নারী আন্দোলনের একাল ও সেকাল
প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:১৬ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:২৫
‘নারী আন্দোলন’ কথাটি অনেক বড় অর্থ ধারণ করে। সারা পৃথিবীতেই নারী আন্দোলনের বিষয়ে অনেক কাজ হয়েছে। বাংলাদেশেও নারী আন্দোলনের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। বাংলার সাহিত্যে-শিল্পে-সংস্কৃতিতে নারীর দ্রোহ-আন্দোলন আর সাহসিকতার মূর্ত প্রকাশ ঘটেছে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও নারীর ভূমিকা অতুলনীয়। সারা বিশ্বে নারী আন্দোলনের যে ধারা, তার স্রোত সে-ই ব্রিটিশ আমল থেকেই এই অঞ্চলের নারীদের মাঝে সঞ্চারিত হয়। আঠারো থেকে বিশ শতক পর্যন্ত বাঙালি নারীর অধিকার সচেতনতা ও আন্দোলনের ইতিহাস এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক উত্থান-পতন ও ভাঙা-গড়ার ইতিহাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। জনসংখ্যার অর্ধেক নারী সমাজের জীবন সেসময় কীভাবে আবর্তিত হয়েছে, বিকশিত হয়েছে; তা সে সময়ের রাজনৈতিক সামাজিক ইতিহাসের পাঠ থেকে জানা যায়। তবে নারী আন্দোলনের কোনো সুনির্দিষ্ট দিন তারিখ বা সন উল্লেখ সম্ভব নয় বলেই মনে হয়েছে। এটি সামাজিক বিকাশ পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং তার কোনো নির্দিষ্ট ধরন নেই।
আগেই বলেছি, সারা পৃথিবীর নারী আন্দোলনের বাতাস এ অঞ্চলেও প্রবাহিত হয়েছে। তাই নারী আন্দোলনের একটি বৈশ্বিক সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়েছিল প্রাথমিক পর্যায়ে। পৃথিবীর নানা স্থানের মতোই নারী আন্দোলনের পিছনে প্রাথমিক যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কাজ করেছে, তা হল দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাক্সক্ষা। আবার নারী অর্থনৈতিক স্বাধীনতার বিষয়টিও সারা পৃথিবীর মতোই আলোচিত হয়েছে বাংলায়। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদেও তার উল্লেখ আমরা পাই। সেখানে যে শ্রেণির নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টি এসেছে,তা অন্ত্যজ। ডোম্বী নারী বা শবরী বালিকার পরিচয় মেলে সেখানে। তাঁরা হাটে চাঙাড়ি বিক্রি করে। মধ্যযুগের লৌকিক জীবনে শ্রীকৃষ্ণ ও রাধা বিষয়ক যে কাহিনী প্রচলিত আছে, সেখানেও দেখা যায় রাধা অন্য গোপনারীদের সঙ্গে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত অন্যান্য সামগ্রি বিক্রির জন্যে হাটে যেত। মঙ্গলকাব্যে খেয়া পারাপারের কাজে নিয়োজিত ছিল অন্ত্যজ নারী শ্রেণি। মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গলকাব্যে ব্যাধনারী ফুল্লরার হাটে কিংবা বাড়ি বাড়ি ঘুরে মাংস বিক্রির কাহিনি আমরা পাই। মৈমনসিংহ গীতিকার ‘দেওয়ান মদিনায়’ আছে কৃষকবধূ মদিনা স্বামীর কৃষিকাজে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট। এভাবে প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য, লোকগাঁথা, পুঁথি সাহিত্যে নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টি তীব্রভাবে আলোচিত হয়। কিন্তু সমাজব্যবস্থার সার্বিক কাঠামোর বাইরে নারী নয়। এবং অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টিও শ্রেণিদ্বন্দ্ব থেকে আলাদা কিছু নয়। সুতরাং সমাজ কাঠামোর সার্বিক বদলে নারী নিজেকে নিয়োজিত করে আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়েই। নারীর প্রতি সমাজের যে দৃষ্টিভঙ্গি তার একটি রাজনৈতিক ব্যাখ্যা আছে এবং সেটাই মুখ্য। আমরা বলতে পারি, যেদিন থেকে নারী তার মানবসত্তাকে আবিষ্কার করেছে, মানুষ হিসেবে নিজের অর্জন ও ত্যাগের খতিয়ান নিজেই লিখতে শুরু করেছে, সেদিন থেকে নারী আন্দোলন আসলে মানবসমাজের আন্দোলনের সঙ্গে মিলে গেছে। তখন মানুষের জন্য সংগ্রাম আর দ্রোহের মিছিলে নারী সহযোগী শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। তাই রাজশাহীর রানী ভবানী, ঝাসীর রানী লক্ষ্মীবাঈ বা চট্টগ্রামের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রমুখের কথা যখন আমরা বলি, তখন মূলত মানুষের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়া জীবন উৎসর্গোকারী একজন মানুষের কথাই বলি। তবে সমাজ যেহেতু এখনও শ্রেণি আর বৈষম্যের চোখে সবকিছু দেখে, তাই নারীর অবদানকে সহযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও নানা টালবাহানা দেখেছি আমরা। ফলে নারী আন্দোলনের একটি কালে নারীর স্বীকৃতি আদায়ের ক্রমধারাও আমরা লক্ষ্য করেছি।
পাকিস্তানের তেইশ বছরের শাসন বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাংলার নারীসমাজ সোচ্চার প্রতিবাদ জারি রেখেছিলেন নিষ্ঠা আর সততার সঙ্গে। বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পুরো ধারাতেই বাংলার নারীদের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা আন্দোলন যে আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় নির্ধারণেরও আন্দোলন, এই সত্য তৎকালীন নারীসমাজ অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। ফলে কেবল ঢাকা শহরেই নয়, ভাষা আন্দোলনে সারা বাংলায় নারীদের অংশগ্রহণ ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকার ঘোষিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্তে বাংলার নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং পুলিশের লাঠিতে অনেকে আহত হন। এদের মধ্যে রওশন আরা বাচ্চু, সুফিয়া আহমদ, হালিমা খাতুন, সারা তৈফুর, শামসুন্নাহার ও ড.শরীফা খাতুন প্রমুখ অন্যতম।
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিমদের সংরক্ষিত ৯টি নারী আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নূরজাহান মুরশিদ, সেলিনা বানু, শামসুন্ নাহার মাহমুদ, বদরুন নেসা আহম্মেদ, দৌলতুন নেসা খাতুন, রাজিয়া বানু, তফতুন্নেসা, মেহেরুন নেসা জয়ী হন। এই জয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল তৎকালীন রাজনৈতিক ইতিহাসে। এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন একটি উদারনৈতিক ভেদ-বৈষম্যহীন সমাজে স্বাধীনতার আকাংখা মূর্ত হয়, তেমনি বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির রাজনৈতিক সচেতনতার বিকাশ ঘটে।
১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনেও নারীর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। শরীফ শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন ছিলো চরমভাবে গণ-বিরোধী কিন্তু তার দুই বছর বাদে দেয়া হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন ছিলো অপেক্ষাকৃত উন্নত। কিন্তু কোনোটিতেই নারীশিক্ষার ব্যাপারে মৌলিক অগ্রগতির নির্দেশনা ছিলো না। এমনকি ১৯৬৯ সালে ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকার যে নূর খান শিক্ষা কমিশন করেছিলো, সেখানেও নারীশিক্ষার বিষয়টি ছিলো উপেক্ষিত। এই নারীবিরোধী শিক্ষাব্যবস্থার প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে নারীদের অবস্থান ছিল অত্যন্ত দৃঢ়। শরীফ শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে পরিচালিত ছাত্র আন্দোলনে ইডেন কলেজছাত্রী সংসদের তৎকালীন ভিপি ও ছাত্র ইউনিয়নের শীর্ষ নেত্রী মতিয়া চৌধুরী এবং আরেক নেত্রী নাজমা বেগম শক্ত অবস্থান নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের ৭টি এবং জাতীয় পরিষদের ১০টি নারী আসনে জয় লাভ করে তৎকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এ বিজয় আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের পথে এক অনন্য মাইলফলক। কিন্তু বিজয় অর্জনের পরও যখন পাকিস্তানের সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে, তখন সাতই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সূত্রেই শুরু হয় বাঙালির ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার প্রক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে নারীদের অস্ত্রের ট্রেনিংও শুরু হয় তখন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি নারীর যে অবদান, তা লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। যদিও ইতিহাস কেবল নারীর নির্যাতিত হবার বিষয়টিই তুলে ধরেছে এতো বছর, অথচ রণাঙ্গনে-ঘরে-বাইরে নানা গুরুত্বপূর্ণ ও অসীম সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন নারীরা। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মশাল জ্বেলে যেমন তাঁরা গেয়েছেন মুক্তির গান, তেমনই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সৃষ্টি করেছেন প্রেরণার আহ্বান। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে যে মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছিল, তা ইতিহাসের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা। প্রায় সাড়ে চার লক্ষ নারী নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হবার পর আমরা একটি সামাজিক দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হই। উম্মোচিত হয় আমাদের স্বাধীন দেশের শ্রেণি চরিত্রের কদর্য রূপ। যে নারী নির্মম হিংস্র নির্যাতন সহ্য করেছেন তাঁর মাতৃভূমির জন্যে, সে মাতৃভূমি স্বাধীনতা পেয়ে তাকেই করে দিলো অচ্ছুৎ। এই সামাজিক বিপর্যয় আরও তীব্র হয় যখন একের পর এক যুদ্ধশিশুর জন্ম হতে থাকে। এই ত্রিশঙ্কু দশা থেকে উত্তরণের পথেও তখন আমরা একজন নীলিমা ইব্রাহীমকে পাই। সে সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো একটি সঙ্কট মোকাবিলার ক্ষেত্রেও আমরা নারীর ভূমিকাকে অনন্য রূপে প্রত্যক্ষ করি।
স্বাধীনতার পর নারী আন্দোলনের একটি ধারাবাহিক চিত্র আমরা পাই এবং তা নানামুখী। কেবল রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামেই নয়; এ লড়াই জাতিগত বিভেদ ঘুচানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তাছাড়া শ্রেণি বৈষম্যের পারদ স্বাধীনতার পর কেবল বাড়তেই থাকে। বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরে একদিকে যেমন আমরা রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যেতে থাকি; তেমনি পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। বাড়তে থাকে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর রাজনৈতিক আস্ফালন। ফলে ধর্ম রাজনীতির ঘাড়ে চেপে রাজনীতিকে চালিত করে বেলাইনে। রাষ্ট্রের রাজনীতি যখন লাগামহীন পাগলা ঘোড়া হয়, তখন রাষ্ট্র হয়ে উঠে নৈরাজ্যের ভয়ানক উদাহরণ। সময়ের সাথে সাথে নারীশিক্ষার হার বাড়তে থাকে, নারীদের অর্থনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হতে থাকে ঠিকই, কিন্তু নারীর ওপর নেমে আসে নানাবিধ নিপীড়ন। ফলে নারীর আন্দোলন কেবল আর স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থাকে না, এটি রূপ নেয় বহুধা বিভক্ত শ্রেণি-সংগ্রামের ধারায়। নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম যেমন জ্বলন্ত ভিসুভিয়াস হয়ে উঠে, নারীর জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি যেমন প্রখর হয়ে উঠে, তেমনি রাষ্ট্রকে মৌলবাদ আর উর্দিবাদ থেকে বাঁচাতে নারীদের পথে নামতে হয় সোচ্চার সংগ্রামে। ছাত্র আন্দোলনের একটি ধারাবাহিকতা বজায় থাকে দেশে তথাকথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত–ছাত্র সংসদের নির্বাচনগুলোর মাধ্যমে। আমাদের শ্রমিক আন্দোলনে নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ স্বাধীনতা-পরবর্তী নারী আন্দোলনের ধারায় গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র সংগঠনগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ একটি ইতিবাচক পর্যায়ে রয়েছে, যদিও এখনও ছাত্র আন্দোলনের মূল স্রোতে আমরা পুরুষতান্ত্রিকতার আগ্রাসী রূপটিই দেখতে পাই। নারীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। সমাজে একটি মানসিকতার তৈরি হয়েছে যে, নিপীড়ন বন্ধ করতে পুরুষকেই সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকাটি পালন করতে হবে। অন্যদিকে, নারী আন্দোলনের ক্ষেত্রে আমরা একটি দূরবর্তী মিথষ্ক্রিয়াও লক্ষ্য করি। ঘরের মায়েদের এখন বলা হচ্ছে এমন ভাবে ছেলে সন্তানটিকে বড় করতে যেন তার মননে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মানবোধ তৈরি হয়।
তবে এতো কিছুর মধ্যেও আমাদের রাজনৈতিক ধারায় গলদ থেকে যাওয়ায় নারী আন্দোলন বা অন্য যে কোনো গণ-সংগঠনের আন্দোলনের ফসল আমরা ঘরে তুলতে পারছি না। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি কিছু লেজুড় তৈরি করেছে। সেগুলো আগাছার মতো এই আন্দোলনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলছে বছরের পর বছর। সমাজে বিভেদ আর বৈষম্য তৈরি হয়েছে কালো টাকা ভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতির কারণে। ফলে জাতিগত বা সাম্প্রদায়িক প্রশ্নে আমরা বিভেদের দেয়ালের এপাশে ওপাশে বাস করছি। কল্পনা চাকমা আর আমি যে একই মানুষ– আজকের তনু-মিতু বা রিশা হত্যাকাণ্ড যে কল্পনা চাকমার অপহরণের এতোদিনের বিচারহীনতারই একটি কদর্য রূপ; এটা বোঝার মতো রাজনীতি কিংবা রাজনীতিক আমাদের নেই। যে রাজনীতি চাকমা-মারমা-বাঙালি-সাঁওতাল-হিন্দু-মুসলমান বিভেদ তৈরি করে, সে রাজনীতির কীটেরাই ধর্মের নামে নারীকে ঘরে বন্দি করে রাখতে চায় এবং নারীর বিরুদ্ধে মধ্যযুগীয় ফতোয়া দেয়। রাজনীতির এ সমীকরণ বেশ নাম করেছে সাম্প্রতিক সময়ে। প্রগতিশীলতার মোড়কে যখন মৌলবাদকে তোষণ করছে রাষ্ট্র, তখন আসলে দেখার সময় এসেছে আমাদের নারী আন্দোলন কোন পরিস্থিতিতে আছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি এবং তা আদায়ে শহীদ জননীর আন্দোলন থেকে শুরু করে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন– পুরো বিষয়টিতে নারীর অংশগ্রহণ সম্ভবত স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো নারী আন্দোলনের নিদর্শন। নারীদের কণ্ঠের স্লোগানে এখানে দেশপ্রেম আর ন্যায্য বিচারের দাবি উত্থাপিত হয়েছে। একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে মায়ের মমতা আর রাজপথের স্লোগানের করতলে। এই প্রজন্ম ‘জয় বাংলা, জয় জনতা’র উত্তরাধিকার।
আজকের নারী আন্দোলনের সবচেয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তনটি এসেছে অনলাইনের কারণে। নারী সমাজের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বা রাষ্ট্রের সমাজের নানা অসংগতিগুলো আজ ব্লগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র উচ্চারিত-উত্থাপিত হচ্ছে। ফলে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। এই জনসম্পৃক্ততার নতুন তত্ত্ব নিশ্চিতভাবেই আমাদের ভবিষ্যৎকে নির্মাণ করবে আমাদের আদর্শের আলোকেই।
লেখক: সহ-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী
প্রথম প্রকাশ: সাপ্তাহিক একতা, বর্ষ ৪৬ | সংখ্যা ২৭