কোন সংস্কৃতির কথা বলে হেফাজত?
প্রকাশ | ২৮ মে ২০১৭, ২৩:১৮
গ্রীক দেবীর আদলে সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্য, তাই হেফাজতের আপত্তি। তাদের ব্যখ্যা, বিদেশি সংস্কৃতি কেন আমরা গ্রহণ করবো? ভালো কথা। দ্বিমত নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের সংস্কৃতি বলতে হেফাজত কোন সংস্কৃতির কথা বলছেন? বাঙলা, বাংলাদেশি নাকি ইসলামি? সম্ভবত তারা ইসলামি সংস্কৃতির কথাই বলেছেন। কেননা, বাঙলা সংস্কৃতি মানে তাদের কাছে শতভাগ হিন্দুয়ানি। বাংলাদেশি সংস্কৃতিতেও তার ছাপ রয়েছে। সেক্ষেত্রে ইসলামি মতাদর্শের দল যেহেতু তাই তারা পাকিস্তানভিত্তিক সংস্কৃতির কথাই বোঝাতে চেয়েছিলেন।
আমরা যতটুকু জানি, হেফাজতিরা আমাদের জাতীয় সংগীত পছন্দ করেন না। জাতীয় সংগীত গাওয়া ইসলাম পরিপন্থি বলে তারা মনে করে। সব থেকে বড় কথা জাতীয় সংগীতের রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এখানেই তাদের আপত্তি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যারা জাতীয় সংগীত গাইতে চান না বা আপত্তি তুলবেন, তাদেরকে কী বাংলাদেশি হিসেবে গণ্য করা যায়? তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই তারাই কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে পিতা হিসেবে মানতে চান না। তাদের মতে জাতির পিতা ইব্রাহিম! কিন্তু মজা হচ্ছে এখানে যে, তারা যেই পাকিস্তানকে অনুসরণ করে, সেই পাকিস্তান কিন্তু জিন্নাহকে জাতির পিতা হিসেবে মানে। তাহলে বঙ্গবন্ধুকে মানতে এদের সমস্যাটা কোথায়?
তবে সে যা হোক, সুপ্রিম কোর্টের লেডি জাস্টিস বিদেশি সংস্কৃতি থেকে ধার করে আনা। কিন্তু লালন তো এদেশের মাটি ও শিকড়ের। তাহলে বিমান বন্দরের লালন ভাস্কর্য ভাঙতে আন্দোলন করেছিল কারা, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানরা? দেশের কোথাও কোনো ভাস্কর্য স্থাপন এবং সকল ভাস্কর্য অপসারণ দাবি কারা জানিয়েছিল, আমরা?
তারা দাবি করে, শিল্পকলার বিপক্ষে হেফাজতে ইসলাম নয়। তবে মূর্তি তারা মেনে নিবে না। আপনাদের মেনে নিতে কে বলেছে? কেউ কি বলেছে আসেন মূর্তি পূজা করেন? তাহলে মানা আর না মানা কিংবা কোথায় কি স্থাপন করা হবে না হবে সেটির জন্য কী আপনাদের জিজ্ঞেস করতে হবে? তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যারা পূজার জন্য মূর্তি তৈরি করেন, তারাও কিন্তু এক ধরণের শিল্পী। শিল্পবোধ থেকেই বিভিন্ন মূর্তি তৈরি করেন। এটাকেও শিল্পকলা বলা যায়। তাহলে ক্যামতে আপনারা শিল্পকলা বিরোধী নন বলে দাবি করেন!
সব শেষ কথা হচ্ছে বিদেশি সংস্কৃতি যদি মেনে নিতে না চান, তাহলে আপনারা কোন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চান, সর্বপ্রথম সেটি পরিষ্কার করুন। অস্বচ্ছতা রেখে কোনো দাবি উত্থাপন করা মানেই এখানে ভিন্ন মতলব লুকিয়ে থাকা। আর তারা হয় মতলববাজ। আপনারাও কী তাই? যদি আপনারা বিদেশি সংস্কৃতি মানতে না পারেন, তাহলে চলমান আইনও তো মানতে পারবেন না! অথবা আমাদের চিকিৎসা শাস্ত্রও মানার কথা নয়। এই দুটি শাস্ত্র কিন্তু বিদেশিদের কাছ থেকেই ধার করা। এ ক্ষেত্রে আপনাদের মতামত কী হতে পারে?
লেখক: ব্লগার, কবি ও সাংবাদিক