ভূত সমগ্র–সাংবাদিক কিংবা রাষ্ট্রজনতার রাজনৈতিক হত্যা
প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:০২ | আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:৩৫
বাংলাদেশে যেকোনো হত্যাকাণ্ড আজকাল মামুলি ব্যাপার। সেটা সাংবাদিক হোক কিংবা আমজনতা হলে তো কথাই নেই; সেটা আরো মামুলি। এই মামুলি কিসিমের হত্যা কখনোবা মানববন্ধনে রূপ নিয়ে মুখরিত হয়ে ওঠে। সেটি বড়জোর দু-তিনটি কার্যদিবস কিংবা আরো কয়েকদিন। তারপর নানা রংবেরঙের উপলক্ষে হারিয়ে যায় এসব পত্রিকার পাতা কিংবা ভোগবাদী অসমাজ চিত্র থেকে।
বছরের পর বছর এই মামুলি হত্যাকাণ্ড আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় দূষিত আইনি প্রক্রিয়ার সহজাত উপস্থিতিকে এবং একই সাথে বারবার মনে করিয়ে দেয় আইনি শাসনের মূল খদ্দের মূলত এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার হোমড়া-চোমড়ারা। এই হোমড়া-চোমড়াদের জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় বিশেষ বিশেষ অফারের ছাড় রয়েছে; রয়েছে নোংরা পাপের নিষ্কৃতি।
বিগত কয়েক বছর যাবত আমাদের চিন্তার পরতে পরতে উগ্রতার যাপন বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ, বিবেক কিংবা আদর্শ শব্দমালা বেশ সেকেলে এখন। বিক্ষোভ-বিদ্রোহ যেন এক একটি গণবিজ্ঞাপন মহড়া।
এক সময় ভূমিদস্যুরা লাঠিয়াল দিয়ে ভূমি দখল করতো; এখন অবৈধ সম্পদ পাহাড়ায় সাংবাদিক পোষে। এই ধারণাটিও ঈষৎ পুরনো বটে, কিন্তু এর ফলাফল সুদীর্ঘ অসভ্যতার। সাংবাদিকতা যেভাবে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থ ভক্তিতে নিয়োজিত হচ্ছে ঠিক ততটাই এর আদর্শগত অবস্থান মিশে যাচ্ছে মামুলি রক্ত স্রোতে। সাংবাদিকতার ক্রমশ দিক পরিবর্তন আমাদের একদিন অবশ্যই পরিচয় করিয়ে দেবে শাসকি বিজ্ঞাপনী সংস্থার সাথে। যে সংস্থা শুধু উন্নয়নের জোয়ার-ভাটা ছাড়া আর কিছুই বুঝবে না।
এই মেরুদণ্ডহীন অবস্থা থেকে উত্তরণের আদতে কি কোন উপায় আছে? মনে হয়ে এই উত্তরণ প্রক্রিয়া বেশ জটিল। যদিও ইতিবাচক প্রণোদনা থেকে আমরা বিশ্বাস করতে চাই ভালোর চেয়ে খারাপ কম; সুতরাং কোন চিন্তা নাই। হতে পারে খারাপের চেয়ে ভালো বেশি; কিন্তু সেই ভালোর এক বড় অংশই নির্বাক সম্প্রদায়। যাদের গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দিলেও নিশ্চিন্তে থাকতে চায়। কোন বাক বিতণ্ডা ছাড়াই। অথবা ফরমায়েশি ভক্তিতে ধ্যানী থাকতে চায়। এই দুটো অসুস্থ অবস্থারও কিছুটা দৃশ্যত আদর্শিক (আদিরসাত্মক) প্রকাশ আছে যা স্যাটেলাইট বাচালানুষ্ঠানে কিংবা সামাজিক মাধ্যমে লাইকের প্রলয়ে বহুল প্রচারিত।
সোজা হিসেব হলো সিরাজগঞ্জের আপাতত ক্ষমতাধর মেয়র যদি বাস্তবে দুর্বল হোন তাহলে গোটা জাতি একটি আইনি বিচারকার্যের প্রয়োগ দেখবে। অন্যথায় মেয়রের শর্টগানের গুলিতে সাংবাদিক শিমুল হত্যাও গুটি দিন কয়েকের মানববন্ধনে কিংবা বিচ্ছিন্ন ঘটনার দাপটে হারিয়ে ক্ষমতা দক্ষতার ক্লোজড ফাইল হয়ে সামিল হবে সাগর-রুনি কিংবা তনু হত্যাসহ আরো মামুলি জানা অজানা বিচারহীন হত্যা বলয়ে। এইতো।
লেখক: ভিজ্যুয়াল জার্নালিস্ট, বিবিসি