক্রাইবাররা আগেভাগে জেনে যাবে আপনি কখন ভিডিও পাবলিশ করবেন এবং ওই সময় চ্যানেলে ঢু মারবে। ফলে ভিডিওর ভিউ তুলনামূলকভাবে বেশি হবে এমনটা আশা করা যায়।

কোনো ভিডিও প্রিমিয়ার করতে প্রথমে স্বাভাবিক নিয়মে ভিডিওটিকে ইউটিউবে আপলোড করে, ট্যাগ, টাইটেল ইত্যাদি দিয়ে ডান পাশে থাকা শিডিউল বা প্রকাশের সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। শিডিউল অপশনের যে তারিখে ভিডিওটি পাবলিশ করতে চান, তা দিতে হবে। এরপর ওপরে থাকা প্রিমিয়ার অপশনটি চালু করে দিতে হবে। ভিডিও শিডিউল করার পরে সব সাবস্ক্রাইবারের কাছে নোটিফিকেশন যাবে। যখন নির্দিষ্ট সময় ভিডিওটি পাবলিশ হবে তখনো নোটিফিকেশন যাবে। প্রিমিয়ার ভিডিওটি পাবলিশ হলে লাইভ চ্যাটও করা যাবে। ফলে নিশ্চিত তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক ভিউ থেকে প্রিমিয়ারে অনেক বেশি ভিউ হবে নতুন প্রকাশিত ভিডিওটির।

সার্চে ইউটিউব ভিডিও প্রথমে আনার কৌশল
গুগল সার্চে নিজের ভিডিওকে প্রথমে দেখতে চান সবাই। এ জন্য সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (এসইও) কাজ করে থাকেন ওয়েবসাইট মালিকরা। সার্চে সবার আগে ওয়েবসাইটটিকে তুলে আনতে সহায়তা করে এটি। আর সার্চে সবার আগে এলে ভিজিটরও বাড়ে। ঠিক তেমনিভাবে ইউটিউবে ভিডিওকে সবার আগে তুলে আনতেও এসইও করতে হয়, যেন সার্চ করলে প্রথমে আসে ভিডিওটি।

ইউটিউবে ভিডিওকে প্রথম সারিতে আনতে এসইও খুবই কাজের একটি মাধ্যম। এতে অনপেজ অপটিমাইজেশন ও অফপেজ অপটিমাইজেশন দুটি বিষয়ের গুরুত্ব রয়েছে। এসইওর অফপেজ অপটিমাইজেশনের প্রাথমিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।

মন্তব্য: ইউটিউবের ভিডিওটি কেমন হয়েছে, তা নির্ভর করে ভিউয়ারদের ওপর। ভিডিও দেখে অনেক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন। কেউ প্রশংসা করেন, কেউ বা কটু কথাও বলেন। সবাই প্রশংসা করবেন এমনটা ভাবা উচিত নয়। তাই ঠাণ্ডা মাথায় প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সুন্দর করে দিতে হবে, যেন পাঠক মন্তব্যটি বুঝতে পারেন এবং আবার চ্যানেলটিতে ভিডিও দেখতে আসেন।

নেগেটিভ মন্তব্যগুলোতে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে, যেন ভিউয়ারের ভুল ধারণাটি ভেঙে যায়। ভিডিওতে কোনো ভুল থাকলে সেটি স্বীকার করে নেওয়াই ভালো।

এতে ভিউয়ারদের আস্থা অর্জন করা যায়। মন্তব্য কিন্তু চ্যানেলের র‌্যাংক বা জনপ্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। তাই মন্তব্যকে লক্ষ্মী হিসেবেই ভাবতে হবে, হোক না তা কিছুটা কটু।

ব্যাকলিংক: কথায় আছে ‘প্রচারেই প্রসার’। আপনার ভিডিও যত প্রচার পাবে তত বেশি ভিউ পাওয়া যাবে। তাই যত বেশি সম্ভব ব্যাকলিংক তৈরি করতে হবে।

এ জন্য বিভিন্ন ব্লগে পোস্ট, গুগল প্লাস, টুইটার ও ফেসবুকে বেশি করে ভিডিওটির লিংক শেয়ার করতে হবে। তবে এলোমেলোভাবে শেয়ার না করে বিষয়ভিত্তিক এবং কৌশলে শেয়ার করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, কেউ যাতে লিংক শেয়ারকে স্প্যামিং না ভাবেন। এতে ইউটিউব চ্যানেলটির বিষয়ে খারাপ ধারণাও হতে পারে অনেকের। ফলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে টার্গেট অর্ডিয়েন্সকে লক্ষ্য করে অবশ্যই শেয়ার বাড়াতে হবে। তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে লিংকটি।

লাইক বা ডিজলাইক: ফেসবুকের মতো ইউটিউবেও লাইক অপশন রয়েছে। ভিডিওটি পছন্দ না হলে ডিজলাইক বাটনও রয়েছে। যেকোনো ব্যবহারকারী এ অপশন দুটি ব্যবহার করতে পারেন। ভিডিও র‌্যাংকিং অনেকাংশে লাইক ও ডিজলাইকের ওপর নির্ভর করে থাকে। যত বেশি লাইক পাওয়া যাবে সার্চ রেজাল্টে তত আগে ভিডিও দেখার সুযোগ তৈরি হবে।

কপিরাইট: ইউটিউব কর্তৃপক্ষ কপিরাইটের ব্যাপারে বেশি কঠোর। চ্যানেলে অন্য কারো ভিডিও ডাউনলোড করে সেটি আপলোড না করাই উচিত। কেননা কপিরাইট ভিডিও ইউটিউব প্রকাশ করতে অনুমতি দেয় না। অনেক সময় কপিরাইট জটিলতার কারণে চ্যানেলটি সাময়িকভাবে ব্লক করে দিতে পারে কর্তৃপক্ষ।

ভিউ বাড়ানোর অপকৌশল: অনেক ইউটিউব চ্যানেলের মালিকরা নিজের আইডি দিয়ে বারবার ভিডিওটি প্লে করে ভিউ বৃদ্ধি করে থাকেন। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। এত বোকা নয় ইউটিউব কর্তৃপক্ষ। এতে নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে সেই আইডিটি।

কি-ওয়ার্ড ব্যবহার: সার্চে ভালো ফল পেতে ভিডিও আপলোড করার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঠিক কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। কারণ সবাই সার্চে প্রথমে সাবজেক্ট লিখেই কোনো কিছু খুঁজে থাকেন। ভিউয়াররা কী শব্দ ব্যবহার করে সার্চে লিখবেন তার সঠিক অনুমান করে কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অপ্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড ব্যবহার না করাই ভালো।

কত দৈর্ঘ্যের ভিডিও তৈরি করা ভালো
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে ভিডিওটি থাকলে ভালো হয়। তবে শিক্ষামূলক বা লম্বা পর্যালোচনার জন্য সেটির দৈর্ঘ্য ২০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। এর চেয়ে বেশি সময় হলে ভিডিওর চিত্রনাট্য একাধিক ভাগে ভাগ করতে হবে। চিত্রনাট্যের কোন অংশে কোন ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল ব্যবহার হবে, সেটি নির্ধারণ করে নেওয়াও জরুরি। এভাবে দৃশ্য ধারণের কাজ গুছিয়ে নিলে ভিডিও নির্মাণের কষ্ট কমে যাবে বহুগুণ। একই দৃশ্য সম্ভব হলে একাধিক অ্যাঙ্গেল থেকে শুট করলে ভিডিওতে সহজে বৈচিত্র্য আনা যাবে। একই অ্যাঙ্গেলে পুরো ভিডিও ধারণ করলে সেটিতে দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখা বেশ কঠিন।

কোনো বিষয় অযথা টেনে বড় না করাই ভালো। এতে  দর্শকরা বিরক্ত হতে পারে। ভিডিওর দৈর্ঘ্য যদি বেশি হয়, তাতে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে সেটিকে ধারাবাহিক ভিডিও বানিয়ে ফেলা। তবে সেগুলো প্রকাশের সময় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। ধরুন, আপনি একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে একটি ধারাবাহিক করছেন। সেটি শেষ না করে মাঝখান থেকে অন্য আরেক বিষয়ের ভিডিও না দেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এটি করলে দর্শকরা বিভ্রান্ত হতে পারে।

ভিডিও সম্পাদনা
ইউটিউবের আপলোডের জন্য এমপি৪, কোডেক হবে এইচ২৬৪ এবং অডিওর জন্য এএসি বেটার। বিটরেট অন্তত ২০ এমবিপিএস, ফ্রেমরেট ৩০ হলে ভালো হয়। রেজল্যুশন অন্তত ১৯২০ বাই ১০৮০পি হওয়া উচিত। এ ছাড়া বিশেষ ফরম্যাট, যেমন—৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও, স্মার্টফোনের জন্য চওড়া ২১ : ৯ অনুপাতের ভিডিও এবং হাই ডাইনামিক রেঞ্জের ব্যবহারও করা যেতে পারে। তবে এ সময়ে ভিডিওর মান অন্তত ১০৮০পি না হলে দর্শক আকর্ষণ করাটা খুবই কঠিন।

প্রথম প্রকাশ: কালের কণ্ঠ, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯