রমণীর দোষ-গুণ!
প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০১৭, ০০:৫১
আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে- "সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে"। বিষয়টিতে ব্যক্তিগতভাবে আপত্তি আছে আমার। এবং আমি নিশ্চিত একটু ভাল করে ভাবলে অনেকেরই আপত্তি থাকবে। এই কথাটার মানে দাঁড়ায় একটি সংসারের সার্বিক মঙ্গল অমঙ্গলের জন্য একজন নারীই দায়বদ্ধ। পুরুষের কোনো দায় নেই, মাথাও নেই, ব্যথাও নেই!
যদি কখনও একটি সংসারে মা বা স্ত্রী একটু হাল ছেড়ে দেন তাহলে সংসার ভেসে যায় যায় অবস্থা এবং হয়ও সেটাই। কেন? যেখানে একজন নারী কর্মজীবী থাকেন, সেখানে কর্মজীবী একজন পুরুষের চাইতে অনেক গুণ বেশি পরিশ্রম তিনি করেন। শুধু কর্মজীবী বা বলছি কেন, একজন গৃহিণীর পরিশ্রম একজন পুরুষের চাইতে বেশি বৈকি।
আমাদের তথাকথিত উদার সমাজে এসব চোখে পড়ে না। বাইরে বড় বড় বুলি আওড়ানো মানুষগুলো ঘরে নিজেকে মহামান্য মহারাজ ভেবে সংসারের সকল ভুল ত্রুটির দায় মা বা স্ত্রীর উপর দিব্যি চাপিয়ে বসেন।
একটি পরিবারে সদস্য থাকেন অনেকেই আর ছায়া হয়ে সবার সকল দায়বদ্ধতা নিজের কাঁধে নিয়ে নেন মা বা স্ত্রী। তবুও দিনশেষে কারও ভুলের দায় যেন তারই। ছেলেমেয়ে পরীক্ষায় খারাপ করলে বা একটু দুষ্ট হলে "মা হয়েছ কি করতে, শিক্ষা দাওনি" আরও অনেক বেদবাক্য শুনতে হয়। বাবা তো সারাদিন অফিস করে তাই তার সময় কোথায় আর অন্যদের কথা বলাই বৃথা।
আমরা সবাই জানি মা মা-ই হয়। তার সাথে অন্য কোনো সম্পর্কের তুলনা হয়না কখনও। কিন্তু হাজার ভালোর পরেও তার কোনো সামান্য সীমাবদ্ধতা আমরা কেন মানতে পারি না? তার একটা ভুল সবার চোখে পড়ে অন্ধকার আকাশে একটা নক্ষত্রের মত, আর হাজার কোটি তারার মত জ্বলজ্বল করা শত শত গুণগুলো হারিয়ে যায় তার আড়ালে।
শুধু একটি সংসার নয়, গোটা সমাজ থেকে সমগ্র দেশের সুখ শান্তি, উন্নতি নির্ভর করে নারী পুরুষ প্রত্যেকের প্রতিটা ভাল অবদানের জন্য। আর স্বীকৃতি, সেটা সবার প্রাপ্য। নির্দিষ্ট কারও জন্য নয়। একজনের উপর দায় চাপিয়ে নিজের দায় এড়ানো যায় না। আর সাময়িকভাবে এড়ানো গেলেও মনের দায় যে বড় দায়।
সবাই সমান এটা আমি বলছি না, কিন্তু ব্যতিক্রম তো আড়ালেই থেকে যায় তাই না? এই ব্যতিক্রম এর সংখ্যা বেড়ে গিয়ে যেদিন অধিকাংশের সংখ্যা কমে যাবে আর এরা ব্যতিক্রম হয়ে যাবে সেদিন আসবে প্রত্যাশিত সুন্দর সকাল।
লেখক: শিক্ষানবিশ আইনজীবী