ওরা পশুদেরও অধম
প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৭, ২০:৩৬
অলিভিয়ার ফটো দেখাচ্ছে টেলিভিশনে। ১৫ বছর বয়সী ফুটফুটে মেয়েটি, কালো পোশাক পরে আছে, মুখে মিষ্টি হাসি- একইরকম হাসি যেটা আপনি আপনার কিশোরী কন্যার মুখেও দেখবেন। পৃথিবীর সব কিশোরীরাই কি এইভাবে হাসে? মিষ্টি কিন্তু সুখী- আপনার মনে হবে যেন বলছে যাই যাই- এরকম চঞ্চলতা। আমার দুইটি কিশোরী কন্যা আছে- ছোটটি অলিভিয়ার সমান বয়সী। অলিভিয়া কি বেঁচে আছে? অলিভিয়ার মা কাঁদছে টেলিভিশন রিপোর্টারের সাথে কথা বলতে গিয়ে।
ম্যানচেস্টারে অ্যারিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্ট দেখতে গিয়েছিল অলিভিয়া। সাথে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড এডাম। ওদের দুইজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কনসার্টে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলার পর দুইজনই নিখোঁজ। ওদের মোবাইল ফোন কাজ করছে না।
ম্যানচেস্টারে বিশাল বাঙালি কমিউনিটি আছে। আমার স্ত্রীর দিকের বেশ কয়েকজন আত্মীয় থাকেন ম্যানচেস্টারে। আমরা খোঁজ নিতে চেষ্টা করছি ওদের বাচ্চারা ঠিকঠাক আছে কিনা। বাচ্চাদের কথা বলছি, কারণ এই কনসার্টের বেশীরভাগ দর্শকই শিশু কিশোর। এই শিল্পীটির কোন গান আমি শুনিনি কখনো। এর নাম শুনেছি আমার মেয়েদের মুখে। দুই বোন ওদের গানের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে কথা বলার সময় ওর নাম এসেছে। ওদের কাছ থেকেই জেনেছি আরিয়ানা একজন নূতন শিল্পী- কম বয়সী, শিশু কিশোরদের খুব পছন্দ।
এই কনসার্টে যারা হামলা করেছে ওদের নিন্দা করে কিছু বলতে চাচ্ছিলাম। পারছি না। আমার চোখে ভাসছে শুধু কয়েক হাজার হাসিখুশি কিশোর কিশোরী, এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কি হয় বলেন! নানা জাতের নানান বর্ণের নানান পোশাকের হাজার হাজার কিশোর কিশোরী- লালন বলেছে না একই মায়ের পুত! আপনি যদি আমার জায়গায় থাকতেন, এইসব কিশোর কিশোরীর চোখে মুখে সব নিজের সন্তানদের চেহারা দেখতে পেতেন। কেমন দানব হলে সেখানে হামলা করতে পারে?
টেলিভিশনে অলিভিয়ার ছবি দেখাচ্ছিল। টেলিফোনে অলিভিয়ার মা কাঁদছেন। রাত আটটায়ও মেয়ের সাথে ফোনে কথা হয়েছে। মা কাঁদছেন। একটি ফুটফুটে মিষ্টি কিশোরী অলিভিয়ার মা। আমার চোখ ভিজে আসে। দৃষ্টি আর শ্রবণশক্তি ঘোলাটে হয়ে আসে। কে কথা বলছে টেলিভিশনে? জেনিফা নয়তো? চিৎকার করে আমাকে ধমকাচ্ছে, তুমি মেয়েটাকে একা যেতে দিলে কেন?
ঈশ্বর বলে নাকি একজন আছেন! তিনি নাকি সবচেয়ে ক্ষমতাবান! তিনি নাকি দয়ার সাগর! শোনেন, আমি যদি ঈশ্বর হতাম অলিভিয়া নামের এই ইংরেজ মেয়েটির কোন ক্ষতি হতে দিতাম না। পৃথিবীর কাউকে আমি সেখানে বোমা ফাটাতে দিতাম না। আপনি কার নিন্দা করবেন? ধুর। ভালো লাগে না। এইসব টেররিস্টদের পক্ষে আবার কথা বলার মানুষও আছে!
অলিভিয়ার ছবি দেখাচ্ছে। আরও কতো কিশোর কিশোরী। সকলের মুখেই সেই দুষ্টু কিন্তু মিষ্টি আর রহস্যময় সেই হাসিটি, যেটি আপনি আপনার কিশোরী কন্যার মুখে প্রতিদিন দেখেন। এই হাসিটি যারা মুছে দিতে চায়, ওরা পশুদেরও অধম। তস্কর কাপুরুষ। যে মন্ত্র ওদেরকে এইসরকম ঘৃণিত কাজ করতে দীক্ষা দেয়, ধিক সেই মন্ত্র।
লেখক: আইনজীবী